Home / ইসলাম / তিলাওয়াতে সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য
namaz

তিলাওয়াতে সিজদার গুরুত্ব ও তাৎপর্য

সিজদাহ নামাজের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। রুকু থেকে দাঁড়িয়ে এরপর মাটিতে কপাল ও নাক স্পর্শ করে সিজদা করতে হয়। একইসাথে হাটু ও হাতের পাতায় মাটিতে স্থাপন করতে হয়। সিজদা নামাজের অন্যতম আবশ্যকীয় অংশ। সিজদা কাবার দিকে মুখ করে দিতে হয়। সিজদার সময় সুবহানা রাব্বিয়াল আলা তাসবিহ পড়তে হয়।

হাদিসে এসেছে ‘কোন এক লোক সওবান (রা.)এর নিকট নিবেদন করলেন যে, আমাকে এমন একটা আমল বাতলে দিন যাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। সওবান (রা.) নীরব রইলেন; কিছু বললেন না। লোকটি আবার নিবেদন করলেন, তখনও তিনি চুপ করে রইলেন । এভাবে তৃতীয়বার যখন বললেন, তখন তিনি বললেনঃ আমি এ প্রশ্নটিই রাসূলুল্লাহর (স.) দরবারে করেছিলাম। তিনি আমাকে ওসিয়ত করেছিলেন যে, অধিক পরিমাণে সিজদা করতে থাক ।

কারণ, তোমরা যখন একটি সিজদা কর তখন তার ফলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মর্যাদা এক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেন । লোকটি বললেনঃ সওবানের (রা.) সাথে আলাপ করার পর আমি আবুদ্দারদার (রা.) সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছেও একই নিবেদন করলাম এবং তিনিও একই উত্তর দিলেন । [ মুসলিমঃ ৪৮৮]

অন্য এক হাদিসে- আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেনঃ বান্দা স্বীয় রবের সর্বাধিক নিকটবর্তী তখনই হয়, যখন সে বান্দা সিজদায় অবনত থাকে। কাজেই তোমরা সিজদারত অবস্থায় খুব বেশি করে দোআ-প্রার্থনা করবে । তাতে তা কবুল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। [মুসলিমঃ ৪৭৯, ৪৮২]

নবী করীম (স.) বলেছেন, ‘আমার যে কোন উম্মতকে কিয়ামতের দিন আমি চিনে নিতে পারব। সাহাবীগণ বললেন, এতসব সৃষ্টিকূলের মধ্যে আপনি তাদেরকে কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, তুমি যদি কোন আস্তাবলে প্রবেশ কর যেখানে নিছক কালো ঘোড়ার মধ্যে এমনসব ঘোড়াও থাকে যেগুলোর হাত, পা ও মুখ ধবধবে সাদা, তবে কি তুমি উভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ পারব। তিনি বললেন, ঐ দিন সিজদার কারণে আমার উম্মতের চেহারা সাদা ধবধবে হবে, আর ওযুর কারণে হাত-পা উজ্জ্বল সাদা হবে’।
(মুসনাদে আহমাদ)

সিজদার মাধ্যমে বান্দা তার রবেব নৈকট্য লাভ করে। সালাতের(নামাজ) মূল শব্দ সলইয়ুন। যার অর্থ নিকটবর্তী হওয়া। আর সিজদার মাধ্যমেই অনুগত বান্দাগণ তার যাবতীয় অংহকার, সম্মান, শীর্য-বীর্যের চূড়াকে অপনোদন করে মাথা অবনত করে রবের নিকটবর্তী হয়ে যায়। এমতাবস্থায় বান্দা ও রবের মাঝে কোন পর্দা থাকে না। এটি এক অসাধারণ তৃপ্তি। নামাজে নম্রতা ও ভয় অনুভব করে সিজদাহ্ দিন নিশ্চিত আপনি অভাবনীয় স্বর্গীয় সুখ অনুভব করবেন।

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠগ্রন্থ, মহাগ্রন্থ আল কুরআনে ১৪ টি সিজদা রয়েছে। উপরিউক্ত হাদিসগুলোতে সিজদার অসাধারণ গুরুত্ব বর্ণনা করা হয়েছে। এতদসত্ত্বেও কুরআন পাঠকদের দেখা যায় সিজদাহ্ দেওয়ার ভয়ে সিজদার আয়াত পাঠ করা থেকে বিরত থাকে। এমনকি ইমাম-মুসল্লি উভয়ই নামাজে সিজদার আয়াতকে এড়িয়ে চলেন। অথচ এর গুরুত্ব-তাৎপর্য-মাহাত্ম্য অত্যধিক। শুধু রমজান মাসে খতমে তারাবিতেই অতিরিক্ত এই সিজদাহর উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। গত শুক্রবার ফজর নামাজে ইমাম সিজদার আয়াত পাঠ করে সিজদায় চলে যায়। সত্যি অভাবনীয় অনভূত তৃপ্তিতে হৃদয়টা ভরে গেলো। অবশ্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তিলাওয়াতে সিজদাকে এড়িয়ে চলার ট্রেন্ড রয়েছে।

কুরআন তিলাওয়াতে সকল আয়াতেই সমান গুরত্বপূর্ণ ও সমান পুন্য রয়েছে। তাহলে সিজদার আয়াত পাঠ করলে বোনাস একটি সিজদার সওয়াব আমরা পেতে পারি।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আদম সন্তান যখন সিজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সিজদা করে, শয়তান তখন সরে গিয়ে কেঁদে কেঁদে বলে হায়! তাকে সিজদা করতে বলা হয়েছে, অতঃপর সে সিজদা করেছে, তার জন্য জান্নাত। আর আমাকে সিজদার আদেশ করা হয়েছে, অতঃপর আমি অবাধ্য হয়েছি। তাই আমার জন্য জাহান্নাম ধার্য হলো।(মুসলিম-১৩৩)

কুরআন মাজীদের সিজদার আয়াত তিলাওয়াত করলে অথবা শুনলে তকবীর দিয়ে একটি সিজদাহ করা এবং তকবীর দিয়ে মাথা তোলা মুস্তাহাব। এই সিজদার পর কোন তাশাহুদ বা সালাম নেই। তকবীরের ব্যাপারে মুসলিম বিন য়্যাসার, আবূ কিলাবাহ ও ইবনে সীরীন কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে। (তামামুল মিন্নাহ ২৬৯পৃঃ) এই সিজদাহ করার বড় ফযিলত ও মাহাত্ম্য রয়েছে। তিলাওয়াতের সিজদার জন্য ওযু শর্ত নয়। লজ্জাস্থান ঢাকা থাকলে কিবলামুখে এই সিজদাহ করা যায়।

যেহেতু ওযু শর্ত হওয়ার ব্যাপারে কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না। (নাইলুল আউত্বার, আল-মুমতে’ ৪/১২৬, ফিকহুস সুন্নাহ আরবি ১/১৯৬) তিলাওয়াতের সিজদায় একাধিকবার পঠনীয় সুন্নতী দু’আ হল, سَجَدَ وَجْهِىَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِهِ অর্থাৎ, আমার মুখমণ্ডল তাঁর জন্য সিজদাবনত হল যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় শক্তি ও ক্ষমতায় তার চক্ষু ও কর্ণকে উদগত করেছেন। (আহমদ ৬/৩০, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী)।

লেখকঃ মু. মহিউদ্দিন রাব্বানি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়