আশিক বিন রহিম-এর একগুচ্ছ কবিতা

ত্রিশ বসন্ত

ত্রিশতো পেরিয়ে গেলো…
নরম ঠোঁট, লিপস্টিকের ঘ্রাণ, কোমল বাহু কিছুই ডাকেনি আজো;
প্রণয়ের ঘর স্পর্শ করেনি হলুদ খাম, নীল পদ্ম- খেয়ালী বাতাস।

ত্রিশ মানে অনেকগুলো বোশেখ, পহেলা ফাল্গুন,
রঙিন চুড়ির ঝংকার, নরম হাত- টুকটুকে লাল গোলাপের
অদেখা তৃষ্ণা; নির্জন রাত শূন্যতার-দীর্ঘশ্বাস।

ত্রিশ পেরিয়ে যায়…
কালো চুল, নারকেলী ঘ্রাণ, ওড়নার সুখস্পর্শ-দহনপ্রীতি
কিছুই হয়নি জানা; নিশ্চুপ বাতাসের মতোন কেউ এসে বললো না-
ভালোবেসে আজ দুর্বাঘাসের মাচায় গা ভাসাই চলো।

গোপন মুখোশ

ভুখা শিশুর ক্ষুধার্ত হুংকার শুনি-
নাইট ক্লাবের মাতাল বেহালার সুর।

যে চোখে ফুলের কান্না আঁকি-ডেন্ডির ছোবলে
নিস্তেজ পথশিশুর কংকাল দেহ; সেই চোখে-
হাসতে দেখি উন্নত স্কুলের পুস্পকলি।

এইখানে একদিন সঙ্গম দেখি ফুল-শ্রদ্ধা শহীদ বেদিতে;
বাকি দিন বেকুব চপলের স্পর্শ দেখি কংক্রিটের বিবেক হয়ে।

আমি চাই এখানে আবারো আগুন জ্বলুক- হাসুক রক্ত ফুল,
প্রতিটি কলমের তলায় পিষ্ট হয়ে থেঁতলে যাক নষ্টমুখ-গোপন মুখোশ।

বড্ড অসুন্দর

এখানে পাহাড় ছুঁয়েছে আকাশ-
নিল মেঘের সাথে মিতালি তাঁর।

ঝাউবনের ফাঁকে সূর্যের লুকোচুরি-
শাফেদ বালির বুকে আছড়ে পড়ে ঢেউ;
দেখি সঙ্গমলীলা!।

এখানের সুন্দর সব পাহাড়-অরণ্য-
সমুদ্র পাড়ে সুউচ্চ ভবন;
শুধু ভাগ্যাহত ঝিনুক-কন্যাদের কচি মুখগুলো
বড্ড অসুন্দর!।

মেঘ আইলে মাইষেরা আঁশে

মেঘ আইলে জয়তনেগো ঘরের চাল টোপাইয়া পানি পরে
মুলির বেড়া আর মাডির পিরা চুআইয়া পানি আহে।

মেঘ আইলে জয়তনের মা’র চোখ টোপাইয়া পানি পরে
গাল চুআইয়া পানি-গালা বাইয়া বুক চাডে।

মেঘ আইলে জয়তনের মা’র কাঁন্দন আল্লায় হুনে না,
জয়তনে ভিজা শইল্লে সুখ পায়, আসে-জ্বরে কোয়ায়
আর আল্লারে মা’রে এক লগে ডায়ে।

মেঘ আইলে মাইষেরা গরুর কইলজা দিয়া খিচুরী খায়
টিবি চায়; বেহুলার দুখ দেইখা চোহের পানির হালায়।

মেঘ আইলে জয়তনের পেডে খিদারা ডায়ে আর-
হের মা’য় ভাতের খুইজ্জা কম দামে শইল বেচে।

মেঘ আইলে মাইষেরা আঁশে আর মাইষেরা কাঁন্দে।

গোলাপ আমিও ফোটাতে জানি

রাবেয়া খানম;
ওপাড়ার যুবাদের মতোন রক্ত গোলাপ আমিও ফোটাতে জানি
ঝিল থেকে পদ্ম এনে আমিও আঁকতে জানি খোঁপা।

এই যে নোনাঘাম সিক্ত হাত দেখছো তুমি
এই হাতেও কলম চালাতে জানি, লিখতে পারি কবিতা
আর ভাঁজ করে দিতে জানি চিঠি, হলুদ খামে।

আমার রোদ্রে পোড়া ধূষর ঠোঁট দেখে অযথা তুমি
বুনতে যেওনা ভাবনার নক্শি কাঁথা,
তুমিতো জানো চুম্মন শিখতে মক্তবে যায় না পুরুষ!

তুমি ফুল চিনো, গোলাপ ক্যাকটাস গ্লাডিয়েস দেখেছো
শুনেছি নাইট কুইনের সাথে সখ্যতা আছে বেশ
অথচ কচুরী ফুলের রং জানা নেই তোমার।

পারফিউম চিনো তাই বড়ি স্প্রে আর এয়ার ফ্যাসনার খোঁজ
শুধু বোঝ না, কাঁদা মাটি সেদ্ধ ধানেও সুগন্ধি আছে
ঘন্ধ আছে পাটের আঁশ আর সবুজ ঘাসেও।
রাবেয়া খানম
ক্ষেতের আইল গুঁড়িয়ে দুটি আবাদি জমি এক হয়ে
ফসল ফলাতে আমিও দেখেছি, যেমন করে দেখেছি-
পাহাড়ের জলকে সাগর জড়িয়ে নেয় বুকে।

শুধু এটুকু দেখিনি
আকাশের চাঁদ কখনো মাটিতে দোলাতে পা।

নিরাশার ভারী নিঃশ্বাস

দিন যায়…
যেতে যেতে অনেক সময় মাস বছর
সূর্য ওঠে, অস্ত যায়
মেঘেঢাকা চাঁদও হাসে অতঃপর

পা’জোড়া চলে…
চলতে চলতে ক্লান্তদেহে উৎপাদিত হয়
নিরাশার ভারী নিঃশ্বাস
তারপর স্বপ্নের লাশ কফিনবন্ধি করে
লোনা-জলের পেরেক মারি শক্ত হাতে

কালিও শেষের পথে-
পাঁচটি আঙুল নুয়ে পড়ে কলমের ভারে
নুয়ে পড়ে বিবেক ও বিশ্বাস

সত্তার মৃত্যু হবে তাই
বাস্তবতার এত আনন্দ উল্লাস!

]আশিক বিন রহিম[/author]

||আপডেট: ০৪:১২  অপরাহ্ন, ২৮ মার্চ ২০১৬, সোমবার

চাঁদপুর টাইমস /এমআরআর

Share