Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরের দু’কৃতি সন্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক গ্রহণ
একুশে পদক

চাঁদপুরের দু’কৃতি সন্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক গ্রহণ

চাঁদপুরের দু’কৃতি সন্তান অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম ও চিত্রশিল্পী ড. ফরিদা জামান একুশে পদক গ্রহণ করেছেন। বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারি ২০ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে চাঁদপুরে এ দু’কৃতিমানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক প্রদান করেন।

ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা হিসেবে এ পদক প্রদান করে থাকে।

অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখায় অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম এ পদক পান। এর আগে তিনি ২০১৮ সালে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকনোমিক মডেলিং তাকে ইকনোমিস্ট অব ইনফ্লুয়েন্স পুরস্কারে ভূষিত করে। এছাড়াও একই বছর তিনি বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতি স্বর্ণপদক, বাংলাদেশ শিক্ষা পর্যবেক্ষণ সোসাইটি কর্তৃক ‘নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক’ লাভ করেন

১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করা এ কৃতিমান বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে জ্যেষ্ঠ সচিব পদমর্যাদায় ২০০৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) একজন সিন্ডিকেট সদস্য

শিক্ষা জীবনে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতক ও ১৯৭৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ও ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। তিনি ৪ বছর তিন মাস জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীতে ২০০২ থেকে ডিসেম্বর ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশি কনসালটেন্ট, ২০০৮ সালে তিনি জার্মানির হুমবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেণ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক এবং নেদারল্যান্ডের ওয়াগিনেঞ্জেন ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড রিচার্সে ইরসমাস মুন্ডুস স্কলার হিসেবে কাজ করেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৯ সালের ১ জুলাই প্রেষণ ছুটিতে সরকার তাকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। ২০১৫ সালে কমিশনের সদস্য থাকাবস্থায় তাকে জ্যেষ্ঠ সচিব করা হয়। ২০১৬ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কমিশন সদস্য হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর কয়েকবার তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২০ জুন পুনরায় সরকার তাকে তিন বছরের জন্য নিয়োগ প্রদান করে।

এ বছর একুশে পদকপ্রাপ্ত চাঁদপুরের আকের কৃতিজন হলেন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী ড. ফরিদা জামান। চারুকলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে একুশে পদক-২০২০ প্রদান করা হয়।

একুশে পদক ছাড়াও ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ৪র্থ নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীতে তিনি সব বিভাগে ‘নবীন শিল্পী পুরস্কার’ লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে ভারতের দিল্লিতে আন্তর্জাতিক চারুকলা প্রদর্শনীতে সম্মামনা, ১৯৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকার কর্তৃক সাংস্কৃতিক পদকে ভূষিত হন। ২০০৯ সালে তিনি মহিলা পরিষদ পুরস্কার লাভ করেন।

ফরিদা ১৯৫৩ সালে চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে চারুকলায় স্নাতক এবং ১৯৭৮ সালে ভারতের বরোদাতে অবস্থিত মহারাজা সাজিরাও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের অধ্যাপক। বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে ফরিদা জামানের ৮টি একক প্রদর্শনী এবং ৫০টির বেশি যৌথ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ও ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এই বেসরকারি সম্মাননা প্রাপ্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের মাঝে এই পদক বিতরণ করেন।

পদকপ্রাপ্ত পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, পুরস্কারের অর্থ এবং একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও মহান একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের অয়োজন করে।

প্রতিবেদক : দেলোয়ার হোসাইন, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০