Home / সারাদেশ / দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে ইউপি নির্বাচন
ইউপি নির্বাচন

দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে ইউপি নির্বাচন

সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটয়ে অবশেষে দলীয় প্রতীকেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। অন্তর্দলীয় কোন্দল এবং বিদ্রোহী প্রার্থী সামলাতে ইউপি নির্বাচন নির্দলীয়ভাবে করার চিন্তা থাকও আপাতত সেই ভাবনা থেকে সরে এসেছে সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করতে চাচ্ছে। এখনই দলীয় প্রতীক থেকে সরে আসার কথা ভাবছেন না তারা।

আর আপাতত প্রতীক পরিবর্তনের জন্য আইন পাস করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। এর ফলে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠেয় ইউপি নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকেই হবে।

সূত্র মতে, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক থাকছে কি না- এ নিয়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পক্ষে-বিপক্ষে মতামত তুলে ধরছেন কেউ কেউ। তবে দলীয় প্রতীক তুলে দিয়ে নির্দলীয় নির্বাচন করতে যে আইন পাস করা প্রয়োজন সে সময় এখন নেই।

১১ ফেব্রুয়ারি গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘আইন সংশোধন করার সুযোগ নেই। দরকারও নেই। যে আইন-বিধি আছে তা যথেষ্ট।’ একই সময় নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘যে আইনে নির্বাচন করি, সেটি স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রণীত। স্থানীয় সরকার বিভাগ যতক্ষণ পর্যন্ত আইন সংশোধন না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আইনে যা আছে সে অনুযায়ী ভোট করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, নির্দলীয় নির্বাচন কেবলই আলোচনা। বাস্তবে নির্বাচন দলীয়ভাবেই হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট বর্জন করার কারণে এই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। এই অবস্থায় দলীয় প্রতীকে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা লক্ষ্য ছিল। এই হিসাব কষে ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে মাঠপর্যায়ে দলের ভিত মজবুত হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সাংগঠনিক ভিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক ফল দেয়। যার সুফল আওয়ামী লীগ পেয়েছে। তারা আরো বলছেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে গিয়ে ছোটখাটো সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের জন্য এটা তেমন কোনো ঘটনা নয়। আর আওয়ামী লীগই দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা চালু করেছে। এখনই তুলে দেওয়ার পক্ষে নয় তারা।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, “দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার আইন আওয়ামী লীগ সরকারই পাস করেছে। ছোটখাটো ঝামেলা হলেও দলীয় প্রতীকে ভোট গ্রহণ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। খুব নিকট ভবিষ্যতে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার আলামত দেখছি না।”

দলের একাধিক সূত্র জানায়, সম্প্রতি দলের স্থানীয় সরকারের মনোনয়ন বোর্ডে একজন সিনিয়র সদস্য আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার পক্ষে মতামত তুলে ধরেন। তবে সেই আলোচনায় সাড়া দেননি দলীয় সভানেত্রী ও মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়া হবে- এমন কোনো সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামে হয়নি। চলতি মাসের শেষে কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আছে। সেখানে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে।’

সূত্র মতে, এই মুহূর্তে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে আইন পরিবর্তন করতে হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ এই আইন সংশোধনীর সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে। স্থানীয় সরকার বিভাগ যতক্ষণ পর্যন্ত আইন সংশোধন না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত বিদ্যমান আইনে যা আছে সে অনুযায়ী ভোট করতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কোনো কাজ শুরু করেনি।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তুলে দেওয়ার কোনো নির্দেশনা স্থানীয় সরকার বিভাগ পায়নি। সুতরাং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক তুলে দিতে হবে এমন কোনো কাজ বা আইন সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।’

ঢাকা ব্যুরো চীফ,১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১