Home / সাক্ষাৎকার / ‘অভিযানের আগে চাঁদপুরে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হতো’
‘অভিযানের আগে চাঁদপুরে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হতো’

‘অভিযানের আগে চাঁদপুরে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হতো’

‘আগে চাঁদপুর জেলায় প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হতো, এখন আর তা হয় না, শতকরা ৪০ ভাগে নেমে এসেছে, আপনাদের কাছে এটা অস্বাভাবিক মনে হলেও বাস্তব অবস্থা এটাই।’ চাঁদপুর টাইমসের সাথে একান্ত আলাপকালে গোয়েন্দা কর্মকর্তা খন্দকার মো. ইসমাইল এ তথ্য জানিয়েছেন।

তাঁর মতে ‘যেখানে মানুষকে ভয়কে জয় করবে, সেখানে আমাদের দেশে ভয় মানুষকে জয় করে ফেলেছে। আমরা ভয় পাই মাদক ব্যবসায়ীকে, মাদকের কারণে প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা মায়ানমার চলে যাচ্ছে।’

চাঁদপুর টাইমসের সাথে একান্ত আলাপকালে চাঁদপুর জেলায় মাদকবিরোধী অভিযানে সর্বোচ্চ মাদক উদ্ধার, আসামী সনাক্ত ও আটক করার ক্ষেত্রে গত আগস্ট মাসসহ টানা ১৬ বার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খন্দকার মো. ইসমাইল হোসেন এসব কথা বলেন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইন শৃঙ্খলা ও অপরাধ দমন সভায় আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী হিসেবে পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার তাকে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেন।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকতার সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি জানান, ‘চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের স্বপ্ন “মাদক মুক্ত চাঁদপুর” বাস্তবায়নে স্যারের নেতৃত্বে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। চাঁদপুরে কর্মকালিন সময়ে আমি ১৬ বার পুরস্কৃত হয়েছি।’

তাঁর দাবি, ‘পুরষ্কারের চেয়ে আমার কাছে মানুষের ভালোবাসা অনেক বেশি মূল্যবান। সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় অবিভূত। মাদক বিক্রেতাদের আটকের পরে মানুষ যখন আমাকে ধন্যবাদ জানায় তখন আমার কাজের গতি সঞ্চার হয়। তখন টানা ২৪ কিংবা ৪৮ ঘন্টা কাজ করলেও পরিশ্রম কিংবা নিজেকে ক্লান্ত মনে হয় না। ’

তিনি বলেন, ‘মাদকের কারণে প্রতিদিন আমাদের দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা মিয়ানমার চলে যাচ্ছে। চাঁদপুরের উপজেলা গুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ইয়াবা বিক্রি হতো কচুয়া উপজেলায়। এছাড়া ফেন্সিডিল গাাঁজাসহ অন্যান্য মাদকতো রয়েছেই।’

জেলায় আনুমানিক শতাধিক মাদকের ডিলার রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মাদক বিক্রেতারা হলেন, আমির আলী, নুরুজ্জামান, কামরুল, শরীফ, সুমন, সুমি বেগম, আলমগীর, সোহাগ, এরশাদ প্রমুখ।

শুধুমাত্র চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকা থেকে রেললাইন পর্যন্ত ৩২ জন লিস্টেট মাদক বিক্রেতা ইয়াবা বিক্রি করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মাদক বিক্রেতারা জেল থেকে অল্প সময়ের মধ্যে ছাড় পাওয়ায় মাদক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি মনে করি অল্প সময়ে মাদক বিক্রেতাদের ছেড়ে দেয়ার চেয়ে আটক না করাই ভালো।’

‘কারণ, এরা জেল হাজতে যাওয়ার পরে হাজতে আটক মাদকের বড় বড় ডিলারদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং মাদক ক্রয় বিক্রয়ের সহজ রাস্তা জেনে যায়। তাই আটকদের বিশেষ আইনে দীর্ঘ মেয়াদী সাঁজা দেয়ার ব্যাবস্থা করা উচিৎ। যাতে তারা সহজেই ছাড়া না পায়। ’

কোনো মাদক ব্যবসায়ী জামিন পেয়ে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো মাদক ব্যবসায়ী জামিন কিংবা মামলা থেকে অব্যহতি পেয়ে যদি মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেয় তাহলে তার নাম গ্রিনিচ বুকে তার নাম উঠবে। অর্থাৎ এ বিষয়টি হয় না।’

চাঁদপুরে মাদকবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চাঁদপুরে পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে সাম্প্রতিক সময়ে মাদকবিরোধী ব্যাপক অভিযান হওয়ায় মাদক বিক্রেতাদের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে। আগে যেখানে মাদক বিক্রেতাদের সংখ্যা বলতে না পারলেও এখন তাদের সংখ্যা গুণে বলা যায়।’

তাঁর বক্তব্য, ‘আমার বিশ্বাস পুলিশ সুপার যদি আরো এক বছর এ জেলায় থাকে এবং আমাকে শুধুমাত্র এসপি স্যারের কাছে জবাবদিহীতা করতে হয় তবে চ্যালেঞ্জ করতে বলতে পারি এখানে একজনও মাদক বিক্রেতা থাকবে না। আমি বিশ্বাস করি আমি যদি এ জেলায় মাদক নির্মূলের অবদান রাখতে পারি তবে আমার জেলায় অন্য কেউ অবদান রাখবে।’

মাদকের আসামী আটকের পর জটিলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসামী আটকের ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়ি তা হলো কেউ সাক্ষি দিতে চায় না। আগে মানুষ ভয়কে খেতো আর বর্তমানে ভয় মানুষকে খাচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে সব শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’

অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে সোস্যাল মিডিয়ায় আটক মাদক ব্যবসায়ীদের ছবি প্রকাশ করলেই অনেকে কমেন্ট বক্সে কিংবা পেজের ইনবক্সে চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামের মাদকের সন্ধান দেন, এ বিষয়ে গোযেন্দা বিভাগের ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইসামইল জানান, ‘বিষয়টি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারেও প্রতিনিয়ত আসছে। আমার দায়িত্ব ও শুধু চাঁদপুর সদর ও হইমচর -উপজেলা। তারপরেও অন্য উপজেলাগুলোতে মাঝে মাঝে করি, কিন্তু সেটার জন্য এসপি স্যারের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। কেননা সেখানে আমাদের আরো অন্যান্য কর্মকর্তারা রয়েছেন।’

প্রসঙ্গত, দু’সন্তানের জনক গোয়েন্দা বিভাগের এ কর্মকর্তার জন্ম কুমিল্লা জেলার লাংগলকোর্ট থানায় মন্নারা গ্রামের খন্দকার বাড়ি। চাঁদপুর এ কর্মকর্তা গত আড়াই বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। মাদক বিরোধী অভিযানের নেতৃত্বে থাকায় চাঁদপুরের জনসাধারণের মাঝে যেমনিভাবে জনপ্রিয়, তেমনি সোস্যাল মিডিয়াতেও রয়েছে তার ব্যপক সাড়া।

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:০০ এএম, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ

‘অভিযানের আগে চাঁদপুরে প্রতিদিন ৫ কোটি টাকার ইয়াবা বিক্রি হতো’

About The Author

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম

Leave a Reply