চলছে বর্ষা মৌসুম। ঘন ঘন বৃষ্টি কারণে এ সময় রাস্তাঘাটে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। প্রচুর বৃষ্টির কারণে দেশের অনেক জায়গায় দেখা দেয় বন্যা। আর বন্যাকবলিত স্থানে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে ডায়রিয়া, আমাশয়, টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিস, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ল্যাপটোস্পাইরোসিসের মতো নানা ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ ছাড়া রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা পানি শরীরের বিভিন্ন অংশে লেগে অ্যালার্জিসহ বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হয়। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে সুস্থ থাকতে কিছু সচেতনতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এ ছাড়া দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় এমন কিছু খাবার যোগ করা দরকার, যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
বর্ষা মৌসুমে সুস্থ থাকতে কী করবেন– ১. বর্ষায় শিশু ও বয়স্কদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কারণ তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ সময় ডায়রিয়াসহ পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হলে বিচলিত না হয়ে সহজে হজম হবে, এমন খাবার খেতে হবে। যেমন: কাঁচকলা ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, জাউ, ভাতের মাড়, বিভিন্ন ধরনের পাতলা স্যুপ ইত্যাদি। পাশাপাশি সামান্য মসলা দিয়ে সেদ্ধ সবজি, ডাল ছাড়া, মুরগির মাংস, চিড়া ভেজানো পানিতে সামান্য গুড় দিয়ে, নরম ভাতে সামান্য হলুদ ও সরিষার তেল মাখিয়ে খেতে পারেন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল অথবা ফলের জুস খেতে পারেন। কারণ, এসব ফল থেকে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
২. পানি কিংবা মশাবাহিত রোগ হলে শরীরে লবণ ও পানির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে যায় এবং শরীরে প্রচণ্ড পরিমাণে দুর্বলতা দেখা দেয়। এর পাশাপাশি বমি বমি ভাব, জ্বর, পেটে ব্যথা, বদহজম, অতিরিক্ত ক্লান্তি, অবসাদ, মাথাব্যথা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। তাই এই সময় নিয়ম করে একটু পর পর বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন, ফলের জুস ও ডাবের পানি খেতে হবে।
৩. বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রবণতা বাড়ে। ডেঙ্গু হলে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ কমতে শুরু করে। এ কারণে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। পাশাপাশি প্লাটিলেট বাড়ায় এমন খাবার খেতে হবে। যেমন– ব্রকলি, পেঁপে পাতার রস, বেদানা, ডাবের পানি, মিষ্টিকুমড়া ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার।
৪. ঘরে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার স্যালাইন, ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। খাবারের প্লেট, বাসনকোসন, কাপড়, রান্নার শাকসবজি এবং রান্নায় বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করতে হবে।
৫. বর্ষাকালের এই সময়টায় ঘন ঘন চা কিংবা কফি পান না করে পরিবারের সব সদস্যের সঙ্গে বসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ মসলা চা খেতে পারেন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চায়ে লবঙ্গ, দারচিনি, গোলমরিচ, তুলসী পাতা, আদা ছেঁচা, রসুন ইত্যাদি যোগ করতে পারেন।
৬. পানিবাহিত রোগ হলে শরীরে পানির অভাব দেখা দেয়। যার ফলে শরীরে দুর্বলতা থেকে যায়। তাই এ সময় খাবারের কোনো উপাদানই বাদ দেওয়া যাবে না। দৈনিক খাবারের তালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিনসহ খাদ্যের ছয়টি উপাদানই রাখতে হবে।
৭. এ সময় অনেকেরই খাবারে অরুচি দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে লেবু দিয়ে স্যুপ তৈরি করে কিংবা সেদ্ধ সবজি খেতে পারেন।
৮. অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, ট্রান্স ফ্যাট, চর্বি জাতীয় খাবার, ফাস্টফুড এবং স্ট্রিট ফুড একদম পরিহার করতে হবে। মাছ, মাংস ও সবজি ভালোভাবে সেদ্ধ করে খেতে হবে।
বর্ষায় বাড়ির আশপাশে জলাবদ্ধতা কিংবা বন্যার পানি, যেটাই হোক না কেন মশা কিংবা বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়ে যায়। তাই বাড়ির আঙিনা ও চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশা যেন ঘরে ঢুকতে না করতে পারে, সেজন্য মশার কয়েল, স্প্রে, মশারি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে। মোট কথা, পানিবাহিত, মশাবাহিত রোগ থেকে নিজেদের সুস্থ রাখতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। লেখক: পুষ্টিবিদ
১২ জুলাই ২০২৩
এজি
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur