রাজধানীর আশকোনায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘিরে চলা অভিযান প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার একটু পরে নিচতলা বাসার দরজা খুলে গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন এক নারী।
কীভাবে ওই ‘জঙ্গি’ নারী বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন, উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দফায় ওই বাড়ির নিচতলার বাসা থেকে চারজন আত্মসমর্পণ করেন। এই চারজন হলেন মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি ও সাবেক মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা, তাঁর মেয়ে এবং পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তাঁর মেয়ে। আরও তিনজন ওই বাসায় ছিল। তাদের বের হওয়ার জন্য পুলিশ এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় দিয়েছিল। বারবার তাদের হ্যান্ডমাইকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা তাতে সাড়া দেয়নি।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, তিনি ওই বাড়ির গাড়ি পার্কিংয়ের পিলারের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তিনি দেখতে পানে বোরকা পরা একজন নারী বাঁ হাতে একটি মেয়েশিশুকে ধরে বাসার দরজা খুলে বাইরে এসেছেন। ওই দুজন পার্কিংয়ের দিকে আসছিলেন। তখন তিনি তাঁদের দাঁড়াতে বলেন। বারবার বলেন হাত তুলতে। কিন্তু ওই নারী দাঁড়াননি। তিনি শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করেন।
একপর্যায়ে বাঁ হাতে শিশুটিকে ধরে রেখে ডান হাত ওপরের দিকে তোলার মতো ভঙ্গি করেন। তবে তখন তিনি কোমরে রাখা বিস্ফোরকে চাপ দেন। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে।
‘সূর্য ভিলা’ নামের বাড়িটি ঘিরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাড়ির মালিকের বড় মেয়ে জোনাকি রাসেল বলেন, তাঁর বাবা মোহাম্মদ জামাল হোসেন বাড়িটির মালিক। তিনি কুয়েতপ্রবাসী। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। তিনি বাবার বাড়ির কাছেই আরেকটি বাড়িতে থাকেন।
বাসা ভাড়া দেওয়া ও অন্যান্য বিষয়ে জোনাকি রাসেল বলেন, তাঁর বাবার বাড়িতে টু-লেট টাঙানো ছিল। গত ১ সেপ্টেম্বর মো. ইমতিয়াজ আহমেদ পরিচয় দিয়ে একজন নিচতলার বাসাটি দেখতে আসেন। তখন ওই ব্যক্তি নিজেকে অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দেন এবং বলেন যে বাসায় তিনি, তাঁর স্ত্রী ও এক বাচ্চা থাকবে। মাঝেমধ্যে স্ত্রীর বোন এসে থাকবেন। ১০ হাজার টাকায় তিনি বাসাটি ভাড়া নেন। ৩ সেপ্টেম্বর পরিবার নিয়ে তিনি সেখানে ওঠেন।
বাড়িওয়ালার মেয়ে দাবি করেন, বাসা ভাড়া দেওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবার ওই বাসায় গেছেন। বাসায় ল্যাপটপ, খাট, ড্রেসিং টেবিল, ফ্রিজ দেখেছেন। তিনি বলেন, ‘উনারা কখনো বের হতেন না। বাসায় ওঠার সময় বাচ্চার বয়স ছিল ৪০ দিন।’ কেন বের হন না?—জানতে চাইলে বলতেন, হিজড়ারা বাচ্চা দেখলে টাকা চায়। সে কারণে বের হন না। তিনি বলেন, ‘মাঝে মাঝে দুজন নারী ওই বাসায় আসতেন। জিজ্ঞেস করলে বলতেন, মা ও এক আত্মীয়। গ্রামের বাড়ি থেকে এসেছেন।’
বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় পরিবারটি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিয়েছে, ভাড়াটে সংক্রান্ত ফরম পূরণ করেছে এবং সে ফরম থানায় জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানান জোনাকি রাসেল।
পুলিশের অভিযান শুরুর বিষয়ে বাড়িওয়ালার মেয়ে বলেন, গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার পুলিশ তাঁর বাবার বাড়িতে নক করে। তাঁর মা নিচে নেমে যান। তখন পুলিশ তাঁর কাছে নিচতলার ভাড়াটে সম্পর্কে জানতে চায়।
তখন তিনি পুলিশকে বলেন, তাঁর বড় মেয়ে (জোনাকি রাসেল) সব জানেন। তখন তাঁর মা পুলিশকে নিয়ে তাঁর বাসায় যান। তখন তিনি ভাড়াটেদের কাছ থেকে নেওয়া সব কাগজপত্র পুলিশকে দেন। এরপর পুলিশ চলে যায়।
আশকোনায় হাজিক্যাম্পের কাছে বাড়িটি ঘিরে গতকাল দিবাগত রাত থেকে অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই বাড়ি থেকে দুই শিশুকে নিয়ে দুজন নারী আত্মসমর্পণ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের ঘটনাস্থল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেনের ভাষ্য, আত্মসমর্পণকারী চারজন হলেন মিরপুরের রূপনগরে পুলিশের অভিযানে নিহত জঙ্গি ও সাবেক মেজর জাহিদের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলা ও তাঁর মেয়ে এবং পলাতক জঙ্গি মুসার স্ত্রী তৃষ্ণা ও তাঁর মেয়ে। বাসার ভেতরে এখনো তিনজন ‘জঙ্গি’ রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন আজিমপুরে অভিযানে নিহত জঙ্গি তানভীর কাদেরির ছেলে। (প্রথম আলো অবলম্বনে)
ভিডিতে দেখুন-
নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৬ : ১০ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৬ শনিবার
ডিএইচ