Home / জাতীয় / রাজনীতি / এরশাদ-রওশন দু’পক্ষই কঠোর অবস্থানে
এরশাদ-রওশন দু’পক্ষই কঠোর অবস্থানে

এরশাদ-রওশন দু’পক্ষই কঠোর অবস্থানে

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তাঁর স্ত্রী সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য রওশন এরশাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এখনো অব্যাহত আছে।

দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য ও কঠোর অবস্থান বহাল থাকায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন যদি কোনো আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান না হয় তাহলে রওশনপন্থী নেতাদের অনেকে বহিষ্কৃত হতে পারেন।

অতীতেও জাপায় এ রকম অনেক সংকট এসেছে, সেই সংকটের সমাধান হয়েছে এরশাদের ‘বিজয়ের’ মাধ্যমেই। দলটির চলমান সংকটের সুরাহা হবে বেশ কয়েকজন নেতার বহিষ্কার বা আলোচনার মাধ্যমে—এমনই মত দুই পক্ষের
একাধিক নেতার। ‘বসে সমাধান করুন’—প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এমন নির্দেশনা আসার পর প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আশা করা দুই পক্ষই এখন ভিন্ন উপায় নিয়ে ভাবছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ‘বিরোধ’ নিয়েই উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।
দলটির একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ও এরশাদের ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টিতে শুরু হওয়া সংকটের সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হবে বলে মনে করেন দলটির রওশনপন্থী নেতারা।

তাদের মতে, এরশাদ ও রওশন এরশাদের মধ্যে আলোচনার বিকল্প নেই এবং এটাই চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। এদিকে দলটির তৃণমূল নেতারা মনে করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদই দলের প্রাণ। এরশাদ শক্তিশালী হলে দলও শক্তিশালী হবে। সাধারণ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাঁর দিকেই তাকিয়ে থাকেন।

তবে রওশনকে বাদ দিয়ে সংগঠন—এমনটিও তাঁরা চান না। তৃণমূলের অনেকেই মনে করেন, রওশন এরশাদকে ইস্যু করে সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও তাঁর দোসররা দলকে বিতর্কিত করতে চাইছেন। কিন্তু রওশনপন্থী একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য আশ্বস্ত করে বলেছেন, রওশন এরশাদ রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। তিনি হিসাব কষেই পা ফেলেন।

তাহলে জাতীয় পার্টির চলমান সংকটের সমাধান কতটা গভীর আর এর সমাধানই বা কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির ফেনী জেলার সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট রবি বলেন, ‘আমি মনে করি এরশাদ মানে জাতীয় পার্টি। আর জাতীয় পার্টি মানে এরশাদ। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে কেউ যদি দলীয় চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তাহলে তা তার জন্য দুর্ভাগ্যজনক।’ তবে সংকট বেশি দূর গড়াবে না বলেই তিনি মনে করেন।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি পুণ্যজ্যোতি চাকমা বলেন, এত বছর রাজনীতি করেছি এরশাদের নামের ওপর। দীর্ঘ সময়ে অনেকে এরশাদকে চ্যালেঞ্জ করে আলাদা জাতীয় পার্টি করেছেন কিন্তু মূল জাতীয় পার্টি বলতে মানুষ এখন এরশাদের পার্টিকেই বোঝে। তাই এরশাদের বিরুদ্ধে দলের ভেতরে বা বাইরে যা-ই হোক জনগণ এরশাদকেই নেতা মনে করে।


জি এম কাদেরকে ভয় :

এরশাদ ঘোষিত কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে কেন এত আলোচনা ও বিরোধিতা এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জি এম কাদের আওয়ামী লীগের গত সরকারের আমলে জোটের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও পরবর্তী সময়ে সরকার থেকে তিনি ছিটকে পড়েন। ফলে তিনি সরকারের সঙ্গে জাপার নতুন করে অন্তর্ভুক্তি ও সখ্য মানতে পারেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে হেরে গিয়ে জি এম কাদের সরকারের সমালোচনা শুরু করেন। তিনি মনে করেন ও বলে থাকেন সরকারে থাকলে শক্তিশালী বিরোধী দল হওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন জাপার সরকারপন্থী নেতারা। তাঁরা জি এম কাদেরকে নতুন কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি।

এ ছাড়া অন্য একটি সূত্র বলছে , জি এম কাদের নতুন দায়িত্ব নিয়ে আগামী দিনে সরকার থেকে জাপার মন্ত্রীদের প্রত্যাহারের দাবি তুলবেন। সেটাও হবে দলের একাংশের জন্য বিব্রতকর। তাই তাঁরা আগেভাগেই জি এম কাদেরকে সরিয়ে রওশনকে সেখানে বসাতে চান।


রওশনকে কো-চেয়ারম্যান চাচ্ছে একাংশ :

সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদকে কো-চেয়ারম্যান করার দাবি দলটির সরকারপন্থী নেতাদের। তাঁদের দাবি, শুধু রওশনকে দায়িত্ব দিয়ে সংকটের সমাধান করতে পারেন এরশাদ। কিন্তু এরশাদের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এটি নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যই শোনা যাচ্ছে। সূত্র জানায়, জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণার পর রওশনপন্থী নেতারা তড়িঘড়ি করে রওশনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করলেও শুক্রবার এক বিবৃতিতে রওশন জানিয়েছেন, এ নিয়ে দলটির সংসদীয় কমিটিতে কোনো আলোচনা হয়নি।

অস্থিরতা যেন কাটছেই না: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে জাপায় এরশাদ ও রওশনকে নিয়ে দুটি বলয় তৈরি হয়। সে দুটি বলয় প্রায়ই নানা মতদ্বৈধের মুখোমুখি অবস্থান নেয়। দুই পক্ষের মধ্যে চলে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর আহ্বান। কেউ কারো কাছে যেন নতিস্বীকার করতে চায় না। একপর্যায়ে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ফের নতুন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বর্তমান সংকটের সমাধান হবে আলোচনার টেবিলে। এর বাইরে কোনো সমাধান নেই।

জানতে চাইলে দলের নবনিযুক্ত মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দলের প্রয়োজনে যেকোনো পরিবর্তনের ক্ষমতা দেওয়া আছে। এখন যেটা সমস্যা বলে মনে করা হচ্ছে দলের দুটি পদে পরিবর্তন। এটা নিয়ে সংকটের কিছু নেই। আগামী ৩১ জানুয়ারি যৌথ সভা ডাকা হয়েছে, সেখানে আলোচনা হলেই সমাধান বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, নতুন কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করে এসেছেন। আর আমিও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। আশা করি সমস্যা আর থাকছে না।’

দলের চলমান সংকট বিষয়ে জানতে চাইলে রওশনপন্থী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরাও চাই জাপায় চলমান সংকটের সমাধান হোক। কিন্তু এরশাদ সাহেব যদি একরোখা হয়ে বসে থাকেন তাহলে তো সমাধান হবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী তো এরশাদ সাহেবকে নতুন দুই পদে নিয়োগ বাতিল বা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি তা রাখেননি। এখন আমাদের একটিই পথ, আমরাও এরশাদের মনোনীত নতুন মহাসচিব ও নতুন কো-চেয়ারম্যানের ডাকে সাড়া দেব না।’

সমাধান খুঁজছে দুই পক্ষই :
জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে বহিষ্কার করার পর দলে যে পরস্পরবিরোধী অবস্থানের সৃষ্টি হলো তার সমাধানও খোঁজা হচ্ছে দুই পক্ষ থেকে। বলা হয়েছিল, দুই পক্ষই সুরাহার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দারস্থ হবে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির একজন প্রতিমন্ত্রী গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী তাঁকে দুই পক্ষ বসে সমাধানের কথা বলেছেন। এখন আলোচনার টেবিলে বসা যায় কি না, বসলে এজেন্ডা কী হবে, কে কাকে ডাকবে এসব নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আলোচনা বা আলোচনার আভাস নেই। তবে ওই প্রতিমন্ত্রী মনে করেন, আলোচনাতেই সমাধান।

এদিকে সোমবার নতুন কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে সংবর্ধনা দিয়েছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা পার্টি। আর রওশন এরশাদপন্থীরা জানিয়ে দিয়েছে, তারা নতুন নেতৃত্বকে কোনোভাবেই সহযোগিতা করবে না। (কালের কন্ঠ)

নিউজ ডেস্ক  : আপডেট ১১:৪৫ এএম, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার

ডিএইচ