Home / চাঁদপুর / এ বছর ইলিশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ মে.টন : ড.আনিস
Hilsha

এ বছর ইলিশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ মে.টন : ড.আনিস

দেশে চলতি অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ মে.টন হওযার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মে.টন ইলিশ উৎপাদিত হয়েছে বলে মৎস্য বিভাগ সুত্রে জানানো হয়েছে । প্রতি বছর দেশের নদ-নদী থেকে জাটকা ধরা নিষিদ্ধকরণ এবং অক্টোবরে মা-মাছ রক্ষার কর্মসুচি ছিল।

চাঁদপুর নদী কেন্দ্রের সাবেক চীফ সাইন্টিফিক অফিসার ও দেশ বরেণ্য ইলিশ গবেষক ড.আনিসুর রহমান ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ১১ টার দিকে মোবাইলে এ ব্যাপরে জানতে চাইলে তিনি তা জানান ।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন,‘ সারাদেশে এবার ইলিশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পৌনে ৬ লাখ মে.টন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার মে টন এবং চলতি বছর ৬ লাখ টন উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনায় তিনি আশাবাদী। ’

কিভাবে সম্ভব এর প্রশ্নের জবাবে দেশ বরেণ্য ইলিশ গবেষক ড.আনিসুর রহমান বলেন,‘যে পদ্ধতি অবলম্বন করে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি ও মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে এর ফলেই এটা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন ।’

এছাড়াও ২০১৬-১৭ সাল থেকেই মৎস্য বিভাগের গবেষকগণ অত্যন্ত দক্ষতার সহিত পরীক্ষা করে দেখছে যে প্রতিবছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন মিঠা পানি থেকে বেরিয়ে ইলিশ যখন সাগরে প্রবেশ করে তখন তারা ওখানে ৬৫ দিন বড় হতে থাকে। যার ফলে অনাকাংক্ষিত জাটকা নিধন ও মা ইলিশ ধরা হলেও আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী যে আমাদের ইলিশ উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধিপাবে ।

সরকারের মৎস্যবিভাগ ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ২০২২-২০২৩ বছরের ৭-২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ,পরিবহন,ক্রয়-বিক্রয়,মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ।১৫ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো.ইফতেখার হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২২ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেছেন,‘ নিষিদ্ধ সময়ে যারা মাছ ধরতে নামে তারা সবাই মৎস্যজীবী নয়। তাদের নেপথ্যে অনেক ধনী ব্যক্তি থাকে,ক্ষমতাবান ব্যক্তি থাকে। ইলিশ সম্পদ রক্ষায় অতীতের মতো এবারও এসব অসাধু ব্যক্তিদের ছাড় দেয়া হবে না। ইলিশ সম্পদ ধ্বংসকারী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। দিনে অভিযানের পাশাপাশি এবার রাতেও অভিযান জোরদার করা হবে ।
সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় বরফ কল বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। গত বছরের মতো এবারও অবৈধ জাল উৎপাদনস্থলে অভিযান পরিচালনা করা হবে। অবৈধ পথে ইলিশ পাচার রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইলিশ সম্পৃক্ত জেলা-উপজেলায় নদীতে ড্রেজিং বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের মাধ্যমে ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে যা যা করা দরকার তা করতে হবে।’

অতীতে এত ইলিশ উৎপাদন হয়নি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন,‘ সরকারের নানাবিধ উদ্যোগে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে গ্রাম-গঞ্জে এখন ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারছে। ইলিশ রপ্তানিও করা যাচ্ছে।’

এ ছাড়াও দেশের ৬টি অভয়াশ্রম সুরক্ষিত রাখতে অব্যাহত প্রচেষ্ট থাকলে আমরা অবশ্যই আমাদের কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো । গত বছর অক্টোবর মাসে ৫১.৭৬ % মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে । ইলিশ উৎপাদনে এটা একটা নতুনমাত্রা ।’

ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে দেশের সব প্রজননগুলোতে ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌসুম ঘোষণা করেছে সরকার।

এ সময়ের মধ্যে ইলিশ ধরা,আহরণ,বিক্রি ও বিপণন বন্ধ থাকবে। ইলিশের এ প্রজনন সময়ে সরকারের মানবিক খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় চলতি অর্থবছরে জেলেদের ভিজিএফ চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৬টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় মা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা সাড়ে ৫ লাখ জেলে পরিবারের জন্য ৪০ কেজি হারে ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম শুরুর আগেই এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এ মৌসুমে গত মৌসুমের তুলনায় গত বছর অতিরিক্ত ১ লাখ ২০ হাজার ২৬৩টি জেলে পরিবারকে এ খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে ।

দেশের প্রজননের সময় জাটকা ধরা নিষিদ্ধকরণ ও ইলিশ ধরা বন্ধসহ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপে ইলিশের উৎপাদন বাড়ার এ সম্ভাবনার কথা বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদীকেন্দ্র চাঁদপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও দেশের খ্যাতিমান ইলিশ গবেষক ড.আনিছুর রহমান জানিয়েছেন।

দেশে গত অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন ছিল ৫ লাখ ৬৫ হাজার মে.টন। যেখানে ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার মে.টন । চলতি অর্থবছরে তা বেড়ে ৬ লাখ মে.টনে হওয়ার কথা রয়েছে ।

সম্প্রতি ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে অধিক মাত্রায় ডিমওয়ালা ইলিশ ও জাটকা আহরণ বন্ধ করে মাছের অবাধ প্রজনন এবং বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি করে ও সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখলে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি হচ্ছ্ । এবার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি,জাটকা সংরক্ষণ,মা ইলিশ আহরোণ বন্ধ রাখায় ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে।

বরিশাল অঞ্চলের নদ-নদীসমুহ আরো ইলিশ সমৃদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে অভয়াশ্রমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এমনকি ভৌগলিক অবস্থানগত কারণেও অঞ্চলটি ৮২ কি.মি.অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণার যোগ্য ।

এ প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলকে ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘোষণা ও স্থাপনের নির্মিত্তে অনুমোদিত। এক একটি অভয়াশ্রম হচেছ এক একটি রূপালী ইলিশ উৎপাদনের কারখান। প্রয়োজন শুধু ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়ন। তাহলেই বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ সম্পদ উন্নয়নের ও সহনশীল উৎপাদনের গতিধারা বজায় থাকবে এবং জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ হবে।

আবদুল গনি,
চাঁদপুর টাইমস
২ অক্টোবর ২০২২