Home / কৃষি ও গবাদি / ‘ইয়াবাভক্ত’ ওসির কাণ্ড…
‘ইয়াবাভক্ত’ ওসির কাণ্ড...

‘ইয়াবাভক্ত’ ওসির কাণ্ড…

দেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফ থানার। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এ থানা এলাকা ইতোপূর্বে ইয়াবা ও মানবপাচারের ট্রানজিট হিসাবে দেশ পেরিয়ে বিশ্বব্যাপি পরিচিতি লাভ করেছে।

এ ঘটনায় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মানবপাচাকারীদের আটকে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় তালিকা করে জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। চিরুনি অভিযানের ফলে এক পর্যায়ে গাঢাকা দেয় আতঙ্কিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারীরা।

তবে সম্প্রতি ইয়াবা ব্যবসা ও মানবপাচার রোধে টেকনাফ থানায় দেখা গেছে উল্টো চিত্র। বিশেষ করে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মজিদ থানায় যোগদান করার পরেই পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। ওসি আবদুল মজিদের বিরুদ্ধে ইয়াবা ও মানবপাচারকারীদের সঙ্গে সখ্যতা তৈরির অভিযোগ উঠেছে।

ওসির সঙ্গে সখ্যতার কারণেই পালিয়ে থাকা তালিকাভূক্ত ইয়াবা গডফাদার ও ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, ওসির আশকারায় দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছেন ইয়াবা গডফাদাররা। আর এ কারণেই নানা মহল থেকে ওসির অপসারণের দাবি উঠেছে।

টেকনাফের ওসির সঙ্গে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সখ্যতার প্রকাশ্য প্রমাণও মিলেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সম্প্রতি ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। যে ঘটনা অতীতে টেকনাফে দায়িত্বে থাকা সব ওসির রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে মন্তব্য অনেকেরই।

সূত্রমতে, ২০১৩ সালের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-৬ এর এক স্মারকপত্রের সূত্রে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব ও পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা) প্রণব কুমার নিয়োগী স্বাক্ষরিত একটি প্রতিবেদনে ৭৬৪ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করা হয়।

ওই তালিকায় ৭ নম্বরে নাম রয়েছে টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়া গ্রামের ইউনুছের ছেলে নুরুল আবছারের। তাকে এলাকায় সবাই চেনে নুরসাদ হিসেবে। তালিকার শীর্ষে এক নম্বরে থাকা ইয়াবা গডফাডার আত্মগোপনে থাকা হাজি সাইফুল করিমের আত্মীয়ও তিনি।

টেকনাফে ইয়াবার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান শুরু হলে এ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মগোপনেও গিয়েছিলেন। কিন্তু গত ২৫ মে টেকনাফ পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকেই অনেককে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর প্রবণতা দেখা গেলেও উল্টো ঘটনা ঘটিয়েছেন তালিকাভূক্ত অন্যতম শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী নুরুল আবছার নুরশাদ।

সশরীরে থানায় হাজির হয়ে ওসি আবদুল মজিদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ফুল দেয়ার এ ছবি খুব দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রচার হলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেকেই এ ঘটনাকে টেকনাফ থানার ওসির ইয়াবাভক্তি কিংবা ইয়াবা ব্যবসায়ীপ্রীতি বলে মনে করছেন।

পুলিশে একটি সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ থানায় যোগদান করেন ওসি আবদুল মজিদ। এরপর থেকেই গোপনে সখ্যতা গড়ে তোলেন ইয়াবা ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের সঙ্গে। ফলশ্রুতিতে আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা। যদিও রহস্যজনক কারণে বেড়েছে মামলা দায়েরের সংখ্যা। অনেকে এ ঘটনাকে ওসির মামলা বাণিজ্য বলেই মনে করছেন।

সূত্রমতে, চলতি বছরের শুরুর মাস জানুয়ারিতে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি আতাউর রহমান খোন্দকার ৩৫ মামলা লিপিবদ্ধ করেন। এর বিপরীতে ওসি আব্দুল মজিদ প্রতিমাসেই মামলার সংখ্যা বাড়িয়েছেন। ফেব্রুয়ারি মাসে ৫৬টি, মার্চে ৫২টি, এপ্রিলে ৭৭টি ও চলতি মে মাসের আজ অবধি (২৯ মে) ৩৮টি মামলা লিপিবদ্ধ করেছেন।

অপরদিকে, শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসেই তৎকালীন ওসি গ্রেপ্তার করেছিলেন ১০৪ আসামিকে। আর ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বর্তমান ওসি গ্রেপ্তার করেছেন ২৩৬ জনকে। প্রতিমাসে যে হার আগের চেয়ে অনেক কম।

স্পর্শকাতর অথচ গুরুত্বপূর্ণ সীমান্তবর্তী এলাকার থানা হিসেবে টেকনাফের বর্তমান ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী। তিনি ওসি আবদুল মজিদকে অযোগ্য দাবি করে বলেন, ‘ওসি আবদুল মজিদ বৃদ্ধ ও বয়স্ক লোক। পাশাপাশি তিনি অসুস্থও। তার পক্ষে টেকনাফের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ থানার দায়িত্ব পালন করা অসম্ভব। কষ্টের ব্যাপারও।’

সাবেক এমপি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, ওসি আবদুল মজিদ টেকনাফে যোগদান করার পর থেকেই এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিরা প্রকাশ্যে বিচরণ করতে শুরু করেছে।

ইয়াবা ব্যবসায়ী ও মানবপাচারকারীরা ফিরে এসেছে এলাকায়। বেড়ে গেছে ইয়াবা পাচার। তাই বর্তমান ওসিকে অচিরেই প্রত্যাহার করে তার জায়গায় একজন সৎ ও যোগ্য ওসিকে স্থলাভিষিক্ত করা যেতে পারে।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘১৩ মে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা করে অস্ত্র লুট ও আনসার সদস্য হত্যা এবং একইদিন নাজিরপাড়ায় ৬ সাংবাদিকের ওপর হামলা করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এর আগে থেকে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেন উপজেলার শীর্ষ স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামিরা। সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান টেকনাফ থানার পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’

এসব অভিযোগকে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার বলে মনে করেছেন ওসি আবদুল মজিদ। তিনি নিজেকে সফল ওসি দাবি করে বলেন, ‘যোগদানের পর গত সাড়ে ৩ মাসে ১০ কোটি টাকার মাদক উদ্ধার করেছি। ২২৩টি মামলা লিপিবদ্ধ ও দুই শতাধিক পলাতক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি।’(বাংলামেইল)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৪:১৩ পিএম, ৩০ মে ২০১৬, সোমবার

এইউ

Leave a Reply