এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী ২ ডিসেম্বর। এবারের পরীক্ষায় মোট ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। এর মধ্যে ছাত্র সাত লাখ ২৯ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ছয় লাখ ৬৯ হাজার ৯৫২ জন।
বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
এ সময় মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুকসহ বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার সাধারণ নয়টি শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষা দিছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার ১১৩ জন। ছাত্রী পাঁচ লাখ ৭৪ হাজার ৯০৪ জন।
মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬১ হাজার ৭৩৮ জন এবং ছাত্রী ৫১ হাজার ৪০৬ জন।
এছাড়া এইচএসসি- বিএম/ভোকেশনাল পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র এক লাখ চার হাজার ৮২৭ জন। ছাত্রী ৪৩ হাজার ৬৪২ জন।
সাধারণ নয়টি শিক্ষাবোর্ড
এবার সাধারণ নয়টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ১৭ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। তার মধ্যে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে তিন লাখ ১৪ হাজার ৭০৪ জন, রাজশাহী বোর্ডে এক লাখ ৫০ হাজার ৭৪৫ জন, কুমিল্লা বোর্ডে এক লাখ ১৭ হাজার ৩০৯ জন, যশোর বোর্ডে এক লাখ ৩১ হাজার ১৫৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে এক লাখ এক হাজার ১০২ জন, বরিশাল বোর্ডে ৬৮ হাজার ৪৪১ জন, সিলেট বোর্ডে ৬৭ হাজার ৭৯২ জন, দিনাজপুর বোর্ডে এক লাখ ১৫ হাজার ৭৯৫ জন এবং ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ৭০ হাজার ৯৩৪ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করে।
এর পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে এক লাখ ১৩ হাজার ১৪৪ জন এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এক লাখ ৪৮ হাজার ৫০৩ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করেছে। সব মিলিয়ে সারাদেশে মোট ১৩ লাখ ৯৯ হাজার ৬৯০ জন পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট ১৫ লাখ ৮৫ হাজার শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে। তবে তাদের মধ্যে এক লাখ ৮৫ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। সে হিসাবে ১১ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিক স্তর থেকে ঝরে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই তথ্য আমাদের কাছে নেই, আন্তঃশিক্ষা বোর্ড থেকে পাওয়ার পর তা জানা যাবে। পরীক্ষায় নিয়মিত ও অনিয়মিত অনেক শিক্ষার্থী রয়েছে, তাই পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে সেটি ঝরে পড়া বলা যাবে না।
৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশ
এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট আগে প্রবেশ করতে হবে। কেউ যদি তার পরে আসে তবে তাকে গেটে রেজিস্ট্রার খাতায় পরিচয় ও দেরি হওয়ার কারণ উল্লেখ করে প্রবেশ করতে হবে।পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নপত্রের সেট নির্বাচন কেন্দ্রে এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রের মধ্যে কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবে না। শুধু কেন্দ্র সচিব মোবাইল ফোন (ছবি তোলা যায় না এমন ফোনসেট) ব্যবহার করতে পারবেন।
যে কয়টি বিষয়ে পরীক্ষা
করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার পরীক্ষার্থীদের তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পরীক্ষা নেওয়া হবে। বিজ্ঞান বিভাগে এমসিকিউ ২৫টির মধ্যে ১২টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১৫ মিনিট। তত্ত্বীয় পরীক্ষায় ৮টি প্রশ্নের মধ্যে ২টির উত্তর দিতে হবে। সময় ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট। পরীক্ষার মোট সময় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট।
মানবিক ও ব্যবসায় শাখার পরীক্ষার্থীদের এমসিকিউ ৩০টির মধ্যে ১৫টি উত্তর দিতে হবে। এ জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ মিনিট। তত্ত্বীয় ১১টির মধ্যে তিনটির উত্তর দিতে হবে। এরমধ্যে দুটি বড় প্রশ্ন। আগে লিখিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। পরীক্ষার মোট সময় এক ঘণ্টা ৩০ মিনিট। এ সময়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা আয়োজন
এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনে আয়োজন করা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাস করতে হবে। অভিভাবকদের কেন্দ্রের সামনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিদেশে আট কেন্দ্রে পরীক্ষা
এ বছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এইচএসসি-সমমান পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। তার মধ্যে জেদ্দায় ১১৪ জন, রিয়াদে ৭৪ জন, ত্রিপলীতে দুইজন, দোহায় ৭৯ জন, দুবাইয়ে ২৬ জন, বাহরাইনে ৫৮ জন, সাহাম ও ওমানে ১৯ জনসহ মোট ৪০৬ জন পরীক্ষার্থী রয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
এবার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেবিক্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের জন্য অতিরিক্ত ১০ মিনিট সময় বেশি দেওয়া হবে। তবে অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম, সেরিব্রাল পালসিদের ২০ মিনিট সময় বেশি থাকবে।
কোচিং সেন্টার বন্ধ
পরীক্ষা সুষ্ঠু ও নকলমুক্তভাবে আয়োজন করতে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে কেউ যেন কোনো ধরনের কোচিং সেন্টার খুলে না রাখেন সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।