অর্থনীতি

একদিনের জন্য এমডি!

মাত্র একদিনের জন্য বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল খালেক খানকে।

আগামীকাল সোমবার তার সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। রোববার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপ-সচিব মতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা স্কেলে (নির্ধারিত) পদোন্নতি পূর্বক পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হলো। এছাড়া অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও পাবেন তিনি।

চাকরির মেয়াদ শেষের একদিন আগেই কেন তাকে এমডি পদে নিয়োগ দেওয়া হলো? চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ জন্যই তাকে প্রাইজ পোস্টিং (সম্মানী পদ) দেওয়া হলো। মেয়াদ শেষে তাকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সেটাও হতে পারে, নাও পারে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া সঠিক নয়। এর ফলে জনগণের কোনো উপকার হয় না। এটা শুধুই আমলাতান্ত্রিক বা রাজনৈতিক নিয়োগ।

এর আগে গত ৩০ জুলাই ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন ঋণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তাকে অপসারণের পর অর্থমন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ওই দিনই ব্যাংকের সিনিয়র ডিএমডি মিজানুর রহমান খানকে ভারপ্রাপ্ত এমডির দায়িত্ব দেয়া হয়। আর সেই দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সান-মুন-স্টার গ্রুপকে জালিয়াতির মাধ্যমে ১০৮ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে দুদক।

এদিকে পরিচালনা পর্ষদের সুপারিশ ছাড়াই সরকারি গৃহঋণদানকারী এ সংস্থাটির এমডি পদে একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এই ব্যক্তি হচ্ছেন একই প্রতিষ্ঠানের এক সময়কার এমডি মো. নুরুল আলম তালুকদার। নিয়ম রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানে কাউকে এমডি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হলে বোর্ড সভার সুপারিশ নেয়ার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা মানা হচ্ছে না।

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬২ বছর পেরিয়ে যাওয়ার কারণে তিনি গত ৩১ ডিসেম্বর এই প্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নিয়েছেন। এখন আবার তাকেই বোর্ড সভার সুপারিশ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানটির এমডি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার জন্য প্রভাবশালী একটি মহল জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে তাকে নিয়োগ দেয়ার সুপারিশ করে একটি সার-সংক্ষেপ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় ও বিএইচবিএফসি সূত্রে জানা গেছে, নুরল আলম তালুকদার বিএইচবিএফসিতে এমডি পদে পুনরায় নিয়োগ পাওয়ার জন্য সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর কাছে একটি আবেদন করেন।

এতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০১১ সালের ১৩ জুলাই এই প্রতিষ্ঠানে এমডি পদে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির বিদ্যমান সমস্যা ও সম্ভাবনার ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

চিঠিতে দাবি করা হয়, তার সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শ্রেণিকৃত ঋণের হার ১৪ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।

শুধু প্রতিহিংসার কারণে ২০০১ সালের পর যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ডিএমডি পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছিল। ৮ বছর পর ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে বঞ্চিত কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়।

নিজেকে আবার হাউজ বিল্ডিংয়ে নিয়োগের আবেদন করে তালুকদার অর্থমন্ত্রীকে লেখেন, ‘সাধারণ চাকরিজীবীদের চাকরির মেয়াদ ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬০ বছর বিদ্যমান আছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণ কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে ৬২ বছর করা হলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে ৬৩ বছর পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি যুক্তিযুক্ত। এমতাবস্থায়, মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা হিসেবে আমার চুক্তির মেয়াদ ৬৩ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করে কর্পোরেশনে কাজ করার সুযোগ প্রদানে বাধিত করবেন।’ (জাগো নিউজ)

নিউজ ডেস্ক ।।আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৭:৪৮ পিএম,২৮ আগস্ট ২০১৬ রোববার
এইউ

Share