কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির বিষয় নিয়ে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়াহ বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর চিঠি প্রধনামন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
৫ শর্তে কওমি সনদের স্বীকৃতি চেয়ে আল্লামা শফী চিঠিতে লিখেছেন, ‘ভারতের দেওবন্দের আট মূলনীতি শতভাগ অক্ষুণ্ন রেখে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত কওমি সনদের সরকারি মান চাই।
দেওবন্দের বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন করে সরকারি স্বীকৃতি কাম্য নয়।’ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আহমদ শফীর প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে চিঠি হস্তান্তর করেন। আল্লামা শফীর প্রেসসচিব মাওলানা মুনির আহমদ এ তথ্য জানিয়েছেন।
আল্লাম শফী চিঠিতে লিখেছেন, ‘ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের শিক্ষা সনদের মান, মর্যাদা ও মূল্যায়ন ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলেই ছিল। ভারতে কোনও রকম সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও দাফতরিক সম্পর্ক ছাড়াই তা কার্যকর আছে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশেও কয়েক বছর পর্যন্ত এই ধারা চালু ছিল। এই মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষা কারিকুলাম ও শিক্ষা ব্যবস্থা দেওবন্দের আদলেই বিন্যস্ত ও নিয়ন্ত্রিত। ফলে দেওবন্দের আট মূলনীতি শতভাগ অক্ষুণ্ন সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত কওমি সনদের সরকারি মান চাই।’
দেওবন্দের ৮টি মূলনীতি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লামা শফী লিখেছেন, ‘‘৭ নম্বর মূলনীতি হলো ‘এর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় সরকারের অংশীদারিত্ব ক্ষতিকর। সুতরাং সরকারের কোনও প্রকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে আমাদের শিক্ষা সনদের মান দিলে, তা হবে এই মূলনীতির সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। ধৈর্য্য, সহনশীলতা, দেশপ্রেম, বাবা-মায়ের আনুগত্য ও গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, পারিবারিক ও সামজিক মূল্যবোধের প্রশিক্ষণ, মানবসেবা, সুশৃঙ্খল জাতি গঠনে আদর্শিক ও নৈতিক শিক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে তোলাই হচ্ছে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাধারার মূল সৌন্দর্য। শিক্ষা-দীক্ষার এক অপূর্ব সমন্বয় পরিলক্ষিত হয় কওমি শিক্ষাব্যবস্থায়। সে কারণে আমরা চাই, আমাদের এসব স্বকীয়তা যেন কোনও ধরনের সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে বিন্দুমাত্রও নষ্ট না হয়।’
দেশের কোটি কোটি মুসলমান অভিভাবক তাদের সন্তানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও নৈতিকতা বজায় রাখার বিষয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে আল্লাম শফী লিখেছেন, ‘আমরা এ বিষয়টিতে আপনার ব্যক্তিগত তদারকি ও হস্তক্ষেপ চাই।’ চিঠিতে কওমি সনদের স্বীকৃতির লক্ষ্যে ৫টি শর্ত জুড়ে দেন আল্লামা শফী। শর্তগুলো হলো:
১। ভারতে দারুল উলূম দেওবন্দ যেভাবে স্বকীয়তা নিয়ে স্বাধীনভাবে চলছে, বাংলদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোও সেভাবে চলবে।
২। বর্তমান নিজস্ব ধারায় কওমি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠা, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা-দীক্ষা ও সিলেবাস ইত্যাদি সম্পূর্ণ বহাল রেখে কওমি সনদের সরকারি মান বা মর্যাদা দেওয়া যেতে পারে। মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, স্বাধীন শিক্ষাক্রম পরিচালনা ও স্বকীয়তা বিনষ্ট করে সনদের সরকারি মর্যাদা কোনও অবস্থাতেই কাম্য নয়।
৩ । প্রস্তাবিত কওমি মাদ্রাসা শিক্ষানীতি-২০১২ এবং এর আলোকে তৈরি ‘কওমি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৩’ বাতিল করতে হবে। কারণ এ জাতীয় কর্তৃপক্ষ বা আইন কওমি মাদ্রাসার ঐতিহ্যবাহীপন্থী।
৪। কওমি মাদ্রাসাগুলো সরকারি অনুদান, এমপিওভুক্তি ও নিবন্ধনসহ নিয়ন্ত্রণমূলক যে কোনও রকম পদক্ষেপ থেকে বিরত রাখতে হবে।
৫। কওমি আলেমদের সংখ্যাগরিষ্ঠের ঐকমত্য ছাড়া কওমি সনদসহ কওমি মাদ্রাসার ব্যাপারে যেকোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
বেফাকের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আশরাফ আলী’র নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মুফতি নুরুল আমিন, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আনাস মাদানী, মাওলানা মুনির আহমদ ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম।
প্রতিনিধি দলের সদস্য মাওলানা মুনির আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহমদ শফীর চিঠি হস্তান্তর করেছি, পড়ে শুনিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন।’ তিনি বলেন, `স্বীকৃতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে আহমদ শফীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন।’ (বাংলা ট্রিবিউন)
করেসপন্ডেন্ট : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১:০০ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ