Home / সারাদেশ / আধা লিটার মিলছে এক লিটারের দামে
আধা লিটার

আধা লিটার মিলছে এক লিটারের দামে

নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিযোগিতায় এবার শামিল হয়েছে বোতলজাত পানি। জলের দেশে কেউ টাকা দিয়ে পানি কিনবে না এমন অনিশ্চয়তা নিয়ে দেশে শুরু হয়েছিল বোতলজাত পানির ব্যবসা। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। সুপেয় পানির অভাব এবং ‘বিশুদ্ধ’ বোতলজাত পানির প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টিসহ নানা কারণে দেশে পানির বাজার বড় হয়েছে। এমনকি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে পানির ব্যবসা শুরু করেছে। তবে বাজার বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে পানির দামও। কয়েক মাস আগে যে দামে এক লিটার পানির বোতল পাওয়া যেত, এখন সেই দামে কিনতে হচ্ছে আধা লিটারের বোতল।

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা যায়, গত অক্টোবর থেকেই বেশিরভাগ প্রথম সারির কোম্পানি তাদের প্রত্যেক বড় বোতলের পানির মূল্য পাঁচ টাকা করে বাড়িয়ে দিয়েছে। এবার ছোট আকারের বোতলজাত পানির দামও বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে বাজারে ৫০০ গ্রাম পানির বোতল ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যার আগে ছিল ১৫ টাকা। এক লিটারের বোতলের দাম ২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে বড় আকারের বোতলজাত পানির মধ্যে দেড় লিটার ৩০ টাকা, দুই লিটার ৩৫ টাকা, আর পাঁচ লিটারের বোতল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের চেয়ে সবগুলো পাঁচ টাকা করে বেশি।

মিরপুরের মোহাম্মদিয়া মার্কেটের বোতলজাত পানির পাইকারি বিক্রেতা সাইফুল হোসেন বলেন, ‘বোতলের পানির চাহিদা কখনও কমে নাই। কিন্তু দাম বাড়ার জন্য খুচরা পানির কাস্টমাররা পানি নেওয়া কমিয়ে দিয়েছে। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রেস্টুরেন্টগুলো, বিয়া, না হলে কোনও মিটিং এইসব বড় পার্টির কাছে পানি বিক্রি হয়।’

দাম বাড়ায় পানি বিক্রিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে জানিয়ে মালিবাগ এলাকার আরেক পাইকারি বিক্রেতা মো. শাহজালাল বলেন, ‘লাভ আছে দেখেই তো বিক্রি করি। কিন্তু এখন বিক্রি কম। তার ওপর আগে যেই টাকায় কেনা লাগতো এখন তার থেকে বেশি টাকায় কিনতে হয়। বেচিও হাতে লাভ রাইখা। সমস্যাটা হইলো আগে পুরান দামে বেচার পর যেই লাভ থাকতো, সেই লাভ দিয়া আবার নতুন দামে বেশি মাল (বোতলজাত পানি) কেনা যায় না। তখন আবার পুঁজি খাটানো লাগে।’ কোনও উপলক্ষ ছাড়া খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তেমন পানি বিক্রি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

পানির দাম বাড়ায় খুচরা বিক্রেতাদের বোতলজাত পানি বিক্রির প্রতি আগ্রহ কমেছে। তারা জানান, বেশিরভাগ ক্রেতাই খোলা পানি খোঁজেন। অল্প কিছু সংখ্যক ক্রেতা বোতলের পানি ব্যবহার করেন, তাও একসঙ্গে কয়েকজন মিলে একটি বোতল কেনেন। এ বিষয়ে মিরপুরের খুচরা বিক্রেতা শহিদ বলেন, ‘অনেকে না থাকলে একলা কেউ পানির বোতল কিনে না। একলা থাকলে চিন্তা করে একটা ছোট কোকটোক খাওয়ার। এর জন্য ফ্রিজে পানি বেশি রাখি না। কিনিও কম।’

বোতলজাত পানি এখন ধীরগতির পণ্য উল্লেখ করে আরেক বিক্রেতা মো. আলম বলেন, ‘পানি এখন স্লো আইটেম হয়ে গেছে। চেষ্টা করি কম রাখার। কিন্তু কিছু কোম্পানির পানি রাখতে হয়। বেশি পানি রাখলে টাকাটা আটকায়া থাকে।’

দাম বেড়ে যাওয়ায় বাইরে দীর্ঘ সময় পানি পান থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করেন বলে জানান কয়েকজন ভোক্তা, যারা আগে পানি কিনে খেতেন। তারা বলেন, খুব একটা প্রয়োজন না হলে বোতলের পানি কেনা হয় না। চেষ্টা করেন নিজ গন্তব্যে ফিরে তৃষ্ণা মেটানোর।

নিয়মিত বাইরে ঘুরে কাজ করেন ইফাদ শরিফ বলেন, ‘বাইরে পানি খেতে চাইলে বোতলের পানিই খুঁজি। কারণ, খোলা পানি এক গ্লাসে অনেকে খায়। এটা আমার ভালো লাগে না। ইদানীং পানির বোতলের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়ছে। তাই চেষ্টা করি বাইরে পানি না খাওয়ার। একেবারে অফিসে বা বাসায় গিয়ে পিপাসা মেটাই। কিন্তু সামনে গরমের দিন আসছে। তখন না চাইলেও পানি কিনতে হবে। না হলে বাসা থেকে ওজনদার একটা পানির বোতল সঙ্গে নিয়ে সারা দিন ঘুরতে হবে।

এদিকে, এলাকা ভেদে বড় পানির বোতলের চাহিদা দেখা গেছে। ওইসব এলাকার বাসিন্দারা বাসাবাড়িতে পরিবারের সবার জন্য বোতলজাত পানি কেনেন। পানির মূল্য বাড়ায় তারাও নাখোশ। এ বিষয়ে মিরপুর পল্লবী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. ফাহাদ হোসেন বলেন, ‘বাসায় ফিল্টার আছে। তাও আব্বু-আম্মুর জন্য নিয়মিত বোতলের পানি কিনতে হয়। দৈনিক গড়ে আমাদের পাঁচ লিটারের একটা বোতল লাগে, কোনও মাসে বেশিও লাগে। তাতে আমাদের ২২০০ টাকার মতো খরচ হয়। এই খরচটা এমনিতেই অন্য খরচ থেকে বের করতে হয়। তা আবার বাড়লে চাপ আরও বাড়বে। না হয় পানির ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে।’

এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বোতলজাত পানি উৎপাদন কোম্পানিগুলো নানা কারণ দেখিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করেছে। তবে সেটা এক লাফে পাঁচ টাকা হতে পারে না বোতলপ্রতি। এই মূল্যবৃদ্ধি অযৌক্তিক ও অন্যায়। আমরা এর প্রতিবাদ করছি এবং প্রত্যাশা রাখছি দ্রুত এর ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করা হবে।’

বার্তা কক্ষ, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩