জাতীয় শোক দিবস কাল । ১৯৭৫ সালের এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গকে নৃশংসতম ভাবে হত্যা করা হয় । ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকা- এটি । সপরিবারে প্রাণ হারান বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের স্মরণ করি। হৃদবিদারক এ হত্যাকারে আজ ৪৭ বছর পূর্ণ হলো। ইতিহাসের ঘৃণ্য এ হত্যাকান্ডের বিচরের রায় কার্যকর করা পর জাতি কলংকমুক্ত হলো। ‘ বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কেঁদে ’এর অবসান হয়েছে ঘাতকদের ফাঁসির মধ্য দিয়ে। তবে এখনো মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ক‘জন ঘাতক বিদেশে এখনও পালিয়ে রয়েছে।
জাতির জনকের সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্য ও,আদর্শ ,বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও স্বপ্ন সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই ঘটানো হয়েছিল ১৫ আগস্টের ট্র্যাজেডি। জাতীয় শোক পালনের ৪১ বছরের মাথায় এসে জাতি পরিষ্কারভাবে বুঝতে পেরেছে ঘাতকদের লক্ষ্য ছিল শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করাই নয় বরং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাব ্র বাংলাদেশকেই ধ্বংস করে দেয়া।
১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় একই বছরের ৩ নভেম্বর কারা অভ্যন্তরে হত্যা করা হলো বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহচর ৪ জাতীয় নেতাকেও। এটাও একটা মর্মস্পর্শী হত্যাকান্ড।
১৯৭১-এর পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ গ্রহণের যে প্রক্রিয়া তারই একটি ভয়ঙ্কর পরিণতি ঘটে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধ’র হত্যাকন্ডের মধ্যদিয়ে। । স্বাধীন বাংলার স্থপতিকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা খুনিদের যাতে বিচার না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে।স্বÑ^ঘোষিত খুনিরা পরবর্তী সময়ে নির্বিঘেœ দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় । এদের কেউ কেউ বিদেশে মিশনে চাকরি পেয়ে পুরস্কৃত হয়।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিলের আগ পর্যন্ত ২১ বছর স্বঘোষিত খুনিরা বিচারের আওতা থেকে মুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ই প্রথম এর বিচার ক্রার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৮-এ দায়রা জজ আদালতের দেয়া ১৫ জনের মৃত্যুদন্ডের রায় পরবর্তী সময়ে হাইকোর্র্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে পুনর্মূল্যায়িত হয় এবং ১২ জনের মৃত্যুদ-াদেশ বহাল থাকে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর হাইকোর্টে আপিল বিভাগে একজন বিচারক নিয়োগের ফলে মামলাটির শুনানির পথ উন্মুক্ত হয় এবং ২০০৭-এর ৮ আগস্ট এ মামলার কার্যক্রম আবার শুরুহয়। বর্তমান সরকারের সময়ে আপিল বিভাগে ৪ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার পর মামলাটির কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয় এবং চূড়ান্ত নিষ্পত্তি সম্পন্ন হয়।
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিল করে পরবর্তী সরকার । এতে চরম বিদ্বেষ ও সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছিল তৎকালীন সরকার । সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাইকোর্র্টের এক রায়ে তা আবার পুনর্বহাল করা হয়েছে। ২০০৮-এর ১৫ আগস্ট থেকে বঙ্গবন্ধুর শাহাদৎ বার্ষিকীর দিন জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে ও বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা দিয়ে এ দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালন এবং জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার রেওয়াজ চালু হয়।
প্রতিবছর জাতীয় শোক দিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন। দেশের জাতীয় গণমাধ্যমে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা ও কমৃসুচি পালনের মধ্য দিয়ে জাতি দিবসটি যথাযথভাবে পালন করে থাকে। প্রিন্টিং মিডিয়াতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়।
চাঁদপুরের সর্বত্র ১৯৭৫ সালের এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গকে নৃশংসতম হত্যার দিন টি পালিত হচ্ছে ।
আবদুল গনি
১৪ আগস্ট ২০২৩