ইলিশ উৎপাদনে জাটকা-মা ইলিশ সংরক্ষণ ও নতুন অভয়াশ্রম চিহ্নিতকরণ

জাতীয় মাছ ইলিশ আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। অনাদিকাল থেকে জাতীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও আমিষ জাতীয় খাদ্য সরবরাহে এ মাছ অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে।

দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১১% এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩.৮৭ লক্ষ মেট্রিক টন (২০১৪-১৫) যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫,৪৮০ কোটি টাকা।

জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১%।

বিগত কয়েক দশকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে নদ-নদীর নাব্য হ্রাস, পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচারে জাটকা নিধন ও অধিকমাত্রায় ডিমওয়ালা ইলিশ আহরণে ইলিশের উৎপাদন দ্রূত হ্রাস পাচ্ছিল। এ মাছের উৎপাদন সহনশীল পর্যায়ে বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা কৌশল যেমন-জাটকা সংরক্ষণ, সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ আহরণ নিষিদ্ধকরণ, অভয়াশ্রম স্থাপন ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠিত অভয়াশ্রমসমূহের জাটকা এবং প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলাফল, নতূন অভয়াশ্রম চিহ্নিতকরণ ও প্রতিষ্ঠা, বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রভাব নির্ণয় এবং ইলিশের আবাসস্থল নদী মোহনার ইকোলজীর ওপর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, নদী কেন্দ্র, চাঁদপুর হতে গবেষণা পরিচালিত হয়ে আসছে।

উক্ত গবেষণা ও সমীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ইলিশ উৎপাদনে জাটকা ও প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণের প্রভাব এবং নতুন অভয়াশ্রম চিহ্নিতকরণ বিষয়ে এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।

ইলিশ মাছের পরিপক্কতার মাত্রা প্রজননক্ষম মাছের পরিমাণ এবং প্রজননোত্তর মাছ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দু’টি প্রধান যথা: সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস সর্বোচ্চ এবং জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুম নিরূপণ করা হয়েছে। অবশ্য ইলিশ মাছ প্রায় সারা বৎসর কম-বেশী প্রজনন করে থাকে।

আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম নভেম্বর বা ডিসেম্বর মাস পর্যন্তও বর্দ্ধিত হতে পারে। অক্টোবর মাসের বড় পুর্ণিমার আগে ও পরে ইলিশের ডিমের ব্যাস ও পরিপক্কতার মান সর্বোচ্চ পাওয়া যায়। ইলিশ মাছ সাধারণতঃ সান্ধ্যকালীন সময়ে ডিম ছাড়ে। চন্দ্রের সংগে ইলিশের ডিম ছাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। পানির তাপমাত্রা ও অন্যান্য গুণাগুণের ওপর নিষিক্ত ডিম হতে রেনুপোনা উৎপাদিত হওয়ার সময় নির্ভর করে।

ইলিশের প্রধান চারটি প্রজনন ক্ষেত্র (ঢলচর, মনপুরা, মৌলভীর চর ও কালির চর দ্বীপ) সমন্বিতভাবে প্রায় ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রতি বৎসর ইলিশের প্রজনন মৌসুমে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার সময়, বড় পূর্ণিমার ৩দিন আগে ও ১১দিন পরে মোট ১৫ দিন ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল যা ২০১৬ সাল হতে ২২ দিনে উন্নীত করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রতিবৎসর নভেম্বর হতে মে মাস পর্যন্ত জাটকা ধরার মৌসুম হলেও মার্চ এবং এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ পরিমাণে (৬০-৭০%) জাটকা ধরা পড়ে। তাই নভেম্বর হতে মে মাস পর্যন্ত অভয়াশ্রম ঘোষণার প্রয়োজন হলেও জেলেদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, বিকল্প কর্মসংস্থান ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে ঘোষিত ৫টি অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়। এগুলি হলো- নিম্ন মেঘনা নদী ষাট নল থেকে চর আলেকজান্ডার, ১০০ কিলোমিটার, শাহবাজপুর চ্যানেল ৯০ কিলোমিটার, তেঁতুলিয়া নদী ১০০ কিলোমিটার, আন্ধার মানিক নদী ৪০ কিলোমিটার ও পদ্মা নদীর নিম্ন^াংশ শরিয়তপুর ২০ কিলোমিটার।

প্রজনণোত্তর ইলিশ মাছের সংখ্যা, শতকরা হার এবং পরীক্ষামূলকভাবে ধৃত লার্ভি ও রেণু পোনা এবং জাটকার প্রাচুর্য ইত্যাদি নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রজনন সাফল্যের মাত্রা নিরূপণ করা হয়েছে।

ফলাফল নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

প্রজনন মৌসুমে ২০১৫ সালে ১৫ দিন ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় প্রায় ১.৬৬ কোটি ইলিশ মাছ আহরণ হতে রক্ষা পেয়েছে। আহরণরহিত ইলিশ হতে প্রায় ৫,৯৯,৭২০ কেজি ডিম প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদিত ডিমের পরিস্ফুটনের হার ৫০% হিসাবে প্রায় ২,৯৯,৮৬০ কোটি রেণু উৎপাদিত হয়েছে এবং উক্ত রেণুর বাঁচার হার ১০% হিসাবে প্রায় ২৯,৯৮৬ কোটি পোনা/জাটকা চলতি বৎসর ইলিশ জনতায় নতূনভাবে সংযুক্ত হবে বলে ধারণা করা যায়।

ইলিশ উৎপাদনে অভয়াশ্রমের প্রভাব ও জাটকার প্রাচুর্য নির্ণয়ের জন্য নদী কেন্দ্র, চাঁদপুর হতে নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। পূর্বে নি¤œ পদ্মা নদীতে জাটকার প্রাচুর্য না থাকলেও সাম্প্রতিক কালে জাটকার তুলনামূলক প্রাচুর্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পদ¥া ও মেঘনা নদীর কিছু এলাকায় গবেষণা সমীক্ষায় জাটকার বিস্তৃৃতি ও প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। নি¤œ মেঘনা নদীতে নি¤œ পদ্মা নদীর তুলনায় জাটকার প্রাচুর্য বেশী।

সাম্প্রতিককালে গবেষণা সমীক্ষায় নি¤œ পদ্মায়ও প্রচুর জাটকা পাওয়া যায়। ফলে শরিয়তপুর জেলার পদ্মা নদীর নি¤œ অংশে ২০ কি:মি: এলাকায় বর্ণিত সীমানায় জাটকা ইলিশের ৫ম অভয়াশ্রম ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।

অব্যাহত গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে জাটকার প্রাচুর্যতা পর্যবেক্ষণ এবং পানির গুণাগুণ পরীক্ষা নিরীক্ষার ভিত্তিতে জাটকার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হয়ে বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার নাছাকাটি পয়েন্ট, হরিনাথপুর পয়েন্ট ও ধুলখোলা পয়েন্ট এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার ভাষানচর পয়েন্ট অঞ্চলে মেঘনার শাখা নদী হিজলা উপজেলার ধর্মগঞ্জ ও নয়াভাঙ্গানী নদী এবং মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা নদীর ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ইলিশ/জাটকার নতুন (৬ষ্ঠ) অভয়াশ্রম ঘোষণার প্রস্তাব মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

বিজ্ঞানীদের সরেজমিন পরিদর্শন, যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নতুন ঘোষণাযোগ্য এলাকার জিপিএস পয়েন্ট ও সীমানা নির্ধারণ করা হয়।

সারণী- ৪ এ নতুন প্রস্তাবিত অভয়াশ্রমের জিপিএস পয়েন্ট ও সীমানা সন্নিবেশিত করা হলো। অর্থাৎ বিগত তিন বছরের পর্যবেক্ষণে ধারাবাহিকভাবে জাটকার প্রাচুর্য এবং পানির গুনাগুণসহ অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার সকল বৈশিষ্ট পুরণ হওয়ায় এ অঞ্চলকে অভয়াশ্রম ঘোষণার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

গবেষণা ফলাফলের উপর ভিত্তি করে প্রতি বছর ইংরেজী মাসের (১৫ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর) পরিবর্তে আশ্বিনের প্রথম উদিত চাঁদের বড় পূর্ণিমার পূর্বের ৫দিন, পরের ৫দিন ও পূর্ণিমার দিনসহ মোট ১১দিন ইলিশের সর্বোচ্চ প্রজননকাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং উক্ত সময়ে প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়। বর্তমানে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

কিন্তু ২০১২ সালে আশ্বিনের বড় পূর্ণিমা হয় ৩০ সেপ্টেম্বর (১৫ আশ্বিন) এবং এর পরবর্তী পূর্ণিমা হয় ২৯ অক্টোবর (১৪ কার্তিক)। তখন ইলিশের প্রধান প্রধান প্রজনন এলাকায় (মনপুরা, মৌলভীরচর, কালিরচর, ঢালচর) গবেষণা পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে, ৩০ সেপ্টেম্বরের পূর্ণিমাতে প্রাপ্ত প্রজননত্তোর ইলিশের শতকরা হার ছিল ৩৫.৭৯% এবং ২৯ অক্টোবরের পূর্ণিমাতে ছিল ৩২.১৯%।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, ইলিশ মাছ আশ্বিন মাসের বড় পূর্ণিমাতে অপেক্ষাকৃত বেশী সংখ্যক ডিম ছাড়লেও পূর্ণিমার অব্যবহিত পরেও ডিম ছাড়া বহুলাংশে অব্যাহত থাকে।

আশ্বিনের বড় পূর্ণিমার অব্যবহিত পরের সময়কেও ডিম ছাড়ার ২য় সর্বোচ্চ সময় হিসেবে বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১১ সালেও আশ্বিনের বড় পূর্ণিমা ছিল ১১ অক্টোবর (২৬ আশ্বিন) এবং তখন প্রাপ্ত ঝঢ়বহঃ ইলিশের হার ছিল ৩৬.২৭%। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে প্রজনক্ষম ইলিশের ডিম ছাড়ার (৪১.০২%, ৩৮.৭৯% ও ৩৬.৬৬%) সময় নির্ধারণ সঠিক ছিল।

পরবর্তীতে মাত্র একটি সংশোধনী এনে ২০১৫ সালে আশ্বিনের প্রথম উদিত চাঁদের বড় পূর্ণিমার পূর্বের ৩দিন, পরের ১১ দিন ও পূর্ণিমার দিনসহ মোট ১৫ দিন প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।

গবেষণায় আরও লক্ষ্য করা গেছে যে, পূর্ণিমার অব্যবহিত পূর্বের দিনগুলির চেয়ে পূর্ণিমার অব্যবহিত পরের দিনগুলিতে ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রবণতা অপেক্ষাকৃত বেশী থাকে।

এ প্রেক্ষিতে পূর্বেকার সময়ের ইলিশের ডিম ছাড়ার প্রবণতা, প্রজনন হার, প্রজনন ক্ষেত্রে Spent বা প্রজননত্তোর ইলিশের প্রাচুর্যতা ইত্যাদি বিশ্লেষণ পূর্বক ইলিশের সর্বোচ্চ ডিম ছাড়ার মৌসুম এবং প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকরণের সময় আরও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে পূনঃনির্ধারণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

এক্ষেত্রে ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় নির্ধারণের বিষয়টি এ বছর (২০১৬ সাল) থেকে নি¤œরূপভাবে পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ আশ্বিনের প্রথম উদিত চাঁদের বড় পূর্ণিমার পূর্বের ৪দিন, পরের ১৭ দিন ও পূর্ণিমার দিনসহ মোট ২২ দিন প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ থাকবে মর্মে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এতে ধারণা করা যায় যে, ইলিশের প্রজনন সফলতা আরো বাড়বে এবং এতে প্রায় প্রতি বছর গড়ে ২৯ হাজার কোটি জাটকা ইলিশ জনতায় যুক্ত হবে। এতে করে সামগ্রিকভাবে দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ইলিশ সম্পদ রক্ষার জন্য সরকার কর্তৃক গবেষণা কার্যক্রম ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমের ফলে ইলিশ মাছের ০৫টি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা, ইলিশের প্রজননক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ, প্রজননকাল নির্ধারণ, জাটকা ধরা নিষিদ্ধকরণ, ডিমওয়ালা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম, ইলিশ জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ ও খাদ্য সহায়তা প্রদানসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।

এতে করে ইলিশ সংরক্ষণের পাশাপাশি উৎপাদন দ্বিগুন হয়েছে। জেলে সমাজের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটছে। এ ছাড়া নদীর প্রাকৃতিক জৈব বৈচিত্রতা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিকভাবে ইলিশ সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে গতিশীলতা চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশে ১৯৮৩-৮৪ সাল হতে ইলিশ মাছের উৎপাদন বিষয়ক তথ্য মৎস্য অধিদপ্তরের ফিশারীজ রিসোর্স সার্ভে সিস্টেম (ঋজঝঝ) কর্তৃক ধারাবাহিকভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

তথ্য অনুযায়ী বিগত ২০০১-০২ সালে ইলিশ আহরণের পরিমাণ ছিল ২,২০,৫৯৩ মে.টন। ২০০১-০২ সালের তুলনায় ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ সালে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা কৌশোল বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৩.৫১ লক্ষ মে.টন (প্রায় ৫৯.৫৫%), ৩.৮৫ লক্ষ মে.টন (৭৫.০০%) এবং ৩.৮৭ লক্ষ মে.টনে (৭৫.৪৮%) দাঁড়িয়েছে এবং সামগ্রিকভাবে ইলিশ জনতা সুষম হয়ে আসছে। হারিয়ে যাওয়া ইলিশ (চন্দনা ও গুর্তা) কিছু কিছু আসতে শুরু করেছে এবং জীব বৈচিত্র সংরক্ষিত হচ্ছে।

সুপারিশমালা :

বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি অবলম্বন তথা- জাটকা সংরক্ষণ, অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা ও প্রজননক্ষেত্রে প্রজননক্ষম ইলিশ ধরা নিষিদ্ধকরণের ফলে ইলিশের উৎপাদন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রতি বছরই বিভিন্ন নদ-নদীতে জাটকার আধিক্যও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

চলমান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকলে আগামী ৫ বছরে ইলিশের মোট উৎপাদন বেড়ে গিয়ে প্রায় ৪.০ লক্ষ মে. টনে সহনশীল পর্যায়ে দাঁড়াতে পারে।

১. ইলিশ মাছের চলাচলের গতিপথ নিরাপদ ও প্রতিবন্ধকতাহীন রাখতে নদীর নাব্যতা নির্ণয়, নাব্যতা অপসারণের লক্ষ্যে বিআইব্লিউটিএ, ডিএই, হাইড্রোলজি ডিপার্টমেন্ট সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সহযোগে ড্রেজিংসহ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

২.ইলিশের প্রজননক্ষেত্র, প্রজননকাল, অভয়াশ্রম, ইলিশের গতিপথ, ইলিশের প্রাচুর্য্যতা চিহ্নিত করে আইটি ডিপার্টমেন্টসহ সরকারের যথাযথ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সহযোগে পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল জিপিএস ম্যাপ প্রস্তুত করা প্রয়োজন। যা গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের গাইড ম্যাপ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

৩.ইলিশের উৎপাদন, সংরক্ষণের জন্য আইন রক্ষাকারী সংস্থার কার্যক্রমকে জোরদারকরণ।
.
৪.ইলিশের প্রজননক্ষেত্র এবং জাটকার বিচরণক্ষেত্রের কোন পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে অব্যাহত গবেষণা প্রয়োজন।

৫.নূতন প্রজননক্ষেত্র এবং বিচরণক্ষেত্র সনাক্তকরণের জন্যও গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। ইলিশের মাইগ্রেশন, মাইগ্রেটরী রুটের ওপর শুধু নদী নয় বঙ্গোপসাগরেও গবেষণা সম্প্রসারণ করা দরকার।

৬.বঙ্গোপসাগরে গবেষণার জন্য মৎস্য অধিদপ্তরের অনুসন্ধানী জাহাজের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সূদূর প্রসারী গবেষণা পরিকল্পনা গ্রহণ এবং আরো উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশোল উদ্ভাবন করা প্রয়োজন।

৭.বঙ্গোপসাগর, উপকূলীয় এলাকা, ইলিশ সম্পর্কিত সকল নদ-নদীতে ইলিশের ব্যাপক গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। এ প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি জনবলের দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য প্রশিক্ষণও প্রয়োজন।

৮.বঙ্গোপসাগর এবং দেশের ইলিশ সম্পর্কিত নদ-নদীতে একই সাথে ইলিশের মজুদ নিরুপনে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন। ইলিশের আবাসস্থল নদ-নদী ও মোহনার পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে সহনশীল মাত্রায় ইলিশের উৎপাদন বজায় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৯.পাশাপাশি ভবিষ্যতে নির্দিষ্ট আকারের বড় ইলিশ ধরার জন্যে জালের ফাঁসের আকার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।

১০.ইলিশ ধরার জন্য বিভিন্ন প্রকার জাল, নৌকা ও ইলিশ উৎপাদনে নির্ভরশীল পরিসংখ্যান নিরুপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

১১.ইলিশ বিষয়ক গবেষণায় আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক ও আঞ্চলিক সহযোগীতা বৃদ্ধি আবশ্যক।

১২.জাটকা সংরক্ষণের সফল বাস্তবায়নের জন্য জেলেদের খাদ্য সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থান কার্যক্রম উপকূলের ইলিশ সম্পর্কিত সকল জেলা এবং উপজেলায় সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

১৩.সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে প্রজননক্ষম ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ইলিশ সম্পর্কিত সকল নদ-নদীর সাথে বঙ্গোপসাগরকে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন।

১৪.সেই সাথে উপকূল ও সমুদ্র এলাকায় ইলিশ সংরক্ষণজনিত আইন বাস্তবায়ন, মনিটরিং এবং সার্ভিলেন্স জোরদার করা প্রয়োজন।

লেখক : ইলিশ গবেষক, নদী কেন্দ্র, চাঁদপুর ।

:  আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:০০ এএম,  ৩০ মে  ২০১৬, সোমবার

এজি/ডিএইচ

Share