Home / খেলাধুলা / বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় : প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় : প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় : প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে রোববার(৩০ অক্টোবর) বাংলাদেশ ১০৮ রানে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় করায় অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা তাঁর অভিনন্দন বার্তায় দ্বিতীয় টেস্টে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করায় সকল খেলোয়াড়, কোচ, দলের কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)’র কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টকে সকলকে অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে বলেন, ‘আমাদের খেলোয়াড়দের টিম স্পিরিট ও তাদের অসাধারণ নৈপুণ্য দেখে গোটা জাতি গর্বিত।’

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থনের কারণেই এ ঐতিহাসিক সাফল্য এসেছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত মেয়াদে বাংলাদেশ বহু প্রতীক্ষিত টেস্ট ও ওয়ানডের মর্যাদা লাভ করে।

বেন স্টোকসকে বোল্ড করেই সটান দাঁড়িয়ে গেলেন সাকিব আল হাসান। একেবারে মিলিটারি ঢংয়ে- সোজা হও ভঙিতে। কপালে হাত ঠেকিয়ে স্যালুট করলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এক টেস্ট জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।

বেন স্টোকস বোল্ড হওয়ার অর্থ বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত। সুতরাং উইকেট পাওয়ার উদযাপনে ভিন্নতা আনতেই পারেন সাকিব। এরপরই একই ওভারে তিনি ফিরিয়ে দিলেন আদিল রশিদ আর জাফর আনসারিকে। বাংলাদেশের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় তখন একেবারে হাতের মুঠোয়।

এরপর এক ওভার বিরতি দিয়ে ইংলিশদের পরাজয়ের কফিনে সর্বশেষ পেরেক ঠুকে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। স্টিভেন ফিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করেন ১৯ বছরের এই তরুণ। ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিনেই ১০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো হারিয়ে দিলো বাংলাদেশ।

টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত কোনো শক্তিকে এই প্রথম হারাতে পারলো বাংলাদেশ। এর আগে জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিতলেও ওই দল দুটির কোনো প্রতিষ্ঠিত শক্তি ছিল না। কারণ জিম্বাবুয়ে এমনিতেই ভঙ্গুর একটি দল।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতে আসলেও সেবার জাতীয় দল নামধারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের তৃতীয় সারির একটি দল খেলেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেই দলটির অন্তত ১০ জনেরই ওই সিরিজের আগে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না।

এর আগে বেশ কয়েকবার জয়ের দ্বারপ্রান্তে গিয়েও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে মুলতানে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০০৬ সালে ফতুল্লায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে পরাজিত হতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। দুঃখ ভোলার মিশন এবারও ছিল বাংলাদেশের সামনে।

সেই চট্টগ্রামে এবারও বঞ্চিত হতে হয়েছিল। তবে ঢাকায় এসে আর বঞ্চিত হওয়ার সুযোগই দিলো না সাকিব-মিরাজরা। ঐতিহাসিক টেস্ট জয়টি এবার এসেই গেলো। ঢাকায় ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সেই ইতিহাস সৃষ্টি করলো বাংলাদেশ।

ঐতিহাসিক টেস্ট জয়টা আসতে পারতো চট্টগ্রামেই। ওই টেস্টে ব্যাটসম্যানরা কিছু ভুল যদি না করতেন, তাহলে নিশ্চিত জিতে যেতো টাইগাররা। তাহলে ইংল্যান্ডের মত দলকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডোবাতে পারতো বাংলাদেশ; কিন্তু সেটা হলো না ২২ রানের পরাজয়ের কারণে।

আলোচনায় ছিল ঢাকা টেস্ট। এখানে কেমন করে বাংলাদেশ- এটাই ছিল চ্যালেঞ্জ। ঢাকা টেস্টের প্রথম থেকেই বাংলাদেশ প্রভাব বিস্তার করে খেলতে থাকে ইংল্যান্ডের ওপর। শুধুমাত্র প্রথম ইনিংসে শেষ দিকে ৪৯ রানে ৯ উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। তবে, সেটা কাটিয়ে ওঠে বোলারদের দৃঢ়তায়। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিড নেয়ার স্বপ্নও প্রসারিত হচ্ছিল তখন। যদিও শেষ দিকে ইংল্যান্ড ২৪ রানের লিড নিয়ে ফেলেছিল।

সেই লিড টপকে বাংলাদেশ তর তর করে এগিয়ে যেতে থাকে। তামিম-ইমরুলের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে ঝড়ো সূচনা, এরপর ইমরুল-মাহমুদুল্লাহর দুর্দান্ত জুটি, সাকিব, শুভাগতর মাঝারি মানের ইনিংস- বাংলাদেশকে এনে দিলো ২৭২ রানের লিড। ২৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অ্যালিস্টার কুক আর বেন ডাকেট বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে জয়ের কক্ষপথ থেকেই সরিয়ে দিচ্ছিল প্রায়।

দুজন মিলে ১০০ রানের জুটি গড়ার পর তৃতীয় সেশনের শুরুতেই উইকেট হারায় ইংলিশরা। বেন ডাকেটকে তুলে নিয়ে প্রথম আঘাতটি হানেন মিরাজ। এরপর তার আক্রমণ অব্যাহতভাবেই চলতে থাকে। টানা তৃতীয় ইনিংসে তুলে নিলেন ৬ উইকেট। এক ম্যাচে নিলেন ১২ উইকেট। সবচেয়ে বড় কথা, এক সেশনেই ১০ উইকেট হারিয়েছে ইংল্যান্ড। যা এর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষে আর কখনও ঘটেনি।

এ যেন এক অবিশ্বাস্য টেস্ট। ক্রিকেট যদি হয় রাজকীয় খেলা, তাহলে সেই রাজকীয়তার ধারক-বাহক ইংল্যান্ড। টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে এক সময়ের শীর্ষে থাকা দল। যে দলে রয়েছে টেস্ট র‌্যাংকিংয়ের এক নম্বর ব্যাটসম্যান। যে দলে রয়েছেন ১০ হাজারেরও বেশি রান তোলা ব্যাটসম্যান। সে দলটির ব্যাটিং গভীরতা ১০ নম্বর পর্যন্ত, তারাই মেহেদী হাসান মিরাজ নামক এক ১৯ বছর বয়সী তরুণের হাতে দিশেহারা হয়ে পড়লো। নাস্তানাবুদ হলো স্পিনারদের ঘূর্ণির সামনে। সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজ মিলেই ধ্বংস করে দিলেন পুরো ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ।

অথচ স্বাগতিক বাংলাদেশের দেওয়া ২৭৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুভ সূচনাই করেছিল ইংল্যান্ড। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের স্কোরশিটে ঠিক ১০০ রান যোগ করেন অ্যালিস্টার কুক ও বেন ডাকেট। এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৬৪ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৬ রান করা ডাকেটকে সরাসরি বোল্ড করেন বাংলাদেশের এই স্পিনার। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই জো রুটকে (১) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন সাকিব।

এরপর গ্যারি ব্যালেন্সকে (৫) তামিম ইকবালের তালুবন্দি করান মিরাজ। মঈন আলিকে রানের খাতা (০) খুলতে দেননি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মঈন। ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা আলিস্টার কুককেও (৫৯) ফিরিয়ে দেন মিরাজ। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জনি বেয়ারস্টোকে ৩ রানের বেশি করতে দেননি বাংলাদেশের এই যুবা।

এর আগে তৃতীয় দিনের শুরুটা ভালোই করেছিলেন ইমরুল আর সাকিব। দুজন মিলে ৪৮ রানে জুটি গড়ে বাংলাদেশকে ২০০ রানের লিড এনে দেয়। তবে এরপরই ঘটে ছন্দপতন। ব্যক্তিগত ৭৮ রান করে মঈন আলির বলে এলবিডব্লিও হয়ে সাজঘরে ফিরে যান ইমরুল।

ইমরুলের বিদায়ের পর সাকিব-মুশফিকের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে ছিল টাইগার সমর্থকরা। তবে দুজনই হতাশ করলো। আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়ে সাকিবের (৪১) বিদায়ের পরের ওভারেই স্টোকসের বলে কুককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন মুশফিকও (৯)।

এরপর শুভাগত হোমের সঙ্গে ৩০ রানের জুটি গড়ে ব্যক্তিগত ১৫ রান করে আদিল রশিদের দ্রুত গতির সোজা বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফিরে গেছেন সাব্বির রহমান। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে তাইজুল, মিরাজ আর রাব্বিকে সঙ্গে নিয়ে আরও ২৮ রান তোলে শুভাগত। এতে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯৬। আর ইংলিশদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ২৭৩ রানের।

আর এ বিশাল জয় করায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিজয়ের এ ধারা আগামীতেও অব্যাহত রাখবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ৬: ৩৬ পিএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৬,রোববার
এইউ

Leave a Reply