Home / উপজেলা সংবাদ / ফরিদগঞ্জ / স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে ৫ অস্ত্রের তথ্য দিলেন চাঁদপুরের ইসমাইল বেঙ্গল
Ismail--bengle

স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যে ৫ অস্ত্রের তথ্য দিলেন চাঁদপুরের ইসমাইল বেঙ্গল

দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে রয়েছে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধের অসীম সাহসী বীর যোদ্ধা বেঙ্গল প্লাটুনের ঢাকা মহানগরের কমান্ডার ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল। তিনি বলেছেন, জনসমর্থিত সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে সরকার ও বিরোধী দল ব্যর্থ হলে সমগ্র দেশবাসী সমূহ বিপদের সম্মুখীন হবে।

শুক্রবার (৪ মে) চাঁদপুর টাইমসের স্টাফ করেসপন্ডেট আতাউর রহমান সোহাগকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। পরে তিনি সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি জাতীয়বাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের প্রধান উপদেষ্টা। রাজনীতির মাঠেও সক্রিয় এ নেতা বর্তমানে বিএনপির নির্বাহী কিমিটির অন্যতম সদস্য।

ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরাইল ও ভারত ১/১১-এর মাধ্যমে ২০০৭ সালে এদেশের চলমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নস্যাত করে দেয়। তাদেরকে সহায়তা করে এদেশের কিছু ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক দল, পরজীবী সুশীল সমাজ ও লোভী সামরিক বেসামরিক আমলা।

২০০৬ সাল পর্যন্ত আমাদের অর্থনীতি ছিল স্বনির্ভর। এ জন্যই তৎকালীন মন্ত্রী ড. মঈন খাঁন বিশ^ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর হুয়াদু – এর মুখের উপর (অউই) নামক রক্তচোষা সংস্থার অন্যায্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পেরেছিলেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার ৫টি শক্তিশালী অস্ত্র ছিলো।

উক্তো অস্ত্রসমূহ হলো- ১. জনপ্রিয় ও জনসমর্থিত সরকার ও বিরোধী দল। ২. শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ। ৩. ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী। ৪. যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও নিরপেক্ষ প্রশাসন। ৫. স্বাধীন গণমাধ্যম। কিন্তু ২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে সা¤্রাজ্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার ৫টি অস্ত্রই অকেজো ও নিস্তেজ করে ফেলেছি।

দেশের বর্তমান অবস্থা সর্ম্পকে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ বলেন, আমাদের রাষ্ট্র এখন নিরস্ত্র ও সার্বভৌমত্বহীন ভূখন্ড মাত্র। ২০০৭ সালে সা¤্রাজ্যবাদের আশীর্বাদপুষ্ট সরকার দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করার লক্ষ্যে মাইনাস-টু ফর্মুলা বাস্তাবায়ন করতে চেয়েছিলো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন মনোভাব ও জনগণের দেশপ্রেমের নিকট মাইনাস- টু ফর্মুলার বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

পরে ২০০৯-২০১৮ সালের সরকার মাইনাস-ওয়ান ফমৃুলার বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। নির্ভরযোগ্য ও যোগ্য নেতৃবৃন্দকে হামলা-মামলা ও বিচার প্রহসনের মাধ্যমে নিস্তেজ করে ফেলে। যার ফলে আমরা এখন দন্ত নখরহীন বাঘের ন্যায়। সামান্য কাঠৃুরিয়া যাকে যে কোন সময় হত্যা করতে সক্ষম। এর অংশ হিসাবে মৌচাকের রাণী বেগম খালেদা জিয়া এখন জেল খানায় অন্তরীণ।

বেগম খালেদা জিয়াকে মৌচাকের রানী হিসাবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, একটি রাণী মৌমাছিকে ঘিরেই একটি মৌচাক সৃষ্টি হয়, যেখান থেকে আমরা মধু আহরণ করি। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে যদি রাণীকে সরিয়ে নেন বা মাইনাস করেন তবে মৌমাছিরা আর মৌচাকে থাকবে না, তারা ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত হয়ে পাখির খাদ্যে পরিণত হবে।

তদ্রæপ আমাদের দেশে যে কয়েকটি রাজনৈতিক দল বা মৌচাক রয়েছে, উক্ত রাজনৈতিক দলের প্রাণপুরুষ বা মৌচাকের রাণীকে যদি মাইনাস করা হয় বা জোর করে আসল রানীকে বাদ দিয়ে নকল রাণী স্থাপন করা হয় তবে উক্তো রাজনৈতিক দলটিও টেকসই হবে না। আমরা এখন উক্ত পর্য্য়া অতিক্রম করছি। এমন দুর্বল অবস্থায় কোন জাতি তার অস্বিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারে না। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের স্বার্থে কোন রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব বিপন্ন হোক তা আমি চাই না। কেননা তাহলে আমাদের দেশ বিদেশীদের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হবে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ সর্ম্পকে তিনি বলেন, মৌমাছিরা যেভাবে মৌচাককে এবং তাদের রাণীকে রক্ষায় জীবন বাজী রেখে প্রতিরোধ করে আমাদেরকেও তদ্রæপ জীবন বাজী রেখে আমাদের মৌচাকের রাণী তথা বেগম জিয়াকে মুক্ত করে যথাস্থানে স্থাপন করতে হবে। আর এতেই রয়েছে রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ।

প্রবীণ এই মুক্তিযোদ্ধা পরিবর্তনশীল বৈশি^ক প্রেক্ষাপটে করণীয় সর্ম্পকে বলেন, ২০০৭-২০১৮ সময়কাল পর্যন্ত ভূরাজনীতি ছিল এককেন্দ্রিক বা টহরঢ়ড়ষধৎ কিন্তু ২০১৮ সালের বাস্তবতা ভিন্ন। বর্তমানে এককেন্দ্রিক বিশ^ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাশিয়া-চীন-ইরান-তুরস্ক ঐক্যবদ্ধভাবে অপর একটি মেরুর সৃষ্টি করেছে। ভারত ইতিমধ্যে মার্কিন পক্ষ ত্যাগ করে চীন রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হয়েছে। ভারতের এই কক্ষচ্যুতি আমেরিকা ও ইসরাইল মেনে নেবে না, তাই এতোদিন ভারত বাংলাদেশ যেভাবে প্রভাব খাটিয়ে পছন্দের দলকে ক্ষমতায় রেখেছে ভবিষ্যতে তা করতে সক্ষম হবে না। ফলে এদেশের ক্ষমতার পটপরির্বতন অবশ্যম্ভাবী।

এমতাবস্থায় আমি বর্তমান সরকাকে বলব, বিদেশীদের বলে বলীয়ান হয়ে শাসন করার দিন শেষ হয়ে গেছে। দেশের জনগণকে আস্থায় নিয়ে গণসমর্থিত সরকার গঠনে মনোযোগী হোন এবং জনসমর্থিত সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য, স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করুন। এটি করতে ব্যর্থ হলে সরকার ও বিরোধী দল তথা সমগ্র দেশবাসী সমূহ বিপদের সম্মুখীন হবে।

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট-আতাউর রহমান সোহাগ

Leave a Reply