উপজেলা সংবাদ

অনিয়ম-দুর্নীতিতে ব্যাহত হচ্ছে হাজীগঞ্জ পাইলটের শিক্ষা কার্যক্রম

*বিদ্যালয়ের ভেতরেই চলছে কোচিং বাণিজ্য। *ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপচেষ্টায় দুর্বল ম্যানেজিং কমিটি। *দীর্ঘদিন থেকে অনির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটি দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম। *শিক্ষার্থীদে কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগ। *ম্যানেজিং কমিটির অনিয়ম-দুর্নীতিতে ক্ষুব্দ হয়ে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

১৯৩৯ ইং স্থাপিত হওয়ার পর গত কয়েক বছর ধরে নানা সম্যসার মধ্যে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়ার পথে রয়েছে। এসব যেনো দেখার কেউ নেই।

অথচ প্রতি বছরই বিদ্যালয়টি পড়াশুনায় এবং পরীক্ষার ফলাফলে উপজেলার প্রথম স্থান অধিকার অক্ষুন্ন রেখে এসেছে। যে কারণে জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে ভালো ফলাফল লাভের আশায় এ বিদ্যালয়টিতে এসে ভীড় জমাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

এ সুযোগে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে নিয়মবহির্র্ভূত অর্থ হাতিয়ে নিতে মরিয়া হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক, অভিভাবক সদস্য ও বাইরের কয়েকটি চক্র।

বর্তমানে বিদ্যালয়টির ভেতরে ও বাহিরে রয়েছে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি। এ সুযোগে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, কয়েকজন সহকারি শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি যে যার যার মতো সুযোগ সুবিদা গ্রহন করার মধ্য দিয়ে চরম ব্যহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

গত কয়েক বছর ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদসহ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। সে সাথে ম্যানেজিং কমিটিসহ গুরুত্বপূর্ন পদে অভিভাবক সদস্যদের উপস্থিতি না থাকায় জটিলতায় পড়ছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ ক’বছর প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় বিদ্যালয়টি দুর্বল ব্যবস্থাপনার শিকার হয়।

দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মামলাটি শেষ হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়ে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয় । এর কয়েক মাস পর শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভোটে নির্বাচন করতে তফসিল ঘোষণা করা হয় । কিন্তু ক’জন প্রার্থী তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ভোটে না গিয়ে সিলেকশন (মনোনিত) পদ্ধতিতে কমিটি অনুমোদন করে নেয়।

পরে কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুর্শিদুল ইসলাম, অন্যান্য সদস্যদের আচরণে ক্ষুব্দ হয়ে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে গত ২০ মার্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার এ পদত্যাগে হতভম্ব হয়ে পড়েন বিদ্যালয়ের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ।

পরে অভিভাবকদের পক্ষে জুনায়েদ হোসেন নামের একজন অভিভাবক বর্তমান বিলুপ্ত কমিটির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ সরকারের ৮টি বিভাগে দায়ের করেন ।

এর পর গত ২৮ মার্চ সোমবার সকালে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অভিভাবক সমাবেশ ডাকা হয় । এর পূর্বে ২৭ মার্চ রোববার বিকালে অভিভাবক সদস্য বিল্লাল হোসেন ভেন্ডার আহবানে শহরের আশ-পাশ এলাকায় মাইকিং করে অভিভাবক সমাবেশ ডাকা হয়। যা কিনা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. দেলোয়ার হোসেন অবগত নয় এ মর্মে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

এর পরের দিন বিল্লাল ভেন্ডার অন্যান্য অভিভাবকদের পক্ষ হয়ে, সমাবেশে অভিভাবক কমিটির বিতর্কের মূলনায়ক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেনকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য প্রদান করে। বক্তব্যে ১৪শ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার আলো ধরে রাখতে এবং বিতর্কিত কমিটি বিলুপ্ত করে বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করতে সংশ্লিষ্টদেরকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।

এদিকে খোজ নিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ারের নের্র্তৃত্বে খন্ডকালীন ৫ জন পুরুষ শিক্ষক দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরেই প্রতিনিয়ত কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন ।
একটি নির্ভর সূত্রে জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন তার চলতি দায়িত্বে নিয়মবহির্ভূত ভাবে ৭ জন খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেন । এরমধ্যে ২ জন মহিলা এবং ৫ জন পুরুষ । প্রত্যেকটি শিক্ষক নিয়োগে মোটা অংকের অর্থের বিনিময় নিয়োগগুলো দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো.দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি এখানে প্রধান শিক্ষক পদে আসীন হতে মরিয়া নই। আমি চাই এ এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে এগিয়ে আসুক। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো ঠিক নয়, আমি নিয়মের মধ্যে সবকিছু চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আসছি।

]জহিরুল ইসলাম জয়, হাজীগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট [/author]

: আপডেট ০৭:০৬ পিএম, ৫ মার্চ  ২০১৬, মঙ্গলবার

ডিএইচ

Share