আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাত হানার দীর্ঘ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও পটুয়াখালীতে জলচ্ছ্বাসে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধের অধিকাংশ এখনও রয়েছে অরক্ষিত। গড়ে তোলা হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার।
প্রায় ২৫০ হেক্টর বনাঞ্চল বিলীন হলেও অর্ধেকও নতুন বন তৈরি করতে পারেনি বনবিভাগ। ফলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন ও উত্তরণ পরিকল্পনার পর আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি পটুয়াখালী উপকূলীয় জনপদের অনেক মানুষ।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের এই দিনে সুপার সাইক্লোন ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলে আঘাত করে কেড়ে নেয় ৬৭৭ জনের প্রাণ। নিখোঁজ হয় প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ। সে সময় আহত হয় সাড়ে আট হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে দুই হাজার মানুষ হয়েছে পঙ্গু। বিধ্বস্ত হয় ৫৫ হাজার ঘর-বাড়ি, দেড় হাজার মসজিদ-মন্দিরসহ ৩শ’ ৫১টি স্কুল ও কলেজ। নষ্ট হয়ে যায় প্রায় পাঁচ লাখ একর ফসলি জমি। মারা যায় প্রায় ১৮ হাজার গবাদি পশু। ৪১২টি ড্রেনেজ, স্লুইসসহ বিধ্বস্ত হয়ে যায় এক হাজার ২০৯ কি.মি. বেড়িবাঁধ।
দীর্ঘ ১০ বছরে সরকারি-বেসরকারিভাবে নানামুখী উদ্যোগের কারণে উপকূলের এসব মানুষ ঘুড়ে দাঁড়ালেও এখন অনেক এলাকার বাঁধ পুনর্নির্মান করা হয়নি। নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। ফলে এখনও ভয় আর আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করে এসব এলাকার বাসিন্ধারা।
রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডার গ্রামের মনোয়ারা বেগম বলেন, ঝড়ের মাইকিং শুনলে আমরা সাইক্লোন শেল্টারে চলে যাই। কিন্তু একটা সাইক্লোন শেল্টার হওয়াতে সব মানুষ ওখানে থাকতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়। সাইক্লোন শেল্টারের জায়গার অভাবের কারণে অনেকে বাড়িতেই থাকে। তাই ঝড়ের সময় বাড়ি বসে অনেক মানুষ মারা যায়।
রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা গ্রামের ইউপি সদস্য মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার না থাকায় বন্যা ও টর্নেডোতে এলাকায় মৃত্যুর পরিমাণ বেড়ে যায়।
চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হানিফ মিয়া বলেন, সাগর বেষ্টিত ইউনিয়ন হওয়ার ফলে মানুষের যাওয়ার সুযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ আমার এলাকায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টারের ব্যবস্থা করে দিন। যাতে অবহেলিত মানুষগুলো বাঁচতে পারে।
দশমিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাখাওয়াত হোসেন শওকত জানান, সিডরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সে ক্ষতি এখনও আমরা পুষিয়ে উঠতে পারিনি। ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধ এবং দুর্যোগ সুরক্ষা দেয়াল খ্যাত উপকূলীয় বনভূমির বিরাট একটি অংশ বিলীন হলেও তার অর্ধেক পরিমাণ বনভূমি তৈরি হয়নি।
তবে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুনুর রশিদ জানান, সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের মাধ্যমে সুরক্ষিত উপকূল তৈরিতে কাজ করছে সরকার। প্রয়োজনীয় বেড়িবাঁধ ও সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের মাধ্যমে উপকূলের মানুষের জীবন ও জীবিকা নিরাপদ করতে উদ্যোগ নেয়া হবে।