Home / সারাদেশ / লেনদেন ও নারীঘটিত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচজনকে জবাই করে হত্যা (ভিডিও)
লেনদেন ও নারীঘটিত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচজনকে জবাই করে হত্যা (ভিডিও)

লেনদেন ও নারীঘটিত ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারের পাঁচজনকে জবাই করে হত্যা (ভিডিও)

নারায়ণগঞ্জ  জেলা শহরের ২ নং বাবুরাইল এলাকায় প্রবাসী ভাড়াবাড়িতে টাকা পয়সা লেনদেন ও নারীঘটিত ঘটনায় একই পরিবারের পাঁচজনকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের কারও নাম প্রকাশ করা হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এস আই আব্দুর রাজ্জাক জানান, ‘ঘটনায় নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম অজ্ঞাতদের আসামী করে থানায় একটি এজাহার করেছেন।’

নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ, দুইজন নারী এবং দুটি শিশু রয়েছে। নিহতরা হলেন: তাসলিমা (৩৫), তার ছেলে শান্ত (১০), মেয়ে সুমাইয়া (৫), তাসলিমার ছোটভাই মোরশেদুল (২২) ও তার জা (দেবর/ভাসুরের স্ত্রী) লামিয়া (২৫)।

নিহত লামিয়ার স্বামী শরীফ রাতে স্বজনদের মৃতদেহ দেখে সাংবাদিকদের জানান, ‘আমার সাথে রাতে শেষ কথা হয়েছে সাড়ে ৯ টায়। এরপর থেকে আমার সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। কারা এ ঘটনা ঘটাতে পারে আমি এখনো নিশ্চিত নই।’

নিহত তাসলিমার মা মোর্শেদা বেগম জানান, ‘কেন অগরে মারলো আমি কইতে পারতাসিনা। তবে ওরা এক মাস আগে ঢাকার কিছু লোকের হুমকির কারণে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে একেবারে।’

কাদের হুমকি এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাসলিমা ঢাকার বাহাদুর, বাদশা, বাদলসহ প্রায় আট-দশ জনের কাছ থেকে সুদে বেশ কিছু টাকা আনে। এই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতো বাহাদুররা। তারা টাকার জন্য তাসলিমার স্বামীকে (শফিকুল) দু’দিন পর পর আটকে রেখে নির্যাতন করত এবং টাকা চাইত। গত এক মাস আগে তাকে আটকে রেখে তাসলিমাসহ সকলের ঠিকানা জানতে চায় তারা।’

তিনি বলেন, ‘আমি এই লেনদেনের কথা জানতে পেরে গ্রামের দুটি জমি বিক্রি করে তাদের টাকা দেই। তবুও তারা কেন অগরে মারল বুঝতাসিনা।’

নিহত তাসলিমার মা মোর্শেদা আরো জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে নান্দাইল থানার চরবেলাবাড়ি এলাকায়। তিনি ঢাকার ধানমণ্ডি ৭ নম্বরে খালার বাড়িতে থাকেন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তার ছেলে মোরশেদুলের সঙ্গে তার সবশেষ কথা হয়। এরপর থেকে সারাদিন মেয়ে তাসলিমা ও ছেলে মোরশেদুলের নম্বর বন্ধ ছিল।

শনিবার রাত ৭টার দিকে নিহত তাসলিমার দেবর শরীফ মিয়া কিশোরগঞ্জের পাহাটি এলাকা থেকে বেড়াতে এসে দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। পরে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে মোরশেদুলের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যদের ডেকে আনেন। তারা বাড়ির অন্য ভাড়াটিয়াদের উপস্থিতিতে দরজার তালা ভেঙ্গে ভেতরে ৫টি লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

মোর্শেদা বেগম জানান, ‘মোর্শেদুল আমাকে কয়েক দিন আগে ফোন করে বলেছিলেন যেন তার নানির কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে দেই। এই টাকা দিয়ে সে ব্যবসা করবে। পরে ফিরিয়ে দিবে। কিন্তু আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম যে তাদেরকে ঢাকা থেকে টাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে, আর তাই জরুরি টাকার দরকার।’

তাসলিমার ননদ শহরের খানপুরের বাসিন্দা হাজেরা বেগম জানান, তাসলিমার স্বামী শফিক মিয়া গাড়ি চালক। তিনি ঢাকায় প্রাইভেটকার চালান। তিনি সপ্তাহে একদিন বাড়িতে আসেন। ছেলে-মেয়ে নিয়ে বাবুরাইল এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছয়তলা বাড়ির নিচতলায় কয়েক মাস আগে ভাড়া নেন। তার ভাই ময়মনসিংহ থেকে এসে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে সবাইকে খবর দেন। পরে তালা ভেঙ্গে পাঁচজনের গলাকাটা লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। তবে কখন এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।

নিহত তাসলিমার খালাতো ভাই দেলোয়ার জানান, ‘আমি শুনে এখানে এসেছি, এত নির্মম কিভাবে হয় মানুষ। বাচ্চাদেরকেও অনেক কষ্ট দিয়ে মারসে। জামাইরে ঢাকায় খবর দিসি অই শুইন্না অজ্ঞান হইয়া গেসে। অই সকালে আইলে বুঝতে পারমু আসলে কি অইসে।’

বাড়ির মালিক আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইলের চাচাতো ভাই হাজী মোহাম্মদ হোসেন জানান, গত নভেম্বর মাসে শফিক ও তার স্ত্রী তাসলিমা ২ রুমের ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে রাত ৮টার দিকে নিহতের স্বজনরা ঘরটির তালা ভেঙ্গে পাঁচজনের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়।

পাশের বাড়ির আরেক ভাড়াটিয়া গৃহিণী রহিমা বেগম জানান, উনাদের কাছে এরকম খারাপ কিছু দেখিনি। আমি ১৫ দিন হলো এই বাড়ীতে ভাড়া এসেছি। তবে খুনের পর বাইরে থেকে কে বা কারা তালা দিয়েছে তাও জানিনা। রাতে কিভাবে তারা বাড়িতে ঢুকল তাও বলা যাচ্ছেনা। কারণ গেটের চাবিতো বাইরের কারো কাছে থাকে না।’

পুলিশের ঢাকা জোনের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) মোহাম্মদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিহতদের হত্যাকারীদের পেশাদার মনে হয়নি। বাচ্চাদের গায়েও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আমরা পারিবারিক নাকি অন্য ঘটনা তা খতিয়ে দেখছি। আশা করছি খুব শিগগিরই হত্যাকারীদের সনাক্ত করতে পারব।’

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন জানান, ‘আমরা ধারণা করছি পারিবারিক বিরোধ নিয়েই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যারা হত্যা করেছে তারা অপেশাদার খুনী বলেই আমাদের মনে হয়েছে এবং তারা পূর্ব পরিচিত ছিল। একই ফ্লোরে তিনজনের লাশ পড়ে ছিল, এটি পারিবারিক দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।’

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ হাজী ওবায়েদুল্লাহ জানান, তিনি খবর পেয়ে ওই কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন সেখানে একটি কক্ষে তিনজনের লাশ ও অপরকক্ষে দুইজনের লাশ দেখতে পেয়েছেন। তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। খবর পেয়ে প্রশাসনের লোক এসে তাদেরকে ওই কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে ভেতর থেকে আটকে দিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেহাম্মদ শাহজালাল জানান, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে আনা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তবের স্বার্থে এখন পরিস্কার কিছু বলা যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটন হলে আপনাদেরকে জানাব।

সুরতহাল শেষে নারায়ণগঞ্জ সিআইডির এএসপি মোঃ এহসানউদ্দিন চৌধুরী দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘হত্যাকারীরা একাধিক ছিল, তবে তারা পেশাদার ছিলনা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। দুজন মহিলা ও ছেলের গলায় ফাঁস ছিল। আর মেয়ে শিশুর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল।

তিনি জানান, আমরা ঘরের তৈরি করা খাবার হালুয়া, রুটি তাজা পেয়েছি। তাতে ধারণা করা হচ্ছে হত্যাকাণ্ড ৬/৭ ঘন্টা আগে ঘটানো হয়েছে। তবে সিআইডির ফরেনসিক রিপোর্ট পাবার পর সম্পূর্ণভাবে জানা যাবে। আমরা কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। আশা করি আসামিরা দ্রুতই গ্রেফতার হবে।

নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য শহরের ভিক্টোরিয়া ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার রাতে ২ নং বাবুরাইল এলাকার প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের ১৩১/১১ নং বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

 

এ সংক্রান্ত আপডেট খবর জানতে ক্লিক করুন

 

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ১২:৩১ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬, রোববার

এমআরআর