স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :
আগাম নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে চাঙা করার লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, মধ্যবর্তী হোক আর মেয়াদপূর্ণ করেই হোক, সামনের নির্বাচনকে নিয়ে আওয়ামী লীগকে এখনই ভাবতে হচ্ছে। আর বিগত নির্বাচনের ন্যায় আগামীতেও এ গুরু দায়িত্ব সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের হাতেই রাখতে চান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
তবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আগাম নির্বাচনের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ যারা আগাম নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন’।
মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুপস্থিত থাকায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার গুঞ্জন ওঠে। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে সৈয়দ আশরাফকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। তবে তিনি দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।
সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন রাজনীতিক। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি) প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন তিনি। এছাড়া শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন সৈয়দ আশরাফ।
ওই সময় আওয়ামী লীগের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতার বিতর্কিত ভূমিকা থাকলেও সৈয়দ আশরাফ দলের প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শন করেন। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফ নজরকাড়া ভূমিকা পালন করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছে এমন প্রচার রয়েছে দলের মধ্যে। পরে স্থানীয় সরকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি।
আওয়ামী লীগের ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দলের সর্বশেষ সম্মেলনেও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি।
গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করলেও সৈয়দ আশরাফের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির তেমন কোনো অভিযোগ উঠেনি। সাদামাটা জীবনযাপনকারী মানুষটি বরাবরই থেকেছেন নির্লোভ-নির্মোহ।
তবে অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর দলীয় এবং দাফতরিক কাজে ক্রমশই অনিয়মিত হয়ে পড়েন সৈয়দ আশরাফ। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা বহুবার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উষ্মা প্রকাশ করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
নির্ভরযোগ্য ওই সূত্রটি জানায়, ‘সরকারকে আগাম নির্বাচনের ছক মাথায় রেখেই এগুতে হচ্ছে। আগাম নির্বাচন হবে কি হবে না, তা সময়-ই বলে দেবে। কিন্তু দলকে নির্বাচনমুখী করা সময়ের দাবি। নানা কারণেই দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে। আর বসে থাকার সময় নেই। আর পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফই এ কাজে নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখেন।’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এবং ভাসানীর মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল, তা কেউ জানেন না, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সৈয়দ আশরাফের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়েও আমরা কোনো মতামত দিতে পারি না। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী একক ক্ষমতার অধিকারী, যা সংবিধানে রক্ষিত।
তিনি বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদের রদবদল যে কোনো সময়-ই ঘটতে পারে। এমন রদবদল সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের নিয়মিত অংশ। এই রদবদলের সঙ্গে আগাম নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’
আপডেট : বাংলাদেশ সময় : ১0:১৩ অপরাহ্ন, ২৪ আষাঢ় ১৪২২ বঙ্গাব্দ, বৃহস্পতিবার ০৮ জুলাই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দ
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/এমআরআর/২০১৫
চাঁদপুর টাইমস ডট কম–এ প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি