আন্তর্জাতিক

আলোচিত ফাস্র্ট লেডি এমনি এরদোগান সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সহধর্মিণী এমিনে এরদোগান শুধু দেশের ফার্স্ট লেডি হিসেবেই পরিচিত নন। নিজ দেশে রাজনীতি ও অন্যান্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার পাশাপাশি দেশের বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং এখনো রয়েছেন তিনি।

ফার্স্ট লেডি হিসেবে খুব বেশি পর্দার সামনে না এলেও বাল্যবিবাহ রোধ, নারী শিক্ষা ও নারী অধিকার নিশ্চিতকরণ নিয়ে দেশ-বিদেশে কাজ করা এবং ত্রাণ ও মানবিক সহায়তায় ভূমিকা রেখে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন এমিনে। এর জন্য আন্তর্জাতিক কিছু সম্মাননাও পেয়েছেন।

২০১০ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানে হওয়া বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের দেখতে এমিনে নিজেই পাকিস্তানে যান এবং বন্যাপীড়িতদের সহায়তায় বড় একটি তহবিল জোগাড়ে সাহায্য করেন। এই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ওই বছরের ৭ ডিসেম্বর দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ ইউসুফ রাজা গিলানি এমিনেকে ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’ সম্মাননায় ভূষিত করেন।

এছাড়াও ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে ক্রানস মনটানা ফোরাম এমিনের সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে ‘প্রিক্স দে লা ফনডেশন’ প্রদান করে।

এমিনে এরদোগান-রোহিঙ্গা
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আহ্বান জানানোর পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত ক্যাভুফোগলুকে সঙ্গে নিয়ে এমিনে রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে বুধবার বাংলাদেশে এসেছেন। এই দু’জন বৃহস্পতিবার কক্সবাজার ও টেকনাফের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন। উখিয়ায় ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দেন। রোহিঙ্গাদের স্থান দেয়ায় বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ জানান তারা।

গুলবারান থেকে এরদোগান
এমিনের জন্ম ইস্তাম্বুলের উস্কুদারে ১৯৫৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি এমিনে গুলবারান হিসেবে। তিনি ‍তুরস্কের আদি আরব বংশোদ্ভূতদের একজন।
এমিনের পরিবার তুরস্কের সিরতে প্রদেশের স্থানীয় অধিবাসী। সিমাল এবং হাইরিয়ে গুলবারানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সবচেয়ে ছোট এবং একমাত্র কন্যা সন্তান।

এমিনে ইস্তাম্বুল মিথাত পাশা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ফর গার্লস থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছেন। বেশ কমবয়স থেকেই সমাজকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড এবং পরে নারী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। আইডিয়ালিস্ট উইমেন’স এসোসিয়েশন নামের নারী অধিকার ও নারী রাজনীতি বিষয়ক দলটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন হলেন এমিনে গুলবারান। দলটির নামকরণও তিনিই করেছিলেন।এমিনে এরদোগান-রোহিঙ্গা

দলটির সঙ্গে কাজ করা অবস্থায় এমিনে নিয়মিত ন্যাশনাল টার্কিশ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন এবং লেডিস ফাউন্ডেশন ফর সায়েন্স অ্যান্ড কালচার – এ সংগঠন দু’টোর বিভিন্ন আয়োজন নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতেন। একটা পর্যায়ে লেখক সুলে ইউকসেলের কাছে একটি সাক্ষাৎকার দেয়ার পর তারই প্রেরণায় পুরোদমে সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

এই সময়টাতেই রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে পরিচয় হয় এমিনের। পরিচয় থেকে ভালোলাগা এবং অতঃপর ১৯৭৮ সালের ৪ জুলাই দু’জনের বিয়ে।

বিয়ের পর এরদোগান ইস্তাম্বুলের প্রাদেশিক প্রধান নির্বাচিত হলে এমিনে এরদোগান তুরস্কের ওয়েলফেয়ার পার্টি বা রেফাহ পার্টির প্রোভিন্সিয়াল উইমেন’স ব্রাঞ্চ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বোর্ড-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। রেফাহ পার্টি পরে আদালতের নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও বলা হয়, এর মধ্য দিয়ে এমিনে তুরস্কে নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণের পথ সুগম করে দিয়েছিলেন। রেফাহ পার্টির সদস্য থাকাকালে তিনি একটি নারী আন্দোলনেরও ডাক দেন, যা ওই সময় দলটির নির্বাচনে সাফল্য অর্জনের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান ইস্তাম্বুল মেট্রোপলিটান মিউনিসিপ্যালিটির মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এমিনে পুরোদমে সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে অংশ নিতে শুরু করেন। তুরস্কে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে একত্রিত করে ধনী-গরীবের মিলিত ইফতার আয়োজনের প্রচলনে বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। রেফাহ পার্টি বন্ধ হওয়ার পর গঠিত জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) নেতারা এখনো এই প্রথা চালু রেখেছেন।

বর্তমানে একে পার্টির সরাসরি সদস্য না হলেও প্রচ্ছন্নভাবে দলটির কাজকর্মে এমিনের অংশগ্রহণ রয়েছে বলে তুরস্কের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট এরদোগানের শক্ত অবস্থানের পেছনে রয়েছে স্ত্রী এমিনের শক্ত হাত। যদিও অন্যান্য দেশের ফার্স্ট লেডিদের তুলনায় তিনি সামনে আসেন কম।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিলে তুরস্কে কন্যাশিশু ও নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বেশকিছু প্রকল্প চালান এমিনে। শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধেও কিছু প্রচারণা কর্মসূচি তার অধীনে চলমান রয়েছে। অবশ্য এমিনের এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য আসলে জনসেবা নয়, নিজ দল এবং স্বামীর রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার বলেও দাবি অনেকের।

তবে একটি দেশের ফার্স্ট লেডি হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আয়োজনে অংশ নেয়ার আগেই কয়েকবার বাধা পেয়েছেন এমিনে এরদোগান। সেসব আয়োজনে মাথায় কাপড় বা স্কার্ফ পরা অবস্থায় যাওয়া নিষিদ্ধ থাকে, সেখানে অন্য ফার্স্ট লেডিরা অংশ নিলেও এমিনে যাননি। এ নিয়ে বেশ আলোচনার শিকারও হন তিনি।এমিনে এরদোগান-রোহিঙ্গা

তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এরদোগান সরকারের ধর-পাকড় অভিযানের পক্ষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে হার্ভার্ড ক্লাবে বক্তব্যও রাখেন এমিনে। সেখানে তিনি তুরস্কের ‘কথিত বন্ধু’দের সমালোচনা করেন, যারা অভ্যুত্থান চেষ্টার সময় সরকারকে সমর্থন না করে ‘কী হলো, কে জিতল’ – এমন মনোভাব নিয়ে দর্শকের সারিতে বসেছিলেন বা অভ্যুত্থানের বিষয়টিকে পাতানো বলে মন্তব্য করেছিলেন।

Share