চাঁদপুর

অধ্যক্ষ ফেন্সি হত্যায় স্বামী ও সতিনকে অভিযুক্ত করে যা বললেন সন্তানরা

চাঁদপুরে কেন্দ্রীয় মহিলা লীগ নেত্রী ও কলেজ শিক্ষক শাহীন সুলতানা ফেন্সী হত্যাকাণ্ডে বাবার বিচার চেয়েছেন সন্তানরা। রোববার (1 চাঁদপুর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফেন্সীর ছোট মেয়ে ডা. ফাতেমা শাহীন পুষ্প।

পুষ্প বলেন, “গত ৪ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে আমার মা অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সী নিজ বাসায় আমার পিতা অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুলেখা বেগমের সহযোগিতায় খুন হন।”

লিখিত বক্তব্যে পুষ্প বলেন, ‘নিহত শাহিন সুলতানা ফেন্সি (তার মা) ও অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (পিতা) দীর্ঘ ৩২ বছর দাম্পত্য জীবন কাটান। তারা ৩ বোন বড় বোন বিবাহিত স্বামীসহ থাকেন ইটালি, দ্বিতীয় বোন বিবাহিত তিনি স্বামীসহ থাকেন জার্মানিতে এবং তিনি একজন চিকিৎসক। তার পিতা অ্যাড. জহিরুল ইসলাম গত ৪ বছর পূর্বে জুলেখা বেগম নামে এক বিবাহিতা এবং স্বামী পরিত্যাক্ত ২ সন্তানের জননী এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত তিনি সকলের অগোচরে ওই মহিলাকে বিয়ে করেন। শুনেছেন ওই মহিলার গর্ভে তখন একটি কন্যা সন্তান ছিলো। আমার বাবার এই অনৈতিক সম্পর্ক ও পরবর্তীতে বিবাহ করা আমরা বোনেরা এবং আমার মা কখনই মেনে নেয়নি। যা নিয়ে আমার মায়ের সাথে আমার বাবার প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো, আমার বাবা আমার মাকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। আমার বাবা প্রকাশ্যেই আমার মাকে জীবন নাশের হুমকি দিতো এবং দ্বিতীয় স্ত্রীও মোবাইলে আমার মাকে হত্যার হুমকি দিতেন। যা আমরা বোনেরা বহুবার দেখেছি এবং শুনেছি।’

পুষ্প এবং তার বোনেরা মাকে এ ব্যাপারে সাবধান করেছেন এবং তার বোনেরা মাকে তাদের সঙ্গে ইউরোপ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে ফাতেমার ভাষ্য।

“কিন্তু আমার মা বাবাকে ফেলে বোনদের সাথে যাননি, যার ফলশ্রুতিতে গত ৪ জুন সন্ধ্যায় আমার বাবা পূর্বপরিকল্পনা মতে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় খুনের আলামত নষ্ট করে এই খুনকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে।

“খুনের ঘটনার আলামত নষ্ট এবং আগে-পরের নানা ঘটনাই প্রমাণ করে আমার বাবা অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামই আমার মায়ের খুনি।”

তিনি বলেন, “আমার মা একজন অধ্যক্ষ, একজন সরকার দলীয় নেত্রী। কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে চাঁদপুরের লোকজন চুপ করে আছেন।”

অধ্যক্ষ ফেন্সির ফাইল ছবি

নিহতের বড় ভাই মামলার বাদী ফোরকান খান বলেন, “এখন পর্যন্ত কোনো দিকের চাপ দেখিনি। পুলিশ আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করছে। তদন্ত কাজও ভালোভাবেই চলছে বলে মনে হচ্ছে।”

নিহত শাহীন সুলতানা ফেন্সী ফরিদগঞ্জ গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এবং বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি চাঁদপুর মহিলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী ছিলেন।

ফাতেমা জানান, তাদের বাবা জহিরুল ইসলাম চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার মা-বাবার ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন বোন। ফাতেমার বড় বোন ফারজানা পদ্ম বিবাহিত। এক মেয়ে ও স্বামীসহ ইটালিতে থাকেন। আরেক বোন ডা. ফারহানা পাপড়ি স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে থাকেন। তিনি নিজে (ডা. ফাতেমা পুষ্প) কুমিল্লা ময়নামতি মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের ইনডোর অফিসার।
চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটোয়ারীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক মির্জা জাকির, নিহতের বড় ভাই মো. নঈমুদ্দিন খান, মো. নাছির উদ্দিন খান, ছোট ভাই মো. ফোরকান উদ্দিন খান, বড় জামাতা আরিফুর খান, বড় মেয়ে ফারজানা শাহীন পদ্ম, ছোট মেয়ে ফাতেমা শাহীন পুষ্প, চাচাতো ভাই মানিক খান, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী খাদিজা আক্তার বেবি, বড় ভাইয়ের স্ত্রী শামসুন্নাহার আক্তার, বড় ভাইয়ের ছেলে ইফতেখার আহমেদ এবং বড় ভাইয়ের মেয়ে রোবেনা সুলতানা।
গত ৪ জুন চাঁদপুর শহরের ষোলঘর পাকা মসজিদ এলাকায় নিজ বাসভবন থেকে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ শাহীন সুলতানা ফেন্সীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

খুনের পর ফেন্সির নিথর দেহ ও কলেজ কক্ষে অধ্যক্ষ ফেন্সি (বামে)

এই ঘটনায় ফেন্সীর ভাই ফোরকান খান বাদী হয়ে ফেন্সীর স্বামী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী জুলো বেগমসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে চাঁদপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় জহিরুল ইসলাম ও জুলেখা বেগমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ৬ জুন চাঁদপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত জহিরুল ইসলামের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এবং জুলেখা বেগমকে জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেয়।

প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক

Share