আরেক দফা বাড়ল ১০ পণ্যের দাম

কয়েকদিন ধরে তেল কিনতে নাজেহাল হচ্ছেন ভোক্তা। সঙ্গে নতুন করে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পেঁয়াজের দাম। শুধু এই দুটি পণ্য নয়, সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে চাল থেকে শুরু করে ডাল, চিনি, আটা-ময়দা, আদা-রসুন, আলু, সব ধরনের মাংস, ডিম ও গুঁড়াদুধসহ ১০ পণ্যের দাম বেড়েছে আরেক দফা। ফলে এসব পণ্য কিনতে ভোক্তার করুণদশা।

তারা বলছেন, আয় বাড়ছে না বরং ব্যয় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পণ্যের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের এখন আর কোনো ইস্যু লাগে না। তারা চাইলেই অবৈধ মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে, বাড়াচ্ছে দাম। তাই কঠোরভাবে তদারকি না করলে ক্রেতারা কোনো ধরনের সুফল পাবে না।

শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার, জিনজিরা বাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে বেশ কয়েকটি পণ্যের বাড়তি দর জানা গেছে।

বিক্রেতারা বলছেন, এসব পণ্যের দাম ঈদের পর বেড়েছে। সেগুলোর মধ্যে ঈদের আগে যে মসুর ডাল (ছোট দানা) ১২০ টাকা বিক্রি হয়েছে তা শুক্রবার ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বড় দানার মসুর ডাল কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি খোলা চিনি মানভেদে ২-৪ টাকা বেড়ে ৮২-৮৪ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি খোলা আটা ২-৫ টাকা বেড়ে ৪২-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা ময়দা কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া খুচরা বাজারে প্রতিকেজি আলুর দাম ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ শুক্রবার ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৩৫ টাকা। আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর প্রতিকেজি দেশি ও আমদানি করা আদা ১০ টাকা বেড়ে ১৫০ ও ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিকেজি দেশি রসুন ২০ টাকা বেড়ে ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

দাম বাড়ার তালিকায় শুকনা মরিচও যোগ হয়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২২০-২৪০ টাকা। বাজারে নতুন করে মুরগি ও গরুর মাংসের দামও বেড়েছে। কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম এখন ১৮০ টাকা। ঈদের আগে ৭০০ টাকা কেজিদরে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হলেও এখন সর্বোচ্চ ৭২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে ডিমের দামও বেড়েছে। প্রতি হালি (৪ পিস) ফার্মের ডিম এক সপ্তাহ আগে ৩৬ টাকা বিক্রি হলেও শুক্রবার ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কোম্পানিভেদে প্রতিকেজি গুঁড়াদুধ ৬৫০-৬৯০ টাকা বিক্রি হলেও খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৯০-৭৫০ টাকা। আর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিলিটার বোতল সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা।

রাজধানীর নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা খুরশিদা বেগম যুগান্তরের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে এলে কাঁদতে ইচ্ছা হয়। সব ধরনের পণ্যের দাম হু-হু করে বেড়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ এক সপ্তাহের চিত্র প্রত্যেকটি পণ্যে কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। এমন হলে কীভাবে সংসার চালাব জানি না। এর একটা সমাধান সরকার সংশ্লিষ্টদের বের করতে হবে। কারণ পরিবার নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, পণ্যের দাম কী কারণে বাড়ছে তার সুনির্দিষ্ট কারণ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বের করতে হবে। কোথায় কোথায় অভিযান পরিচালনা করতে হবে তার রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি কঠোরভাবে তদারকি না করলে ভোক্তা কখনো সুফল পাবে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, সার্বিকভাবে তদারকি করে বাজারে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে অধিদপ্তর ফৌজদারি মামলা করতে পারে না। কারণ তদারকিকালে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কোনো ম্যাজিস্ট্রেট থাকে না। তবে আমাকে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমাকে বলা হচ্ছে, কেন শুধু জরিমানা করা হচ্ছে? কেন বিশেষ ব্যবস্থায় মামলা করা হচ্ছে না? আমরা সেই দিকে যাচ্ছি। এবার অনিয়ম রোধে জরিমানার সঙ্গে মামলা দিয়ে অসাধুদের জেলে দেওয়া হবে।

বার্তা কক্ষ, ১৪ মে ২০২২

Share