Home / জাতীয় / লঙ্ঘন নয়, আওয়ামী লীগ দেশে মানবাধিকারের সুরক্ষা দেয়: প্রধানমন্ত্রী
ফাইল ছবি

লঙ্ঘন নয়, আওয়ামী লীগ দেশে মানবাধিকারের সুরক্ষা দেয়: প্রধানমন্ত্রী

যারা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে, তাদের জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ এ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে না, সুরক্ষা দেয়। আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করে। আওয়ামী লীগ দেশের সমস্যা সমাধান করে। মানুষের জন্য কাজ করে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রশ্নে বিএনপির নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা খুনিদের বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করে, তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? আমি নিজেও বলতে পারি—আমার মানবাধিকার কোথায় ছিল? কেন আমি বাবা-মায়ের লাশ দেখতে পাইনি। কেন খবর পাইনি। কেন আমাকে ৬ বছর দেশে আসতে দেয়নি। কেন রেহানার পাসপোর্ট জিয়াউর রহমান রিনিউ করতে দিলো না। সে জবাব কি তারা দেবে? কোন সন্ত্রাসী, কোন জঙ্গি, কোন ড্রাগ ডিলার মারা গেছে—তাদের মানবাধিকার নিয়ে ব্যস্ত। এরা যে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তার কোনও কথা নেই।’

তারা খুনিদের মানবাধিকার রক্ষায় ব্যস্ত

আমেরিকা ও কানাডায় থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরত না দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘খুনি রাশেদ এখন আমেরিকায়। বারবার আমরা অনুরোধ করছি—ওই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফেরত দিন। সেই সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে দেয় না। খুনির মানবাধিকার রক্ষা করছে তারা। অর্থাৎ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীকে তারা রক্ষা করছে। মেজর নূর এখন কানাডায়। বারবার অনুরোধ করলেও কানাডা সরকার ফেরত দেয় না। খুনিদের মানবাধিকার রক্ষা করতে তারা ব্যস্ত। তাহলে আমরা যারা স্বজন আপনজন হারিয়েছি, আমাদের অপরাধটা কী? আমি জাতির কাছে জিজ্ঞাসা করি—বিএনপি বা জামায়াতের জন্য যারা হাপিত্যেশ করে, কান্নাকাটি করে, তারা জবাব দিক।’

বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘আমার আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে না? কত নেতাকে গুম করেছে না? বহু লোককে অত্যাচার করেছে। এমনভাবে অত্যাচার করেছে যে বেশি দিন আর বাঁচতে পারেনি।’

বিএনপির নীতি ভিক্ষার খাবার খাবে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নয়নশীল দেশ করেছি। তো আমরা দেশের সর্বনাশটা কী করলাম? খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো কি সর্বনাশ হয়ে গেলো? তবে হ্যাঁ, হতে পারে। কাদের হতে পারে? যারা মনে করে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। অর্থাৎ তাদের নীতি বাংলাদেশে সারা জীবন খাদ্য ঘাটতি থাকবে। বিদেশ থেকে ভিক্ষা চেয়ে আনবে। ভিক্ষার খাবার খাবে। আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াবে না। দুঃখটা তাদের। এজন্য তাদের চোখে দেশের কোনও উন্নতি হয়নি। তারা লুটে খেতে পারছে না বলে দাবি করছে বাংলাদেশের নাকি কিছুই হয়নি।’

এ দেশে গুমের কালচার শুরু করেছে জিয়া

বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বিএনপির লোকেরা দেখি গুম নিয়ে কথা বলেন। আরে এ দেশে গুমের কালচার তো শুরু করেছে জিয়াউর রহমান। একেক রাতে জিয়া সেনা, বিমান বাহিনীর অফিসার সৈনিকদের হত্যা করেছে। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। গুম করেছে। একই দিনে একই সঙ্গে ১০ জন করে ফাঁসি। তাদের লাশ আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া হয়নি। মাটিচাপা দিয়ে লাশ কোথায় লুকিয়েছে, কেউ আজ পর্যন্ত বলতে পারে না। এখনও আত্মীয়-স্বজন খুঁজে বেড়ায় কোথায় লাশ। এমন কোনও কারাগার নেই, যেখানে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। হত্যা করে লাশ গুম। পরিবার কখনও লাশ দেখতে পারেনি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড এ দেশের মানুষ মেনে নেয়নি। প্রতিবাদ করেছে। আর যারাই প্রতিবাদ করেছেন—তাদেরই জিয়া হত্যা করেছে। সেই পরিবারগুলো আজও লাশের জন্য কেঁদে ফেরে। তো বিএনপি কোন মুখে গুম-খুনের কথা বলে। জিয়াউর রহমান যেটা করেছে, খালেদা জিয়াও সেই একই কাজ করেছে।

বুদ্ধিজীবী দিবসে বিএনপি কোনও কর্মসূচি পালন করে না, এমন দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা বুদ্ধিজীবী দিবসে কর্মসূচি পালন করি। বিএনপির কোনও কর্মসূচি আছে? তার মানে সেদিন যারা হত্যা করেছিল, এদের জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসিয়েছিল। মন্ত্রী উপদেষ্টা বানিয়েছিল। এরশাদ এসে আরেক ধাপ ওপরে। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী করলো খুনি ফারুককে।

স্যালুট দিতে দিতে বুট ক্ষয় হতো জিয়ার

তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী হত্যা, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করা… অপরাধটা কী? অপরাধ এ দেশের স্বাধীনতা আমরা এনেছি। জাতির পিতা যদি স্বাধীনতা না আনতেন, ওই মেজর জিয়া কি মেজর জেনারেল হতে পারতো? জীবনেও পারতো না। মেজর থেকেই স্যালুট দিতে দিতে বুট ক্ষয় হতো। পা ক্ষয় হতো। ওই খানেই শেষ হতো। খালেদা জিয়াকে মেজর জেনারেলের বউও হতে হতো না। তারেক জিয়াকে মেজর জেনারেলের ছেলেও পরিচয় দিতে হতো না। এটাই বাস্তবতা।’

শুধু জানে বেঁচে থাকা তো মানবাধিকার নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়েছি। বিএনপি কত লাখ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করেছে। এক কোটি ৬৯ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ছিল। আজকে আমরা চার কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করছি। চালই করেছি চার কোটি ৪ মেট্রিক টন। গম ভুট্টা সব আমরা উৎপাদন করছি। স্বল্পমূল্যে ও বিনা পয়সায় খাদ্য দিচ্ছি।’

জিয়া পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত লাগিয়ে রেখেছিল

তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত লাগিয়ে রেখেছিল। ছিয়াত্তর সাল থেকে সংঘাত শুরু হয়। শান্তিচুক্তি করে আমরা অস্ত্রসমর্পণ করাতে সক্ষম হই। খালেদা জিয়া বাধা দিয়ে হরতালও ডেকেছিল যাতে অস্ত্রধারীরা অস্ত্রসমর্পণ করতে না পারে।

খালেদা জিয়ার ন্যায্যবিচার হয়েছে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতিমের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য খালেদা জিয়ার ন্যায্যবিচার হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আমরা কিন্তু মামলা দেইনি। মামলা দিয়েছিল তারই প্রিয় মইন উ আহমেদ, ফখরুদ্দিন আহমেদ আর তার ইয়েসউদ্দিন। মামলা হয়েছে। সাজা পেয়েছে। আওয়ামী লীগের দোষ দিয়ে তো লাভ নেই। বরং আমার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া ১২টি মামলা দিয়েছিল। এরপর মইন উ আহমেদ, ফখরুদ্দিন আহমেদ-ইয়েসউদ্দিন এসে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিলো। আমার একটা মামলাও নির্বাহী আদেশে নিষ্পত্তি হয়নি। প্রত্যেকটি মামলা তদন্ত করে কিছু পেলে বিচার করতে বলেছি। না হলে ডিসমিস করতে বলি। প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে তো কিছু পায়নি। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে কানাডার ফেডারেল আদালতও তদন্ত করে কিছু পাইনি।’

পদ্মা সেতুতে উঠতে বিএনপি নেতাদের লজ্জা হয় না?

শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়া বললেন—পদ্মা সেতু জোড়াতালি দিয়ে তৈরি হচ্ছে, কেউ পার হবেন না। এই যে বিএনপির লোকজন গেলেন, তারা কি নদী পার হয়ে গেছেন? নাকি সাঁতরিয়ে পাড়ি দিয়েছেন? কীভাবে পার হয়েছে? সেতুতে ওঠেনি? ওঠার সময় তাদের লজ্জা হয়নি? তাদের নেত্রী তো উঠতে মানা করছিল। উঠলো কেন? এদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে কত লড়বেন। কত কথা বলবেন। তারা কখনও চায়নি বাংলাদেশ সম্মান নিয়ে উঠে দাঁড়াক।’

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাদের সখ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের সঙ্গে। জাতির পিতার হত্যাকারীদের সঙ্গে। খুনি আর দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে। কারণ, এটাই তারা জানে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি দেশকে কী দেবে? তারা লুটে খেতে জানে। মানুষ খুন করতে জানে। দুর্নীতি করতে জানে। বুদ্ধিজীবীদের জন্য তাদের কোনও সম্মান নেই। থাকবেই বা কী করে? কেউ এইট পাস। কেউ মেট্রিক ফেল। কেউ ইন্টারমিডিয়েট ফেল। জ্ঞানী গুণীদের জন্য এদের তো সম্মান থাকবে না। এটাই স্বাভাবিক। আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। ওরা থাকলে বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিতো না। সব জায়গা থেকে কীভাবে একটা চাটা দেবে, সেটার জন্য বসে থাকতো।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা সোনার বাংলার পথে এগিয়ে যাচ্ছি। এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আগামীর বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য যা করণীয় সবই করে যাচ্ছি।’

বার্তা কক্ষ, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২