জীব হিসেবে পৃথিবীতে আসার পর মৃত্যুর স্বাদ একদিন নিতেই হবে। সে দৃষ্টিকোনে সকল ধর্মবিশ্বাস ও দর্শনে বলা হয় মানুষ মরণশীল।
ধর্মীয় বাণী হলো মৃত্যু যে কোনো সময় কিংবা যে কোনো অবস্থাতেই জীবকে পাকড়াও করবে। পৃথিবীর একাধিক চিরন্তন সত্যে মৃত্যু একটি।
তবুও অনাকাঙ্ক্ষিত অপ্রত্যাশিত কিংবা দুর্ঘটনার মৃত্যু সাধরণত কেউই কামনা করে না। এমন মৃত্যুকে আমাদের পরিবার-স্বজনরাও মেনে নিতে পারে না।
দুর্ঘটনা কিংবা অপমৃত্যুর জন্যে কোনো না কোনোভাবে আমরা মানুষরাই দায়ী। কোনো না কোনো মানুষের উছিলাতেই প্রতিদিন এমন অপ্রত্যাশিত অপমৃত্যু ঘটেই চলেছে। আশঙ্কাজনক হারে নিদ্যদিন বেড়ে চলা এই অপমৃত্যুর মিছিল শুধুমাত্র রাজধানী কেন্দ্রীক তা কিন্তু নয়। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও প্রতিদিন এমন অনেক অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটে চলছে।
তেমনিভাবে গত দু’দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬, আত্মহত্যায় ৩ জন, অটোবাইক চার্জ দিতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ১ জন ও নদীতে লাশ পাওয়া গেছে দু’জনের। সবমিলিয়ে ঝরে গেলো তাজা ১১টি তার প্রাণ। এর মধ্যে মানুষের নিরাপত্তায় নিয়োজিত একজন পুলিশ সদস্যও রয়েছে। এ যেন অপমৃত্যুর দীর্ঘ মিছিল। অপরদিকে এসব অপমৃত্যুর প্রতিটি ঘটনাই হত্যা, আত্মহত্যা, দুর্ঘটানাজনিত কারণে ঘটেছে।
গত দুইদিনে জেলার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে দেখা যায় ২৮ এপ্রিল শুক্রবার রাতে হাইমচরে জেলে-পুলিশ সংর্ঘষে নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয় পুলিশ সদস্য মোশারফ হোসেন। ঘটনার ২দিন পর ২৮ এপ্রিল সকালে বরিশাল জেলার হিজড়া এলাকায় মেঘনা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
একই দিন সকালে শাহরাস্তি উপজেলাতে বেপোরোয়া গতীর বাস ও সিএনজি-অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জনের প্রাণহানী ঘটে। এই ঘটনায় সিএনজি অটোরিক্সায় থাকা মা এবং ৮বছরের শিশুপুত্রসজ সকল যাত্রী নিহত হয়। উপজেলার কাকৈরতলা বাজার সংলগ্ন চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহা সড়কের এই মর্মান্তিক দূর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, শাজাহান (৪৫) রনজিত (৫২), ফখরুল ইসলাম (৭৬), আবুল কালাম (৬২), জান্নাতুল ফেরদৌদ (২৮) ও তার শিশুসন্তান রুমান (৮)।
একই দিনে রাতে মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের উপাদী গ্রামে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মো.বাবুল মিজি নামের এক অটোরিকশা চালক মৃত্যুবরণ করেন। ন। বাবুল মিজি গ্রামের মৃত খলিল মিজির ছেলে। বাবুল মিজি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চালাতেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাত ১১টায় অটোরিকশা চার্জ করার জন্যে তিনি তাঁর বাড়ির পাশের আলী প্রধানের বাড়িতে যান। ঠিক সে সময় গাড়ির ব্যাটারি চার্জ করার জন্য বিদ্যুতের প্লাগ সকেটে ঢুকাতে গিয়ে আচমকা তাঁর আঙুল সকেটের ভেতর ডুকে যায়। এতে তাঁর সমস্ত শরীর বিদ্যুতায়িত হয় এবং ধাক্কা খেয়ে তিনি ঘরের মেঝেতে পড়ে যান। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া ওইদিন মতলব উপজেলার নারায়নপুর বাড়ির গাঁও গ্রামে প্রবাসী স্বামীর সাথে অভিমান করে ঝর্না বেগম নামে এক সন্তানের জননী বিষপানে অত্মহত্যা করে। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসাধিন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ২৯ এপ্রিল সোমবার চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর লগ্নীমারা চর এলাকায় মেঘনা নদীতে ভাসমান অবস্থায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। অজ্ঞাত এই বৃদ্ধার আনুমানিক বয়স ৬০ বছর। মুখে সাদা দাড়ি রয়েছে। তবে হতভাগা বৃদ্ধার পরিচয় না পাওয়া যায়নি। পুলিশ জানিয়েছে লাশের পরিচয় না পেলে আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে দাফন করা হবে।
একই দিন সোমবার দুপুরে হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডে মানিক দেবনাথ (৪৫) নামের দুই সন্তানের জনক আত্মহত্যা করেন। তিনি ওই ওয়ার্ডের মৃত হরিপদ দেবনাথের ছেলে। সোমবার দুপুরে সন্তানকে স্কুল থেকে বাসায় এনে ঘরের ভেতর স্বামী লাশ ফাঁস দেওয়া অবস্থায় ঝুলতে দেখেন তিনি।
সচেতন মহল মনে করছেন, আমাদের লোভ, ক্রোধ, আর নৈতিক অবক্ষয়ে এমন হারে অপমৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। যা একটি সুন্দর সমাজের জন্য খুবই দুঃখজনক সংবাদ। এর থেকে উত্তরনে রাষ্ট্রের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ের আরও সচেতন হতে হবে।
প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম
২৯ এপ্রিল ২০১৯