আন্তর্জাতিক

ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে আফগান যুদ্ধের অবসান

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের আফগান যুদ্ধের অবসানে জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবানের সঙ্গে অবশেষে ঐতিহাসিক এক শান্তি চুক্তিতে পৌঁছেছে ওয়াশিংটন। শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তালেবান ও মার্কিন শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

উল্লেখ্য ১৯৮৯ সালে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মুজাহেদিনেরা পিডিপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ জোরদার করে। অবশেষে ১৯৯২ সালে সরকারের পতন ঘটে, কিন্তু মুজাহেদিনদের ভিতরের দলীয় কোন্দলের কারণে গৃহযুদ্ধ শেষ হয়নি। একদল মুজাহেদিন তালেবান নামের একটি ইসলামী মৌলবাদী দল গঠন করে এবং ১৯৯৬ সালে কাবুল দখল করে। তাদের শাসনব্যবস্থাকে নৃশংস ও বর্বর শাসনব্যবস্থা হিসেবে সমালোচনা করা হয়। ২০০১-এর নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় উত্তরাঞ্চলীয় জোট তালেবানদের পতন ঘটায়।

তালেবানদের পতনের পর জাতিসংঘ দেশটিতে বহুজাতিগোষ্ঠীয় সরকার স্থাপনে উৎসাহ দেয়। জার্মানির বন শহরে এ নিয়ে সম্মেলনের পর ২০০১-এর ডিসেম্বরে আফগানিস্তানে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তার ৬ মাস পরে একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠিত হয় যা ২০০৪ সালে একটি নতুন সংবিধান পাশ করে। নতুন সংবিধান অনুযায়ী আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট-ভিত্তিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০০৪ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আফগানিস্তানের প্রথম সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণ করেন।

ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, এ চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মোতায়েনরত সৈন্যদের ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তিতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার শঙ্কায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।

চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক ঘণ্টা আগে জাতির কল্যাণের জন্য আফগানিস্তানে যেকোনো ধরনের হামলা চালানো থেকে বিরত থাকতে সব যোদ্ধাদের নির্দেশ দিয়েছে তালেবান। গোষ্ঠীটির মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, আমরা প্রত্যাশা করছি, শান্তি চুক্তি এবং সমঝোতার সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের অঙ্গীকারের প্রতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে।

চুক্তি স্বাক্ষর উপলক্ষে তালেবানের রাজনৈতিক শাখার প্রধান মোল্লাহ আব্দুল গনি বারাদারের নেতত্বে গোষ্ঠীটির ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল কাতারে উপস্থিত ছিল। দোহার শেরাটন হোটেলে স্বাক্ষর হতে যাওয়া ঐতিহাসিক এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানের সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

এর আগে শুক্রবার এক বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, চুক্তি স্বাক্ষরের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আফগানিস্তানে মোতায়েনকৃত ১৩ হাজার সৈন্যের মধ্যে থেকে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জনকে ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি হবে। পশ্চিমা বিশ্বের অন্যান্য দেশের সৈন্যও তালেবানের সহিংসতার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।

বার্তা কক্ষ, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Share