চাঁদপুরে ২০১৮-২০১৯ চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলার সকল উপজেলার নার্সারিতে দেশের ৪৪ জাতের ১ লাখ ৫০ হাজার ঔষধি,বনজ,সৌন্দর্যবর্ধন ও ফলজ বৃক্ষরোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বনজ ১১ প্রকার,ফলের ২১ প্রকার,ঔষধি ৪ প্রকার ও ১০ প্রকার রয়েছে সৌন্দর্যবর্ধন গাছ।
চাঁদপুর জেলার বন বিভাগের মঙ্গলবার (৯ জুলাই) এক তথ্যে জানা গেছে।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসন,বন ও কৃষি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এ মাসেই চাঁদপুরে বৃক্ষমেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে :‘শিক্ষায় বন পরিবেশ,আধুনিক বাংলাদেশ ।’
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এদিকে উম্মুক্তভাবে প্রতিটি ৫ টাকা করে বিক্রির উদ্দেশ্যে জেলা বনবিভাগে ১ লাখ ৫২ হাজার বনজ,ঔষধি ও ফলজ বৃক্ষ স্ব স্ব উপজেলা বনবিভাগে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এরমধ্যে চাঁদপুর সদরে ৭ হাজার, হাইমচরে ৫ হাজার ৫শ’, হাজীগঞ্জে ৬ হাজার, মতলব দক্ষিণে ৫ হাজার, ফরিদগঞ্জে ৫ হাজার, শাহারাস্তি ৫ হাজারঔষধি, বনজ ও ফলজ বৃক্ষরোপণ বিতরণ করা হবে। এবার বাগান সৃজন করা কোনোই কর্মসূচি নেই ।
চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.তাজুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান,‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বেশি করে আমাদের গাছ লাগানো উচিত। জীবন ধারণের জন্যে গাছের ভূমিকা অপরিসীম। গৃহনিমাণ,আসবাবপত্র তৈরি,দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি,ঝড়,জলোচ্ছ্বাস,বন্যা,মহামারি,নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে গাছের ভূমিকা অপরিহার্য। গাছের অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক বেশি ।’
১৯৯০ সাল থেকেই একটি শ্লোগান রয়েছে‘একটি গাছ কাটলে ৫ টি গাছ রোপণ করতে হবে’। ফলে মানুষের ভেতর গাছ রোপণের মানসিকতা অতীতের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।’
অপর একটি প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘অবৈধভাবে গড়ে উঠা স’মিলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে । এরইমধ্যে তাদেরকে লাইসেন্স গ্রহণে চিঠি দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো স’মিল মালিককে নোটিশ প্রদান করা হয়েছে । নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ামাত্র ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনোভাবেই বনবিভাগের অনুমতি ব্যতীত বিদ্যুৎবিভাগের বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার এখন আর নেই।’
এদিকে চাঁদপুর সামাজিক বনায়ন নার্সারী ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.তাজুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন,বন ও কৃষি বিভাগের যৌথ আয়োজনে সপ্তাহব্যাপি চাঁদপুর হাসান আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ ২০১৯’ এর ব্যাপারে এখনো চিঠি আসেনি বা পাই নি।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ, প্রকৃতি ও জীবজগতের পরম বন্ধু হলো বৃক্ষ। বৃক্ষ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ ও প্রাণী জগতের দৈনন্দিন জীবনে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান অক্সিজেন আসে এ বৃক্ষ থেকেই। বৃক্ষই জীবন, মানব জীবনের প্রতিটি অংশে বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য। বৃক্ষ অক্সিজেন দেয় কার্বন ড্রাই অক্সাইড গ্রহণ করে। বৃক্ষ খাদ্য দেয়, বৃক্ষ কাঠ দেয়, মাটির ক্ষয়রোধ করে, সর্বপরি বৃক্ষ পরিবেশকে সজীব রাখে। বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য।
তা ’ছাড়া খরা, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়,বন্যা,জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধে বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। বৃক্ষ ছাড়া পৃথিবীতে বসবাস করা সম্ভব নয়। মানুষের জীবন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের অবদান অনস্বীকার্য।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, খাদ্য, জ্বালানি, বাসস্থান, আধুনিক জীবনের জন্য কাঠভিত্তিক আসবাবপত্রের চাহিদা পূরণ, নতুন নতুন কলকারখানা স্থাপন ও সময়ের চাহিদা পূরণে কাঠের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দেশের বনাঞ্চল হ্রাস পাচ্ছে। এর ফলে দেশের পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
এক তথ্য মতে, ভারসাম্য রক্ষায় দেশের আয়তনরে ২৫% বনভূমি প্রয়োজন। দেশে আছে ৯ থকে ১২% । দেেশর্ বতমানে ২৫ লাখ ২০ হাজার হক্টরে বন এলাকা রয়ছে। এর মধ্যে মাত্র ৪৫ ভাগ এলাকায় গাছ আছ। পাহাড়ি বন ৬শ’ ৪৭ হাজার হক্টরে,শালবন ১শ’২০ হাজার হক্টরে ও সুন্দরবন ৬শ’১০ হাজার হক্টের।
বন থেকে প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ ঘনফুট বনজ দ্রব্যাদি পাওয়া যায়, যার মূল্য কয়ক শ’কোটি টাকা। এছাড়াও মধু, ফল,রসসহ বিভন্নি বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। তাই এসবদিক থেকে বৃক্ষের অর্থনৈতিক মূল্যও অনেক বেশি।
প্রতিবেদক : আবদুল গনি
৯ জুলাই ২০১৯