একাধিক প্রেম করে কোটিপতি!

লোকে বলে- প্রেম করলে নাকি ম্যানিব্যাগের টাকা কমে যায়। কিন্তু রাজশাহীর আশরাফুলের ক্ষেত্রে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র। ৩০ বছরের জীবনে অন্তত ২৪ জনের সঙ্গে প্রেম করলেও একটুও কমেনি তার গাঁটের পয়সা, উল্টো বেড়েছে বহুগুণ! ছলে-বলে কৌশলে প্রেমিকাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তিনি এখন কোটিপতি!

আশরাফুল ইসলামের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌরসভার সুলতানগঞ্জ মেলাপাড়া এলাকায়। তার বাবার নাম শাহজাহান আলী। ‘ব’ কলম আশরাফুল পেশায় একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি।

কবিরাজিও করেন তিনি। কিন্তু তার চালচলন মোটেও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি কিংবা কবিরাজদের মতো নয়। ঘোরেন দামি মোটরসাইকেলে, পরেন দামি দামি সব পোশাক।

তার এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বড় লোকদের মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করে আশরাফুল এখন কোটিপতি হয়ে গেছেন। আর এসব টাকা দিয়ে তিন বছর ধরে তিনি মাদক ব্যবসা করছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কয়েক বছর আগেও আশরাফুল ছিলেন এক বখাটে যুবক। কিন্তু কি আশ্চর্য! কয়েক বছরের মধ্যেই আশরাফুল হয়ে উঠলেন এলাকার অন্যতম দাপুটে ব্যক্তি। এখন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নেতা-নেত্রী-সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক।

এদিকে একের পর এক প্রেমে জড়িয়ে প্রেমিকাদের টাকা-পয়সা হাতিয়ে ভালোই চলছিল তার জীবন। কিন্তু সম্প্রতি তার সব অপকর্ম ফাঁস হয়ে যায় তখন, যখন আশরাফুল প্রচুর টাকার লোভে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করে বসেন।

ওই নারীকে বিয়ে করার পরই স্কুলশিক্ষিকা এক প্রেমিকা তার বাড়িতে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে। এরপরই আশরাফুলের সব প্রেমিকা তার বিষয়ে জেনে যায়।

জানা গেছে, আশরাফুল অন্তত দু’ডজন সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণা করলেও কাঁচা পয়সার লোভে প্রতারণা করতে পারেননি উপজেলার কাচারিপাড়া গ্রামের প্রবাসী রহমত আলী মুকুলের স্ত্রী পপি বেগমের সঙ্গে। সম্প্রতি আশরাফুল পপি বেগমকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেন।

রহমত আলীর পরিবারের সদস্যদের দাবি, পপি তার প্রবাসী স্বামীর প্রায় ৫০ লাখ টাকা ও বেশকিছু স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে আশরাফুলের সঙ্গে পালিয়েছেন। এসব এখন আশরাফুলের কাছে।

এদিকে প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে আশরাফুলের পালিয়ে বিয়ের বিষয়টি জানতে পেরে তার আরেক প্রেমিকা উপজেলার বলিয়াডাইং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষিকা গত ২৪ এপ্রিল আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান। এ সময় স্থানীয়রা ওই স্কুল শিক্ষিকাকে গোদাগাড়ী ৩১ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন।

যোগাযোগ করা হলে ওই শিক্ষিকা জানান, গত ৭ বছর ধরে আশরাফুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। এই ৭ বছরে তিনি আশরাফুলকে অন্তত ৭ লাখ টাকা দিয়েছেন। কিনে দিয়েছেন একটি মোটরসাইকেলও।

শিক্ষিকার দাবি, আশরাফুল তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও স্থাপন করেছেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি আশরাফুলের সব প্রেমিকার ব্যাপারে খবর পেতে থাকেন। এর ফলে বাধ্য হয়ে তিনি আশরাফুলের বাড়িতে গিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালান।

ওই শিক্ষিকা আরও জানান, তার কাছে অন্তত ২৪ জন মেয়ের নামের তালিকা আছে, যাদের সঙ্গে আশরাফুল প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে নানা সুবিধা আদায় করেছে। এর মধ্যে, বিলকিস, নাসরিন, জান্নাতুন, লিপি, পপি ও আয়েশাসহ বেশ কয়েকজনের নাম জানান তিনি।

তিনি বলেন, ৭ বছরে তিনি বুঝেছেন মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়াটাই আশরাফুলের প্রধান পেশা। শুধু তাই নয়, টাকা না দিলে নানা ধরনের হয়রানিও করেন আশরাফুল। ফলে তাকে টাকা না দিয়ে কোনো উপায় থাকে না।

ওই শিক্ষিকা আরও জানান, প্রতারণার অভিযোগে তিনি আশরাফুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে চেয়েছিলেন। থানায় মামলা করলে শিক্ষকতা থাকবেনা বলে তার পক্ষের কয়েকজন প্রভাবশালী হুমকি দেয়ায় তিনি মামলা করতে পারছেন না।

শিক্ষিকা বলেন, থানায় মামলা করলে তার বিশেষ মুহুর্তের কিছু ছবি এবং ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলেও হুমকি দিয়েছেন আশরাফুল। এই ভয়ে তিনি মামলা করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার সকালে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওই শিক্ষিকা।

জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবু ফরহাদ বলেন, শিক্ষিকার আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা হয়নি। ওই শিক্ষিকা আশরাফুলের বিরুদ্ধে মামলা করলে তা নেয়া হবে।

এদিকে আশরাফুলের বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় নিকাহ রেজিস্ট্রার ও গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক আবদুল জব্বার বলেন, ‘তার ব্যাপারে তো এখন এলাকা সরগরম। শুনেছিলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর অনুপনগরে আশরাফুল একটা বিয়ে করেছিল। হড়মা চরেও তার আরেকটি বিয়ে হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সম্প্রতি এক প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান আশরাফুল। এরপর আরেক শিক্ষিকা তার বাড়িতে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। এখন আরো অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে।’

এলাকাবাসী জানান, স্থানীয় এক প্রভাবশালী আ.লীগ নেতার আশ্রয়ে আশরাফুল বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। একের পর এক প্রেমিকার টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে টাকাই তিনি এখন শুরু করেছেন হেরোইনের ব্যবসা।

সূত্র আরও জানায়, কয়েক মাস আগে গোদাগাড়ীর আলোচিত চার কেজি হেরোইন ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গেও জড়িত এই আশরাফুল। সে সময় তিনি এক কেজি হেরোইন ভাগে পেয়েছিলেন। তারপর সেগুলো ১’শ-দেড়শ গ্রাম করে বিভিন্ন হেরোইন ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছিলেন। যাদের কাছে তিনি এসব হেরোইন বিক্রি করেছিলেন, তাদের কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টির সত্যতাও স্বীকার করেছেন।

আশরাফুল ইসলাম দাবি করেন, তার ব্যাপারে আনা এসব অভিযোগ মিথ্যা। তিনি কোনোদিনই কারো সঙ্গে প্রেম করেননি। শুধু এক প্রবাসীর স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন। তবে পপি বেগম নামে ওই নারী তার আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়েই ঘর ছেড়েছেন। আর ওই স্কুল শিক্ষিকাই তাকে জোর করে বিয়ে করতে চান।

তিনি বলেন, বিলকিস, নাসরিন, জান্নাতুন, লিপি আর আয়েশাদের আমি চিনি না। এছাড়া আমি হেরোইন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত নই।(ঢাকা টাইমস)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৫:০৮ পিএম, ১ জুন ২০১৬, মঙ্গলবার

এইউ

Share