নেত্রকোনার মদন উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে এসে নৌকাডুবিতে মারা যাওয়া ১৭ জনের আটজন একই পরিবারের। তাদের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলায়। এ ঘটনায় তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
মৃত আটজন হলেন- ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিন (৪৫), তার বড় ছেলে মাহবুবুর রহমান আসিফ (১৭), ছোট ছেলে মাহমুদুর রহমান (১৪), ভাগনে রেজাউল করিম (১৮), ভাতিজা মো. জুবায়ের হোসাইন (১৯) ও মো. মুজাহিদ মিয়া (১৪)। তারা সবাই মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী। মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিনের ভাতিজি লুবনা আক্তার (১০) ও জুলফা আক্তার (৭) ইসরাহুল বানাত মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী।
বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মদনের উচিতপুরের সামনের হাওর গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা নামক স্থানে এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিন। তিনি ইসরাহুল বানাত মহিলা মাদরাসারও প্রতিষ্ঠাতা। বুধবার সকালে ময়মনসিংহ সদর থানার ৫ নম্বর চরশিরতা ইউনিয়ন ও আটপাড়া তেলিগাতী থেকে প্রায় ৪৮ জনকে নিয়ে পর্যটনকেন্দ্র ‘মিনি কক্সবাজার’ খ্যাত উচিতপুরের হাওরে ঘুরতে যান। হাওরের উত্তাল ঢেউয়ে গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা নামক স্থানে নৌকাটি ডুবে যায়; এতে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিখোঁজ হন আরও চারজন।
মৃত মাহফুজুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ ভ্রমণে যান তারা। কে জানতো এটাই তাদের শেষ যাওয়া। এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
মৃত রেজাউলের মা রেহেনা খাতুন বলেন, ছেলে ছোট থাকতেই তার বাবা মারা গেছেন। মামাবাড়ি থেকে রেজাউল হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করতো। এরপর কথা বলতে বলতেই তিনি জ্ঞান হারান।
সিরতা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা আল মাহমুদ বলেন, নৌকাডুবে এক পরিবারের আটজনের মৃত্যু হয়েছে। মাওলানা মাহফুজুর রহমান দুটি মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। দুই মাদরাসায় ৪৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। মাহফুজুর রহমানের মৃত্যুতে ওই শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমরা হারিয়েছি একজন ভালো মানুষকে।
৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়ীদ বলেন, কোনাপাড়া গ্রামের মারকাজুস সুন্নাহ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মাহফুজুর রহমান মেয়াজ উদ্দিনের দুই ছেলে, এক ভাগনে, দুই ভাতিজা ও দুই ভাতিজিসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা প্রত্যেকে হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি বর্তমানে নেত্রকোনার মদন উপজেলায় আছি। মদন থানা থেকে ১৩ জনের মরদেহ পাঠিয়েছি। দুজনের মরদেহ পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। একজন এখনও নিখোঁজ।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, নিহত ১৭ জন ময়মনসিংহের বাসিন্দা। এর মধ্যে গৌরীপুর উপজেলার দুজন, সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের ১৫ জন ও ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের একজন। মৃত প্রত্যেককে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে দেয়া হবে।
বার্তা কক্ষ, ৫ জুলাই ২০২০