Home / কৃষি ও গবাদি / চাঁদপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যভ্রষ্ট : ১ লাখ মে.টন উৎপাদন কম
চাঁদপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যভ্রষ্ট : ১ লাখ মে.টন উৎপাদন কম
ফাইল ছবি

চাঁদপুরে আলু উৎপাদন লক্ষ্যভ্রষ্ট : ১ লাখ মে.টন উৎপাদন কম

চাঁদপুর দেশের আলু উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি। আলু উৎপাদনে মুন্সিগঞ্জের পরই চাঁদপুরের অবস্থান। এ বছর চাঁদপুর জেলায় আলু উৎপাদন লক্ষ্যভ্রষ্ট বা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি চাঁদপুরের সূত্র মতে, চলতি ২০১৭-১৮ বছরে জেলায় আলুর চাষাবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৮ শ’ ৯০ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৭২ হাজার মে.টন।

চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৫শ’৭৭ হেক্টর। উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার মে.টন। বছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১ লাখ ৪শ’মে.টন আলু উৎপাদন কম হয়েছে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া পরিসংখ্যান তথ্যে চাঁদপুর টাইমস মঙ্গলবার (২৯ মে) বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে।

কারণ হিসেবে কৃষি বিভাগ জানায়, চাঁদপুরে চাষাবাদ মৌসুমে ৪ দিনের টানা বৃষ্টিতে আলুর আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রোপণকৃত আলু বীজ নষ্ট হয়েছে। একদিকে আলু উৎপাদনে ক্ষতিগ্রস্থ অপরদিকে হাজার হাজার টাকা ধার দেনা করে লোকসানে কৃষকগণ হতাশ হয়ে পড়েন। সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নিচু এলাকায় ২ হাজার ২শ’হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছিল।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়,ওই সময় জেলায় ৩ হাজার ৭শ’ ৯২ হেক্টর ও সদরে ৯শ’হেক্টর জমির আলুবীজ পানির নীচে ছিল। অসময়ের বৃষ্টির পানি জমে রোপণকৃত আলুর বীজ ও প্রয়োগকৃত সার সবই বিনষ্ট হয়ে গেছে।

প্রাপ্ত তথ্যে মতে,চাঁদপুর সদরে চাষাবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯শ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ২৭ হাজার ৮শ’৭১ মে.টন। হাইমচরে চাষাবাদ হয়েছে ২শ ১৫ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ১শ’ ৯০ মে.টন। মতলব উত্তরে চাষাবাদ হয়েছে ৯শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৫শ’ মে.টন। মতলব দক্ষিণে চাষাবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৬শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ৫৭ হাজার ২শ’ ৫০ মে.টন।

হাজীগঞ্জে চাষাবাদ হয়েছে ৯শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৬শ’৩৪ মে.টন। শাহরাস্তিতে চাষাবাদ হয়েছে ২৫ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ৪শ’ ৭০ মে.টন | কচুয়া চাষাবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪শ ৫০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ৫৩ হাজার ৪শ’৬৭ মে.টন। ফরিদগঞ্জে চাষাবাদ হয়েছে ১শ ৪০ হেক্টর এবং উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ২শ’৪০ মে.টন।

এদিকে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ৫ উপজেলায় কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে ১২ টি। সবগুলোর ধারণ ক্ষমতা ৫৪ হাজার মে.টন। এবছরও প্রায় ১ লাখ ২৭ হাজার মে.টন আলুর সংরক্ষণের বাহিরে থেকে গেছে। কোনো কোনো চাষি বা মধ্যস্বত্বভোগী দৈনন্দিন বাজারে খুচরা বিক্রি করছে। আবার ওইসব আলু চাষীদের পরিচর্যায় ঘরের মাচায় বা মেঝে কৃত্রিমভাবে সংরক্ষণ করে রাখার উদ্যোগ নিতে হয়েছে।

প্রসঙ্গত, আলু আমাদের দেশের প্রধান সবজি। চাঁদপুরে এর ফলন বেশি। নদী বিধৌত,আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ ,আলু পরিবহনে সুবিধা, কৃষকদের আলু চাষে আগ্রহ, কৃষি বিভাগের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রযুক্তি প্রদান, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত,কৃষিউপকরণ পেতে সহজলভ্যতা, বীজ ,সার ও কীটনশাক ব্যবহারে কৃষিবিদদের পরামর্শ , ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে কৃষিঋণ প্রদান ইত্যাদির কারণে চাঁদপুরের আলুচাষীরা আলু চাষে আগ্রহী।

সারা বছরই সবজি হিসেবে আমাদের দেশে আলুর বেশ চাহিদা রয়েছে। সকল বয়সের মানুষ আলু খেতে পছন্দ করে । চিকিৎসকগণ ডায়াবেটিক রোগীদের পরিমাণ মত আলু খেতে পরামর্শ দেন।সবজি ছাড়াও আলু দিয়ে প্রায় ১ শ’প্রকারের মুখরোচক খাবার তৈরি করা যায় বলে কৃষিবিদগণ দাবি করেন।

গৃহিণীরাও আলুর তৈরি বিভিন্ন প্রকার খাবার বানাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সব বয়েসীরা আলুর তৈরি খাবার পছন্দ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল,কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দুপুরে গেইটে আলুর তৈরি খাবার খেতে তারা খুবই অভ্যস্থ।

দেশের বেশিরভাগ হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বিভিন্ন খাবারের দোকানে আলুর রকমারী খাবার তৈরি করে রসনা বিলাসদের তৃপ্তি প্রদান করে থাকে। বড় বড় সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবারের ম্যানুর সাথে আলু থাকছেই।

চাঁদপুরের ক্ষুদ্র ও মাঝারী চাষি ও ব্যবসায়ীরা উৎপাদনের দিকে লোকশান হলেও দামে তারা লাভবান হচ্ছে । বর্তমানে রমজান মাসে ১৫- ২০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। আসন্ন রমজানের পর ঈদে আরো আলুর মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ খামারবাড়ির একজন কর্মকর্তা চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এবার আলু চাষাবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ’৬০ মে.টন। এতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ১শ’৮৮ মে.টন ।

এবার চাষাবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৮ শ’ ৯০ হেক্টর । মৌসুমী বায়ূর প্রভাবে অনবরত ২-৩ দফায় অসময়ে প্রবল বৃষ্টিপাতে কৃষকগণ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় এবার উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৫ শ ৭৭মে.টন।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমাদের কৃষিবিদরা আলু সংরক্ষণের জন্যে চাষীদেরকে সব ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। তবে ভবিষ্যতে চাঁদপুরে বেসরকারিভাবে উদ্যোক্তারা কোল্ডস্টোরেজ নির্মাণ করলে লোকসান হবে বলে মনে হয় না। অন্যান্য বছর একর প্রতি উৎপাদন ছিলো ২৫-২৬ মে.টন । এবার ফলন হয়েছে ১৫-১৬ মে.টন ‘

চাঁদপুরের আলু চাষিরা বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকে। কম-বেশি সব উপজেলাই আলুর ফলন ও চাষাবাদ হয়ে।বিগত ক’বছর ধরেই চাঁদপুরে ব্যাপক আলু উৎপাদন হয়ে আসছে।

প্রতিবেদক :আবদুল গনি
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪:৫০ পিএম,২৯ মে ২০১৮,মঙ্গরবার
এজি

Leave a Reply