জাতীয়

কারিগরি ত্রুটিতে আবহাওয়া ওয়েবসাইট

‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগিয়ে আসায় সতর্ক সংকেত বাড়ালেও কারিগরি জটিলতায়’ ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ওয়েবসাইটে হালনাগাদ কোনো তথ্য দিতে পারেনি আবহাওয়া অধিদপ্তর।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মধ্যেই পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য এসেছে আবহাওয়া অধিদদপ্তর ও বিটিসিএলের পক্ষ থেকে। জটিলতা আসলে কোথায়, সে বিষয়টি কোনো পক্ষই খোলাসা করেনি।

এর আগে গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ফনীর সময়ও একই ধরনের জটিলতায় পড়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় বৃহস্পতিবার রাতে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে আবহাওয়ার ১৩ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়। সেই বুলেটিন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি ফেইসবুক পেইজেও প্রকাশ করা হয়।

সকালে সেই প্রবল ঘূর্ণিঝড় পরিণত হয় অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ঘণ্টায় সোয়াশ কিলোমিটার বেগের বাতাসের শক্তি নিয়ে বাংলাদেশের খুলনা উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে থাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তর সংকেত বাড়িয়ে সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলে।

অথচ এরকম জরুরি সময়ে সেই তথ্য ওয়েবসাইটে দেখাতে পারছিল না আবহাওয়া অধিদপ্তর। বিকাল পর্যন্ত ওয়েবসাইটের টিকারে ৩ নম্বর সংকেতের কথা দেখানো হচ্ছিল। বুলেটিন দেখতে ক্লিক করলে দেখানো হচ্ছিল আগের রাতের পুরনো বুলেটিন।

এমনকি ‘বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের’ ফেইসবুক পেইজেও দুপুর পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল আগের বিজ্ঞপ্তি।

তবে ফোনে যোগাযোগ করা হলে অধিদপ্তরের কর্মীরা ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের হালনাগাদ তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছিলেন। টেলিভিশনেও মাঝে মধ্যে তাদের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে দেখা যাচ্ছিল।

শুক্রবার বেলা দেড়টায় ফেইসবুকে এক পোস্টে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর কারণে ৪ নম্বর সংকেত জারির করা জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর। কিন্তু তখনও তাদের ওয়েবসাইটে ৩ নম্বর সংকেতের টিকার চলছিল।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ওয়েবসাইটে হালনাগাদ বুলেটিন দেওয়া সম্ভব হয় জানিয়ে আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, “পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, আশা করি শিগগিরই পুরো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

এদিকে সারাদিন ওয়েবসাইটে ঝড়ের খবর না পেয়ে অনেকে অধিদপ্তরের ফেইসবুক পেইজে চেষ্টা করেন। সেখানে তাদের আবহাওয়া অধিদপ্তরের হটলাইন ১০৯০ নম্বরে ফোন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাতেও কোনো তথ্য না পেয়ে অনেকেই সমালোচনায় মুখর হন ফেইসবুকে।

এম এস নেওয়াজ নামের আইডি থেকে একজন লেখেন, “ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছি না, ঘূর্ণিঝড় আপডেট পাচ্ছি ১৩ নম্বরটা, এরপরের আপডেটগুলো পাচ্ছি না, ওয়েবসাইট ঠিক করেন তাড়াতাড়ি।”

আবুল হাসান নামের আরেকজন লিখেছেন, “ফোন দিলে কোনো সাউন্ড রেসপন্স আসে না। মানুষের যখন আবহাওয়ার সংবাদ দরকার তখন আপনারা সেবা দিতে পারেন না। তহলে কি দরকার এই ভাঁওতাবাজির?”

জাকির আহমেদ সোহাগ নামের একজন মন্তব্য করেন, “ধান্দাবাজি করবেন না মানুষের সাথে, অনেকবার ট্রাই করার পর কল যায়, কিন্তু কোনো আওয়াজ আসে না।মানুষকে মিথ্যা আশ্বাস দিবেন না দয়া করে 

টিপু সুলতান নামের একজন লেখেন, ১০ বার ট্রাই করেও একবার লাইন পাওয়া যায় না।

ফিরতি বার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয়, “ভাই এই সময়টায় ইউজার বেশি হয়ে থাকে এবং নেটওয়ার্ক বিজি থাকে………… আশা করি আপনারা শুনতে পাবেন।”

বিকাল পৌনে ৩টায় হটলাইন ১০৯০ ও অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটের বিভ্রাটের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাহাদাৎ হোসেন, “হটলাইনে আমি নিজেও ট্রাই করেছি। ১০ মিনিট চেষ্টা করে পূর্বাভাস শুনতে পেরেছি। ঘূর্ণঝড়ের কারণে সবাই এখানে ফোনের চেষ্টা করছে, এজন্যে হয়ত অনেকে পাচ্ছে না। ওয়েবসাইটেও ইউজার বেড়েছে, তাতে হয়ত ঝামেলা রয়েছে…।”

এই জটিলতার কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত থেকে আমরা ওয়েবসাইটে আর আপডেট দিতে পারছি না।… আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো ত্রুটি নেই। বিটিসিএল-এর বিষয়, আমরা চেষ্টা করছি। আশা করি ওয়েবসাইট স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”অন্যদিকে বিটিসিএলের পরিচালক (জনসংযোগ ও প্রকাশনা) মীর মোহাম্মদ মোরশেদ তাদের দিকে কোনো সমস্যা নেই দাবি করে বলেন, “আমাদের ইন্টারনেট ডিভিশন সব চেক করে দেখেছে, আবহাওয়া অফিসের সাথেও কথা বলেছে। আমাদের ইন্টারনেট নিয়ে ওদের কোনো সমস্যা নেই। তাদের হোস্টিংয়ে সমস্যা থাকতে পারে, এটা আমাদের আওতায় পড়ে না।”

গত মে মাসে ঘূর্ণিঝড় ফনীর সময় একসঙ্গে বেশি ট্রাফিক সামলাতে না পেরে দীর্ঘ সময় অচল থাকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট। তখনও বিটিসিএলের ইন্টারনেট ও সার্ভার সেবাকে দায়ী করা হয়েছিল আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। তবে বিটিসিএল তা অস্বীকার করেছিল।

Share