সরকার নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকার জন্য জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
দলটি বলেছে, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে মনে হয় চরম অরাজকতার ঘন অন্ধকারের মধ্যে দেশ।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার বিকেলে রাজধানীর কলাবাগানে জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। জুলহাজ বাংলাদেশে সমকামীদের একমাত্র ম্যাগাজিন ‘রূপবান’-এর সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ঢাকায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার ঘনিষ্ট সহচর (প্রটোকল অফিসার) ছিলেন। আর তনয় ছিলেন নাট্যকর্মী।
এদিকে, সোমবার সকালে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের মূল ফটকের ২’শ গজ উত্তরে এক ফার্মেসির দোকানের সামনে দুর্বৃত্তের ছোঁড়া গুলিতে কারাগারের সাবেক সার্জেন্ট ইন্সট্রাক্টর মো. রুস্তম আলী হায়দার নিহত হন।
এছাড়া গত শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন।
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বিএনপির পক্ষ থেকে এসব হত্যাকাণ্ডের তীব্র ধিক্কার, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান।
এদিকে, জুলহাস মান্নান ও মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের পর সোমবার প্রধানমন্ত্রী এক সভায় বলেন, ‘এগুলোর সাথে বিএনপি-জামায়াত জড়িত।’
প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই প্রধানমন্ত্রী চটজলদি কী করে বললেন যে, হত্যাকাণ্ডের সাথে বিরোধী দল জড়িত? এর আগেও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরপরই বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হয়েছে বিএনপির লোকদের জড়িত করার। এর অর্থ দাঁড়ায়, দেশে তাদের নিজেদের সীমাহীন ব্যর্থতা ঢাকতেই জনদৃষ্টিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্যই তারা মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার মতো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসনির্ভর এই সরকার সন্ত্রাসবাদের অন্ধগলিতে পথ হারিয়ে ফেলার কারণেই এখন উন্মাদের মতো কথা বলছে। প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলকে দমনে রক্তাক্ত পন্থা অবলম্বন করে নিজের মসনদকে কণ্টকমুক্ত রাখতে গিয়েই দেশব্যাপী হত্যা আর লাশের উৎসব চালাচ্ছে। সরকার দলীয় ক্যাডাররা উস্কানি পেয়ে ভয়াবহ বেপরোয়া হয়ে ওঠার কারণে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মুখে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দলীয় ক্যাডার দিয়ে সাজানোর কারণেই সবুজ শ্যামল বাংলাদেশ রক্তঝরা রক্তিম রঙে ঢেকে গেছে।’
রিজভী বলেন, ‘হত্যাকে উৎসাহিত করাই আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি, বিএনপির নয়। এ প্রধানমন্ত্রী একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন আর তার ক্যাডাররা সেটি করতে পারছে না বলে বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, শাড়ি পরতে। সুতরাং হিংসাত্মক আক্রমণ, লুটপাট, ভাঙচুর, খুন, জখম, গুম, অপহরণ ইত্যাদি অনাচার আওয়ামী লীগের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। ইতোমধ্যে যতগুলো হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তার কোনোটিরই সুরাহা করতে পারেনি এই ভোটারবিহীন সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলার সভাপতি আব্দুল মান্নান, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, ওলামা দলের সভাপতি হাফেজ আবদুল মালেক, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সেলিনা সুলতানা নিশিতা, সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিফা সুলতানা রুমা প্রমুখ। (বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৪:২০ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৬, মঙ্গলবার
ডিএইচ