বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত এবং ৮৯৯ জন আহত হয়েছেন। সদ্যবিদায়ী মাসটিতে গড়ে প্রতি দিন সড়কে দুর্ঘটনায় প্রায় ২০ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে তারা এ প্রতিবেদন করেছে বলে জানিয়েছে।
সমিতির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৫ জন নিহত এবং ৮৯৯ জন আহত হয়েছেন। ২১৪টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৫ জন নিহত এবং ১১৪ জন আহত হয়েছেন। রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং ৭৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ১ জন আহত হয়েছেন। নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ হয়েছেন ৬ জন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারিতে রেলপথে ৪৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জনের মৃত্যু ও ৭৮ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৩ দুর্ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু ও একজন আহত এবং ছয়জন নিখোঁজ রয়েছেন।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মোট দুর্ঘটনার মধ্যে পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা বেশি। এটি প্রায় ৫২ শতাংশ। গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে এবার সড়কে দুর্ঘটনা ৫.৩ শতাংশ বেড়েছে। আহতের সংখ্যা বেড়েছে ১০.০৪ শতাংশ। তবে প্রাণহানি কমেছে ৪.৬ শতাংশ।
এতে বলা হয়, দুর্ঘটনার সবচেয়ে বেশি হয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কে। আর গত কয়েক বছর ধরেই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে বের হওয়া যায়নি এবারো। এই মাসে সড়ক দুর্ঘটনার ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশই মোটরসাইকেল সংশ্লিষ্ট। আর নিহতের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ছিল বাইকআরোহী।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, জানুয়ারিতে সড়কে ৫৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ দিনে মৃত্যু গড়ে ১৯ দশমিক ৫ জনের। এর মধ্যে ২০৫ জন মারা গেছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। অর্থাৎ যত মানুষ মারা গেছে, তাদের ৩৫ শতাংশ বাইকআরোহী।
এই এক মাসে সড়কে আহত হয়েছেন ৮৯৯ জন। এদের মধ্যে ১১৪ জন ছিলেন বাইকআরোহী। অর্থাৎ বাইক দুর্ঘটনায় পতিতদের হার অন্য দুর্ঘটনার তুলনায় অনেক বেশি।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সই করা প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ১৫৩ জন চালক, ৮৪ জন পথচারী, ৮০ জন নারী, ৪৬টি শিশু, ৪৬ জন শিক্ষার্থী ও ২৬ পরিবহণ শ্রমিক। এই মাসে ৯ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯ জন শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী আটজন, দুইজন প্রকৌশলী, দুইজন আইনজীবী এবং একজন সাংবাদিক মারা গেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে সড়কে দুর্ঘটনার পরিমাণ ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়লেও প্রাণহানি কমেছে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই এক মাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় গত ১১ জানুয়ারি। সেদিন ৩০ জন মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে ১৭ জানুয়ারি, ৩৫টি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২০ জনের।
দুর্ঘটনা ঘটানো বা এর শিকার মোট ৮১৬টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে। এর মধ্যে ২৭.৩২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২.৫ শতাংশ বাস, ২৪.৭৫ শতাংশ ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫.০২ শতাংশ কার-জিপ-মাইক্রোবাস, ৫.৮৮ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১৪.৫৮ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৯.৯২ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা।
মোট দুর্ঘটনার ৫১.৬০ শতাংশ পথচারীকে গাড়িচাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ২২.২৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১২.৪৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যাওয়া, বিবিধ কারণে ১১.৯৭ শতাংশ, ০.৬৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেছিয়ে এবং ১.০১ শতাংশ ট্রেনের সঙ্গে যানবাহনের ধাক্কা।
দুর্ঘটনার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ বছর মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৯.৫১ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ৩৮.৬১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৪.৪৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৫.২২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১৮ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.০১ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
বার্তা কক্ষ, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩