চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার নয়াকান্দি শিকিরচর গ্রামের ওয়াসিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বালু মিজান (৪৫) ও আরিফ হোসেন (৩৫)কে (রোববার রাতে) তথ্য প্রযুক্তি মোবাইল ট্যাকিং এর সাহায্যে ঢাকার উত্তরা পূর্ব থানা, ডিএমপি, ঢাকার আব্দুল্লাপুর বাস এলাকা থেকে আটক করেছে মতলব উত্তর থানা পুলিশ।
মতলব উত্তর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাসির উদ্দিন মৃধা ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহজাহান কামালের নির্দেশে মতলব উত্তর থানার চৌকস অফিসার মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আফসার ও এসআই হাবীবসহ থানা পুলিশ ঢাকা’সহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ৪৮ ঘন্টা অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে আটক দুই আসামী বালু মিজান (৪৫) ও আরিফ হোসেন (৩৫)কে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে চাঁদপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিঙ্গাসাবাদে তারা এ হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই আফসার জানান। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন,মতলব উত্তর থানায় গত ৩০ জুন রাতে মোবাইলে ডেকে এনে ওয়াশিম নামে যুবককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। জমি জমা বিরোধে ওয়াসিমকে হত্যা করে ওয়াপদা খালে ফেলে লাশ গুমের চেষ্টা করে।পরদিন সকালে বাড়ির পাশের খাল থেকে রক্তমাখা লাশ উদ্ধার করা হয়। এটি ছিলো একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
হত্যাকাণ্ডের পরের দিন আটক বালু মিজান ও আটক তার ভাই আরিফ, আজাদ ও করিম এই চারজনকে আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়। ঘটনার পর থেকে আসামীরা পলাতক ছিলো। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত ছিলো। ঘটনার পর থেকেই আসামী পলাতক ছিল। আমি’সহ থানার বেশির ভাগ অফিসার করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় আসামীদের ধরতে বিলম্ব হয়।
আসামীরা ঘটনার পর থেকে তারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করে। মোবাইল ট্যাকিং এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা অভিযান পরিচালনা করে অবশেষে হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। বাকী দুই আসামীদের গ্রেফতারের জন্য টিম বাহিরে এখনও কাজ করছে। খুব শীঘ্রই বাকী আসামীদেরকে আমরা ধরতে সক্ষম হবো । তিনি বলেন,অপরাধ করলে কেউ পার পায়না। ধরা তাকে পরতেই হবে। আমরা চেষ্টা করেছি আসামীদের আটক করার। অনেক চেষ্টার পর সক্ষম হয়েছি।
প্রাথমিকভাবে তারা এ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আমরা চাই এ হত্যাকান্ডের সর্বোচ্চ বিচার হউক।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আফসার জানান, ওসি নাসির উদ্দিন মৃধার নির্দেশনায় দীর্ঘ ৪৮ ঘন্টা বিরামহীন অভিযানের পর ওয়াশিম হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামীকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ হত্যাকান্ডের পর থেকেই তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত ছিলো। আসামীরা পূর্ব সত্রæতার জের ধরে এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে।
উল্লেখ্য গত ৩০ জুন রাতে চাঁদপুরের মতলব উত্তরের নয়াকান্দি শিকিরচর গ্রামে আপন চাচাতো ভাই ওয়াসিমকে পূর্ব বিরোধের জের ধরিয়া আটক দুই আসামী বালু রমিজান বেপারী,আরিফ বেপারী ও তারঅপর দুই ভাই মিলে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। পরদিন সকালে ওয়াসিমের লাশ উদ্ধার করে মতলব উত্তর থানা পুলিশ। ওই দিনই ওয়াসিমের মা বাদী হয়ে মিজানুর রহমান ওরফে বালু মিজানকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিল।
নিহতের স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তার জানান, রাতে ওয়াসিম ঘরেই ছিল। রাত আনুমানিক ১২টার পর তার ফোনে কল আসে, সে (ওয়াসিম) ঘর থেকে বের হওয়ার সময় জানতে চাইলে বলে মিজান ভাই আমাকে ফোন দিছেন কথা শোনার জন্য। এর কিছুক্ষণ পর ওয়াসিমের নম্বরে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পাই। সারা রাতেও তিনি ঘরে ফেরেননি। সকালে আজাদ এসে ওয়াসিমের খোঁজ করে।
এদিকে দুই আসামীকে আটকের খবর এলাকা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ ধন্যবাদ জানান সামািজক যোগাযোগ মাধ্যমে এলাকা সচেতন মহল।
বালু মিজান আটক হওয়ার স্বস্তি প্রকাশ করে নিহত ওয়াসিমের বোন জামাই স্বাধীন মিয়া বলেন, একে একে সকল আসামী আটক হবে। মূল আসামী আটক করতে পারায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রতিবেদক: কামাল হোসেন খান,১৮ আগস্ট ২০২০