Home / সারাদেশ / আগাম আনারস উৎপাদনে কেমিক্যাল প্রয়োগ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোক্তারা
আনারস

আগাম আনারস উৎপাদনে কেমিক্যাল প্রয়োগ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ভোক্তারা

নেত্রকোনার কলমাকান্দার আনোয়ার হোসেন শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য মধুপুর উপজেলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ১২০ টাকায় ৪টি ছোট আকারের আনারস কেনেন। গাঢ় হলদে রং দেখে তিনি খুশিই ছিলেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে খাওয়ার পর। এ রসালো ফল যারাই মুখে তুলেছে তারা সবাই ইতিমধ্যে পেটের পীড়ায় আক্রান্ত। কেউ স্থানীয় ক্লিনিকে আবার কেউবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। কেমিক্যাল ব্যবহার করে বাজারজাত করা এসব আনারস খেয়ে ভোক্তারা এভাবে প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন। অনেকেই কঠিন পীড়া ও স্বাস্থ্যহানির শিকার হচ্ছেন।

জানা যায়, মধুপুর, মুক্তাগাছা, ফুলবাড়িয়া, ঘাটাইল ও জামালপুর সদর উপজেলায় এ বছর প্রায় ২৩ হাজার একর জমিতে আনারসের আবাদ হয়েছে। তবে এর সিংহভাগই মধুপুর উপজেলায়। সাধারণত নভেম্বর-এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে কোনো আনারস পাওয়া যায়না। অসাধু ব্যবসায়ীরা এ সময়টাতে অসময়ের আনারস নাম দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেয়।

একাধিকবার গ্রোথ হরমোন প্রয়োগের ফলে গাছে যে আনারস আসে তা প্রাকৃতিকভাবে পাকেনা। তখন এসব আনারস বাজারজাতের পূর্বে রাইপেনিং হরমোন প্রয়োগ করে পাকানো হয়। এভাবে পাকিয়ে বাজারজাত করা এসব আনারস আর ফল থাকেনা। সেটি হয়ে যায় বিষাক্ত বস্তু। আর সেসব আনারস খেয়ে তৃপ্ত হওয়ার আশায় ভোক্তারা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

হলুদিয়া গ্রামের আনারস চাষি আনিসুর রহমান বলেন, আগাম আনারস বলে কিছু নেই। বাজারে আনারস আসে জুন-জুলাই মাসে। কিন্তু একশ্রেণির মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, যারা কৃষকদের নিকট থেকে বছরওয়ারী বাগানের সব ফল কিনে নেয়, তারা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় গ্রোথ হরমোন বা কেমিক্যাল প্রয়োগ করে। এতে ৬ মাসের স্থলে দু’মাসের মধ্যে গাছে আগাম ফুল আসে। এসব ফুলে আবার তিন থেকে চারবার গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করলে আনারস দ্রুত বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবে আনারস গাছে ফুল-ফল পেতে যেখানে ১৮ মাস লাগে সেখানে গ্রোথ হরমোন প্রয়োগ করে ১২ মাসের মধ্যে ফল উৎপাদন করা হয়। অনেকটা গর্ভবতী নারীর উদর থেকে নয় মাসের স্থলে ৬ মাসে বাচ্চা প্রসব করানোর মতো।

হরমোন ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, গ্রোথ হরমোন তেমন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু রাইপেনিং হরমোন ক্ষতিকারক। রাইপেনিং হরমোনের বোতলের গায়ে লেখা থাকে, এটি ছিটানোর সময় বাতাসের প্রবাহ থাকতে হবে। চোখ-মুখে লাগলে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। কোনো খাদ্যদ্রব্য বা পশুর খাবারে যেন এর স্পর্শ না লাগে। স্প্রে করার পর কোনো জলাধারে যেন মেশিন ধোঁয়ামোছা না করা হয়। অথচ ব্যবসায়ীরা কোনোকিছু তোয়াক্কা না করেই গাছ ও ফলে রাইপেনিং হরমোন প্রয়োগ করছে।

কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিদেশে বাণিজ্যিক খামারে উৎপাদিত ফল বাজারজাতকরণে সহনীয় মাত্রায় হরমোন প্রয়োগের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু সেটি করা হয় বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে। কিন্তু মধুপুরে যেটি করা হয় সেখানে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে মাত্রাতিরিক্ত কেমিক্যালে পাকানো বিষাক্ত ফল খেয়ে ভোক্তারা নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

নিরাপদ ফল ও ফসল উৎপাদন আন্দোলন কর্মী সানোয়ার হোসেন বলেন, মহাজান, ব্যবসায়ী ও চাষিরা যেন মাত্রাতরিক্তি কেমিক্যাল দিয়ে ফল না পাকায় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছি। এ ক্ষতিকর পদ্ধতি থেকে অনেকেই বের হয়ে এসেছেন।

মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, রাইপেনিং হরমোন প্রয়োগ করে আনারস পাকিয়ে অসময়ে বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কৃষকদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।

মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন বলেন, আনারস উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে কেমিক্যাল প্রয়োগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টাইমস ডেস্ক/ ২৮ এপ্রিল ২০২৩