হিজামা হল এমন একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি, যাতে মানুষের সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতা বিদ্যামান রয়েছে। হিজামা কি ও কেন, এর উৎপত্তি কবে থেকে?
হযরত আবু হুরাইরা (রা:) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সা:) বলেছেন, “জিবরীল (আ.) আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৭০
হিজামার পদ্ধতি:
শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ থেকে মেশিনের সাহায্যে রক্ত চুষে নেওয়া।
প্রসঙ্গত, হিজামায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা উত্তম এবং প্রত্যেকের চিকিৎসায় ভিন্ন ভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করা উচিত যাতে, রক্তজীবাণুর মাধ্যমে রোগ সংক্রমিত হতে না পারে।
হিজামার ব্যাপারে বর্ণিত কতিপয় হাদীছ শরীফ
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেউ হিজামা করতে চাইলে সে যেন আরবী মাসের ১৭, ১৯ কিংবা ২১ তম দিনকে নির্বাচিত করে। রক্তচাপের কারণে যেন তোমাদের কারো মৃত্যু না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে (হিজামা)।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর : ৩৪৮৬
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমি মেরাজের রাতে যাদের মাঝখান দিয়ে গিয়েছি, তাদের সবাই আমাকে বলেছে, হে মুহাম্মদ, আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার আদেশ করবেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর : ২০৫৩
হযরত আনাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে।” আল-হাকিম, হাদীছ নম্বর : ৭৪৮২
হযরত জাবির রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় হিজামায় শেফা রয়েছে।” ছহীহ মুসলিম, হাদীছ নম্বর : ২২০৫
হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খালি পেটে হিজামাই সর্বোত্তম। এতে শেফা ও বরকত রয়েছে এবং এর মাধ্যমে বোধ ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়।” সুনানে ইবনে মাজা, হাদীছ নম্বর : ৩৪৮৭
হযরত আবদুল্লাহ্ বিন আব্বাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হিজামাকারী কতই উত্তম লোক। সে দূষিত রক্ত বের করে মেরুদন্ড শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।” সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নম্বর : ২০৫৩
হিজামার প্রকারভেদ
এক. স্বাভাবিক অবস্থায় যেভাবে করবে। যথা : ক. আরবী মাসের ১৭, ১৯ ও ২১ তারিখের কোন একটি নির্বাচন করবে। খ. সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবারের কোনটিকে নির্বাচন করবে।
উল্লেখ্য, তারিখ ও দিনের মধ্যে বিরোধ হলে তারিখকে অগ্রাধিকার দিবে। গ. খালি পেটেই হিজামা করবে। সকালে খালি পেটে হিজামা করা উত্তম। ঘ. ফজরের পর হতে দুপুর ১২টার মধ্যে করবে। ঙ. হিজামার আগের ও পরের দিন সঙ্গম না করা উত্তম।
দুই. জরুরী অবস্থায় যেভাবে করবে- এতে মাস ও দিনের কোনো ধর্তব্য নেই। যখনই সমস্যা তখনই করা যেতে পারে। একসময় রসূলুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ঘোড়া থেকে পড়ে পায়ে আঘাত পাওয়ায় হিজামা করেছিলেন।
হিজামার নির্দিষ্ট স্থানসমূহ – ১. মাথার উপরিভাগ তথা মধ্যভাগ। ২. মাথার ঠিক মাঝখানে। ৩. ঘাড়ের উভয় পাশে।
৪. ঘাড়ের নীচে উভয় কাঁধের মাঝখানে। ৫. উভয় পায়ের উপরিভাগে। ৬. মাথার নীচে চুলের ঝুটির স্থলে।
ইহরাম ও রোযায় হিজামা – মুহরিম ও রোযাদারের জন্য হিজামা বৈধ। হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রদিয়াল্লহু আনহু থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহরিম ও রোযাদার অবস্থায় হিজামা করেছেন।” সুনানে তিরমিযী হাদীছ নম্বর : ৭৭৫
হিজামা (CUPPING) এর মাধ্যমে যে সব রোগের চিকিৎসা করা হয়ে থাকেঃ
১। মাইগ্রেন জনিত দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা, ২। রক্তদূষণ ৩। উচ্চরক্তচাপ ৪। ঘুমের ব্যাঘাত (insomnia) ৫। স্মৃতিভ্রষ্টতা (perkinson’s disease) ৬। অস্থি সন্ধির ব্যাথা/ গেটে বাত ৭। ব্যাক পেইন ৮। হাঁটু ব্যাথা ৯। দীর্ঘমেয়াদী সাধারন মাথা ব্যাথা ১০। ঘাড়ে ব্যাথা ১১। কোমর ব্যাথা ১২। পায়ে ব্যাথা ১৩। মাংসপেশীর ব্যাথা (muscle strain) ১৪। দীর্ঘমেয়াদী পেট ব্যথা ১৫। হাড়ের স্থানচ্যুতি জনিত ব্যাথা
১৬। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা ১৭। সাইনুসাইটিস ১৮। হাঁপানি (asthma) ১৯। হৃদরোগ (Cardiac Disease) ২০। রক্তসংবহন তন্ত্রের সংক্রমন ২১। টনসিলাইটিস ২২। দাঁত/মুখের/জিহ্বার সংক্রমন ২৩। গ্যাস্ট্রিক পেইন ২৪। মুটিয়ে যাওয়া (obesity) ২৫। দীর্ঘমেয়াদী চর্মরোগ (Chronic Skin Diseses) ২৬। ত্বকের নিম্নস্থিত বর্জ্য নিষ্কাশন ২৭। ফোঁড়া-পাঁচড়া সহ আরো অনেক রোগ।
২৮। ডায়াবেটিস (Diabetes) ২৯। ভার্টিব্রাল ডিস্ক প্রোল্যাপ্স/ হারনিয়েশান ৩০। চুল পড়া (Hair fall) ৩১। মানসিক সমস্যা (Psycological disorder) …এবং আরও অনেক রোগ। (তথ্য সূত্র- হিজামা ডট কম ডট বিডি)
ডেস্ক : ১৪ আগস্ট ২০১৬, রোববার
ডিএইচ