নারী

মদিনা ও তাঁর রিকশা

অসংখ্য পুরুষের ভিড়ে ভড়কে না গিয়ে সাবলীলভাবেই রিকশা চালাচ্ছেন এক তরুণী। তাকে অবশ্য রিকশার প্যাডেলে পা চালাতে হচ্ছে না। ব্যাটারিচালিত রিকশা। তার বাম পা প্যারালাইসড। চালকের সিটে বসে দুই হাতে রিকশার হ্যান্ডেল ধরে আছেন মদিনা। বাতাসে ওড়ে তার দীঘল চুল।

ভাষাণটেক বাসস্ট্যান্ড থেকে তাঁর রিকশায় চড়ে মিরপুর ১৪ নম্বর যেতে যেতে কথা হয় মদিনার সঙ্গে। মদিনা জানান, আইডি কার্ড অনুযায়ী তার বয়স ২৬। থাকেন ভাষাণটেকের তিন ফিটে। তাদের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায়। বাবা নাই। স্বামী মাহবুব আলম গরিব। পাঁচ মাস ধরে মিথ্যা মামলায় জেল খাটছেন। আট বছরের একমাত্র ছেলে মোজাহিদকে সুনামগঞ্জে তার ভাইয়ের কাছে রেখেছেন। খরচ তিনিই দেন।

মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাষাণটেক পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করেন মদিনা। প্রায় দুই মাস ধরে তিনি ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। তাঁর স্বামীর সঙ্গে তিনি নিজেও জেলে ছিলেন তিন মাস। জেল থেকে বের হয়ে নিজেই সংসারের হাল তুলে নিয়েছেন কাঁধে। রিকশা চালিয়েই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগান তিনি। ছেলে হাফেজি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছে।

আপনার স্বামী কি করতেন? শুনে মদিনা একবার পেছন ফিরে তাকান। বলেন, আগে কচুক্ষেতে নাইটগার্ডের কাজ করতেন। তখন তার ছেলে তাদের কাছেই থাকতো।

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালান মদিনা। মিরপুর ১৪ নম্বর থেকে ভাষাণটেক হয়ে পকেট গেট, চেকপোস্ট, মাটিকাটা পথে ছুটে চলেন তিনি। নারী-পুরুষ, জোয়ান-বুড়ো সবাই তাঁর রিকশায় চড়ে। কেউ সংকোচ বা দ্বিধা করে না বলেও জানান মদিনা।

ব্যাটারিচালিত রিকশা তো বৈধ নয়- এমন কথা শুনে মদিনা বলেন, অন্য কাজ পারি না। পানি হাতালে শরীর ফুলে যায়; অন্যের বাসায় কাজও করতে পারি না। আমি তো আর ভিক্ষা করতে পারব না। তাই এই কাজটাই বেছে নিয়েছি।

মাসখানেক অন্যের রিকশা চালিয়ে আসছিলেন মদিনা। দিন শেষে রোজগারের অনেকটাই রিকশার মালিককে জমা দিতে হত। অবশেষে একজন লোক তাকে একটি রিকশা কিনে দিয়েছেন। রিকশার টাকা তাকে কিস্তি করে ফেরত দিতে হবে বলেও জানান তিনি।

বার্তা কক্ষ

Share