Home / সারাদেশ / আমের সর্বনাশ করে দিয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান
আম্পান
আম বাগানে সজিব

আমের সর্বনাশ করে দিয়ে গেলো ঘূর্ণিঝড় আম্পান

ঝড় আম্পানে রাজশাহীতে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেছে। চাষিরা বলছেন, বাগানের এক–তৃতীয়াংশ আম ঝরে গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ১০ শতাংশ আমের ক্ষতি হতে পারে বলে তারা ধারণা করছে। এদিকে ঝড়ের কারণে পড়ে যাওয়া আম কেউ কিনতে চাইছেন না। সব মিলিয়ে ক্ষতির মুখে আমচাষিরা।

রাজশাহী জেলা দুর্যোগ সাড়া দান গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই ঝরে পড়া আম প্রাণ কোম্পানির পক্ষ থেকে কেনা হবে। তবে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, প্রাণ এই আম কিনবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। কারণ ঝড়ে পড়া আম নষ্ট হয়ে যায়। গাছ থেকে কাঁচা আম কিনবে তারা।

রাজশাহী আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ২০ মে বুধবার রাত ১২টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়েছে। এর মধ্যে ২টা ৫৫ মিনিট থেকে ২টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত ৫৯ কিলোমিটার বেগে ঝড় হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঝড়ের পর এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়পাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী ও আমচাষি আনোয়ার হোসেন বলেন, বাগানের বড় আম সব ঝরে গেছে। গাছের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে গাছে আমই নেই। তিনি বলেন, গত বছর তাঁর নিজের ও কেনা মিলে প্রায় ৩০ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছিল। গত বছরের দামে হিসাব করলে এবার তাঁর অন্তত ২৫ লাখ টাকার আম ছিল। এখন ঝড়ের পর গাছ দেখে মনে হচ্ছে, গাছে পাঁচ লাখ টাকার বেশি আম নেই।

বাঘা উপজেলার দিঘা গ্রামের আমচাষি গোলাম তোফাজ্জল বলেন, গত বছরের মতো দাম পেলে এবার তাঁর তিন লাখ টাকার আম ছিল। ঝড়ের পর বাগানে গিয়ে মনে হচ্ছে ব্যাপারিই আসবেন না।

উপজেলার নওটিকা গ্রামের আমচাষি তোহাজ্জত হাসান বলেন, তাঁর গ্রামের বাগানগুলোর এক–তৃতীয়াংশ আম ঝড়ের কারণে পড়ে গেছে। অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে গেছে।

এই ঝরে পড়া আম প্রায় ২০ মণ কুড়িয়েছেন দিঘা গ্রামের জিয়াউর রহমান। তিনি বলছেন, আম কুড়িয়েই ভুল করেছেন। এই আম নেওয়ার কোনো লোক পাচ্ছেন না। উপজেলার পীরগাছা গ্রামের চাষি নবাব আলী বলেন, তেঁথুলিয়া ও পীরগাছা গ্রামের রাস্তার পাশে একটি পরিবার অন্তত ৫০ মণ আম কুড়িয়ে স্তূপ করেছে। তাঁর পাশের আরেকটি পরিবার ৩০ মণ আম কুড়িয়েছে। তাঁরা এখন এই আম বিক্রি করার কোনো ক্রেতা পাচ্ছেন না। এই আম ফেলে দিতে হবে বা পানির দরে বিক্রি করে দিতে হবে।

উপজেলার ফতেপুর বাজার থেকে সুলতান নামের এক ব্যবাসায়ী মাত্র ৪০ টাকা বস্তা হিসাবে ১ হাজার ২০০ বস্তা আম কিনেছেন।

রাজশাহী জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলা দুর্যোগ সাড়াদান গ্রুপের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম প্রাণ কোম্পানি কিনবে। কিন্তু রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শামছুল হক খোঁজ নিয়ে বলেন, প্রাণ ঝড়ে পড়া আম কিনবে না। তারা জানিয়েছে, ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম নষ্ট হয়ে যায়। তারা গাছ থেকে পেড়ে দিলে আচার তৈরির জন্য সেই আম কিনবে।

আমের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে উপপরিচালক শামছুল হক আজ বলেন, জেলার মধ্যে বাঘা উপজেলায় সবচেয়ে আম বেশি। সেখান থেকে তাঁর কাছে খবর এসেছে যে ২০ থেকে ২৫ ভাগ আম পড়ে গেছে। এটা দেখার জন্য তিনি বাঘার পথে রওনা হয়েছেন। তবে চারঘাটের গাছ দেখে তাঁর মনে হয়েছে, ১০ শতাংশের বেশি আম পড়েনি।