চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় বর্তমানে তিন শতাধিক অবধৈ স’মিল রয়েছে। যা প্রতিবছর সরকারকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে। দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ব্যবস্থা না থাকায় একজনের দেখাদেখিতে অন্যজনও লাইসেন্স ছাড়াই স’মিল তথা করাত মিল চালিয়ে আসছে। অথচ এ ক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হচ্ছে বৈধ লাইসেন্স প্রাপ্ত মিল মালিকগণ।
এসব স’মিলগুলো একদিকে পরিবেশ দূষণ বাড়াচ্ছে অপরদিকে প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট করে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। বন্যপ্রাণীকূলরে আবাসস্থল কমে যাচ্ছে। এরমধ্যে অধিকাংশগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকেও কোনো ছাড়পত্র নেই। আমাদের বেঁচে থাকার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অক্সিজনে পেতে বাধাগ্রস্থ করছে।
আবার নদীভাঙ্গন এলাকায় দেদারছে গাছ কাটতে হচ্ছে। নতুন নতুন ভবন নির্মাণেও গাছ কাটতে হচ্ছে। জলবায়ূর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে প্রকৃতি । রোয়ানু, সিডর, নার্গিসের মত প্রভৃতি ঘূর্ণিঝড় প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিনিয়ত:এদের রসদ জোগাতে অপ্রাপ্ত ফল,ঔষধি ও অন্যান্য বনজ গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।
বছরে সারা মাস মিলগুলোর আশ-পাশে কাঠের গুঁড়ি যত্রতত্র ফেলে রেখে যাতায়ত ক্ষেত্রে প্রতিবদ্ধকতা, অবিরত শব্দ দূষণ সৃষ্টি ও মিলগুলোর রসদ যোগাতে অপ্রাপ্ত বয়সে বিভিন্ন প্রকার গাছ কেটে ফলছে।
এ সব মিলগুলো পরোক্ষ ভাবে গৃহনির্মাণ কাজে, কোনো কোনো দিনমজুর পরিবারের আয়ের উৎস,আসবাবপত্র তৈরি,জ্বালানী সরবরাহ ও বিভিন্ন উন্নয়নে গ্রহণযোগ্য ভূমিকা রাখলেও চলছে তো অবধৈ ভাবে। মিল মালিকদ্বয় পোয়াবারো হলেও রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
চাঁদপুর বন বিভাগের তথ্যানুযায়ী,জেলার সব উপজলোয় বর্তমানে ৪ শ’১৫ টি স’ মিলের মধ্যে ৩শ’ ৪৪ টিরই লাইসেন্স নেই। পুরো জেলায় ৭১টি স’মিলের লাইসেন্স রয়েছে। লাইসেন্স পেতে মালিকগণ নিজস্ব ভূমির খারিজা,উপজলো ভূমি অফিসের প্রত্যয়নপত্র,২ হাজার টাকার ট্রেজারি চালান,বন বভিাগরে অনুমোদন ও বিদ্যুৎ বিভাগের বৈধ সংযোগের অনুলিপিসহ আবদেন করার নিয়ম রয়েছে। তা’ ছাড়াও প্রতিবছর ৫ শ’ টাকা নবায়ন জমা বাধ্যতামূলক। অনুমোদন পাওয়ার পর প্রতিবছর নবায়ন ফি বাবত ৫ শ’ টাকা ও সরকারি ভ্যাট ১৫ % হারে পরিশোধ করতে হয়।
চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.তাজুল ইসলাম রোববার (১৮ আগস্ট) চাঁদপুর টাইমসকে বিষয়টি জানান।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, ২০১২ সালের ২০ মে এর করাত কল বিধিমালার প্রণীত হওয়ার আগ পর্যন্ত চাঁদপুরে ২ শ’রও অধিক স’মিলের লাইসেন্স ছিল। এর পর থেকে প্রয়োজনীয় শর্তপূরণে মিল মালিকগণ ব্যর্থ হওয়ার কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঔসব লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। মিল মালিকগণ এখন বাতিলকৃত লাইসেন্স বা নবায়ন না করেই মিল চালিয়ে যাচ্ছে।
বন বিভাগীয় অপর এক সূত্রে জানা যায়- দেশের প্রতিটি উপজেলায় গড়ে ২০টি করে স’মিল থাকলেই যথেষ্ঠ। সে ক্ষেত্রে চাঁদপুরে গড়ে স’মিল রয়েছে ৫১ টি।
বন ভিাগের দেয়া তথ্য মতে- ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত চাঁদপুর সদরে ৩৯ টি, হাজীগঞ্জে ৭০ টি , ফরিদগঞ্জে ৭৮টি, হাইমচরে ১৩ টি,শাহরাস্তিতে ৬১ টি, কচুয়ায় ৬১টি মতলব উত্তরে ৫৬টি এবং মতলব দক্ষিণে ৩৭ টি স’মিল রয়েছে। এর মধ্যে ২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ৭১ টি স’ মিল সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত লাইসেন্স নিয়ে চলছে। প্রতি বছর বছর নবায়ন করার নিয়ম রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন মিল মালিককে লাইসন্সে সর্ম্পকে প্রশ্ন করলে তিনি চাঁদপুর টাইমসকে বলনে,‘আমার মিল তো আর বিদ্যুৎ দিয়ে চলে না। তাই লাইসেন্স লাগে না। ফলে জেনারেটর দিয়ে মিল চালাই। লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে ‘করাত মিল স্থাপনের ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক।’
লাইসেন্স প্রাপ্ত চাঁদপুর মঠ খোলাস্থ একটি স’মিলের ম্যানেজার মো.সেলিম খান মিলের লাইসন্সে সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘নাগরিক হিসেবে প্রথমে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিৎ। তাই যিনি অবৈধভাবে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন তার কোনো সামাজিক মর্যাদা আছে বলে আমি মনে করি না।’
চাঁদপুরের বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতা মো.তাজুল ইসলাম এ বিষয়ে চাঁদপুর টাইমসকে বলেন,‘ অবধৈ মিলগুলোকে বার বার নোটিশ দিয়ে যাচ্ছি।এতে কোনো কোনো মিল মালিকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আবার অবধৈ মিলগুলোর বিরুদ্ধে প্রতি উপজেলায় নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের নেতৃত্বে সহসাই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, বনবিভাগীয় লাইসেন্স ব্যতীত কোনো স’ মিল বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে না। ডিজেল চালিত মিলগুলোও অবৈধ।
প্রতিবেদনে: আবদুল গনি
১৯ আগস্ট ২০১৯
ডিএইচ