‘আমি তোমার বাচ্চাকে মেরে ফেলছি। তুমি এসে দেখো। তোমার জন্য এটাই সাজা।’
গত সোমবার রাতে স্বামী সাজ্জাদ হোসেন মুরাদকে মোবাইল ফোনে এমন সংবাদ দেন স্ত্রী ফাহমিদা মীর মুক্তি। এ কথা শুনে দ্রুত উত্তরার নর্থ টাওয়ারের কর্মস্থল থেকে উত্তরখানের বাসায় যান সাজ্জাদ।
গিয়ে দেখেন ঘরের দরজা খোলা। বিছানায় দেড় বছরের ছেলে নিহাল সাদিক ঘুমাচ্ছে। শরীরের ওপরে কাঁথা। বিছানার এক পাশে ঘুমাচ্ছিলেন তার স্ত্রীও। এমন দৃশ্য দেখে সাজ্জাদ ভেবেছিলেন, হয়তো ভয় দেখাতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মুক্তি তাকে বাসায় ডেকেছেন।
এরপর তিনি বাথরুমে ঢোকেন। বাথরুম থেকে বেরিয়ে ঘুমন্ত শিশুকে আদর করতে যান। এরপর কাঁথা সরানোর পর যে দৃশ্য দেখেন, তা কল্পনাকে হার মানায়!
কাঁথার নিচে রক্তভেজা বিছানা। নিহালের ছোট্ট কোমল শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন। নাড়ি-ভুঁড়ি বেরিয়ে আছে। এর পরই চিৎকার করে উঠে সাজ্জাদ বলেন, ‘মুক্তি তুমি আমাকে মেরে ফেলতে। আমার অপরাধে নিষ্পাপ সন্তানকে কেন মেরে ফেললে?’
দৈনিক সমকালে প্রকাশিত আহমদুল হাসান আসিকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে নির্মম এই তথ্য। মর্মন্তুদ এ ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর উত্তরখানের মাস্টারপাড়া সোসাইটি রোডের একটি বাসায়।
গত সোমবার রাতে পারিবারিক কলহের জেরে মুক্তি তার শিশুপুত্র নিহাল সাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করেন। পুলিশ ও প্রতিবেশীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে সন্দেহ করে আসছিলেন। স্ত্রীর ধারণা, তার স্বামী পরকীয়ায় জড়িত। স্ত্রীর প্রতি একই ধরনের ধারণা ছিল সাজ্জাদেরও।
এ নিয়ে প্রায় প্রতিদিন তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। দু’জনের এটি দ্বিতীয় বিয়ে। শিশুকে হত্যার পর মুক্তিও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ হেফাজতে তার চিকিৎসা চলছে।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) রাতে উত্তরখান থানায় মুক্তির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন তার স্বামী সাজ্জাদ হোসেন মুরাদ।
আত্মহত্যার চেষ্টা করায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করে পুলিশ।
উত্তরার নর্থ টাওয়ারের লেডিস কর্নার নামে একটি দোকানের সেলসম্যান হিসেবে কাজ করেন সাজ্জাদ। তার গ্রামের বাড়ি ভোলার দৌলতখানে। মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরখান থানায় গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি শুধু বলেন, ‘আমি সব হারিয়েছি। আমার বলার আর কী আছে।’
: আপডেট ৩:০০ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur