বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সব শিক্ষকদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা। শিক্ষকের মর্যাদায় এক অমূল্য হাদিস- যা হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করনে, `তোমরা জ্ঞান অর্জন কর এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য আদব শিষ্টাচার শিখ। তাঁকে সম্মান কর যার থেকে তোমরা জ্ঞান অর্জন কর। সুতরাং যার থেকে জ্ঞান অর্জন করা হয় তিনিই আমাদের শিক্ষক। শিক্ষকের মর্যাদায় ইসলামের বক্তব্য চাঁদপুর টাইমসে তুলে ধরা হলো-
বিশ্ব শিক্ষক দিবসের পটভূমি
১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ১৪৫টি সুপারিশের মাধ্যমে ইউনেস্কো শিক্ষকদের জন্য বিশ্ব শিক্ষক দিবসের দাবি তোলে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর বিশ্ব ব্যাপী পালিত হয় বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকের অবদানকে স্মরণ করার জন্য শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বের ১০০টি দেশে ‘এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল’ (Education International – EI) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রেখে দিবসটি পালন করে। যা শিক্ষকদের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার মহান অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।
শিক্ষকরা হলেন জাতির সুনাগরিক তৈরির করার কারিগর। ইসলাম শিক্ষকদের দিয়েছে এক অনন্য মর্যাদা। শিক্ষকদের মর্যাদা সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে ছিল ব্যাপক সমাদৃত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে, কুরআন নিজে শিখে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়া। (বুখারি) সুতরাং যিনি শিখান তিনিই তো শিক্ষক। এ হাদিস থেকেও প্রমাণ পাওয়া যায় যে, শিক্ষক সর্বোত্তম ব্যক্তি।
একবার হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সওয়ারিতে ওঠার জন্য রেকাবে পা রাখলেন। তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রেকাবটি শক্ত করে ধরেন। হজরত জায়েদ ইবনে সাবিত বললেন, হে রাসুলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চাচাতো ভাই, আপনি হাত সরান। উত্তরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, না, আলেম ও বড়দের সঙ্গে এমন সম্মানসূচক আচরণই করতে হয়।
জ্ঞানই মানুষের যথার্থ শক্তি ও মুক্তির পথনির্দেশ দিতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই বলেছেন, ‘আমাকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে।’ তিনি শিক্ষা, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক ও শিক্ষার ব্যাপকীকরণে সদা সচেষ্ট ছিলেন। তাইতো বদরের যুদ্ধবন্দিদের তিনি মদিনার শিশুদের শিক্ষা দেয়ার বিনিময়ে মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন, যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, একদিন জনৈক বয়স্ক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে হাজির হলে উপস্থিত সাহাবায়ে কিরাম নিজ স্থান থেকে সরে তাকে জায়গা করে দেন। তখন তিনি ইরশাদ করেন, `যারা ছোটদের স্নেহ ও বড়দের সম্মান করে না, তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।` (তিরমিজি)
ইসলামের দৃষ্টিতে শিক্ষকতা অতি সম্মানিত ও মহান পেশা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সামাজিক দায়িত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে শিক্ষকতার পেশা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে আমাদের সমাজে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে দেখা হয়।
দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত ও শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে দেখা যায়। যা অত্যন্ত ঘৃণ্য ও অমানবিক কাজ। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই আমার আপন নয়। সুতরাং আসুন হাদিসের অনুসরণ করি। শিক্ষকদের কে যথাযথ মর্যাদা দিই। শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের কবুল করুন। আমিন।
চাঁদপুর টাইমস-এ ধর্ম বিষয়ক লেখা পাঠাতে ই-মেইল : newschandpurtimes@gmail.com
চাঁদপুর টাইমস.কমের সঙ্গে থাকুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ || আপডেট: ০২:২৩ পিএম, ০৫ অক্টোবর ২০১৫, সোমবার
চাঁদপুর টাইমস : এমআরআর/২০১৫