সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে দারুণ জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে নিজের সেরাটা তাহলে এই ম্যাচের জন্যই জমিয়ে রেখেছিলেন আফগানিস্তান অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েব?
আর বোলার সাকিবও তাই! বিশ্বকাপে নিজের সেরা বোলিংয়ের চমক দেখালেন সাকিব আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ম্যাচে। শিকার করলেন ৪ উইকেট। ম্যাচে নিজের শুরুর ৭ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় তুলে নিলেন ৪ উইকেট। ছাড়িয়ে গেলেন বিশ্বকাপে নিজের আগের সেরা বোলিংকে (৪/৫৫, প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, ২০১৫)।
একটা পরিসংখ্যান জানিয়ে দেই। চলতি বিশ্বকাপে সাকিবের রান এখন পর্যন্ত ৪৭৬। হ্যাঁ, বিশ্বকাপে যারা খেলছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান তারই। দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি হাফসেঞ্চুরি। সবচেয়ে কম রানের ইনিংসে তার রান ৪১! উইকেট শিকার সংখ্যাও দাড়িয়েছে ৯টি। আগের পাঁচ ম্যাচে পাঁচটি। ষষ্ঠ ম্যাচে আরো চারটি!
যে দুর্দান্ত কায়দায় বোলিং করছিলেন সাকিব তাতে মনে হচ্ছিলো এই ম্যাচে বাকি তিন ওভারে তার উইকেটের সংখ্যা আরো বাড়বে নিশ্চিত!
বাংলাদেশের ২৬২ রানের ইনিংস তাড়া করতে নেমে ২৫ ওভার শেষে আফগানিস্তানের স্কোর দাড়ায় ৯৮ রানে ২ উইকেট। ম্যাচ জিততে তখনো আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিলো বাকি ২৫ ওভারে ১৬৫ রান। যেভাবে আফগানিস্তানের ইনিংস সামনে বাড়ছিলো তাতে তাদের জয়ের জন্য বাকি রানকে খুব দুরের কোনো পথ মনে হচ্ছিলো না!
কিন্তু প্রথম স্পেলের মতো নিজের দ্বিতীয় স্পেলে এসেও সেই সাকিবও আরেকবার ম্যাচে বাংলাদেশের অস্বস্তি দুর করলেন। আফগানদের ওপেনিং জুটি ভেঙ্গেছিলেন সাকিব নিজের প্রথম ওভারেই। ফেরান আফগানিস্তান ওপেনার রহমত শাহকে। এরপর নিজের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারের প্রথম তিন বলেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে এই ম্যাচের মোড় আরেকবার ঘুরিয়ে দিলেন সাকিব।
ম্যাচে তখন অ্যাডভান্টেজ বাংলাদেশ! ৩৪ ওভারে আফগানিস্তান ৫ উইকেট হারিয়ে তোলে ১২৫ রান। জয়ের জন্য ২৬৩ রানের টার্গেট তখন অনেক কঠিন এবং দুরের পথ মনে হতে শুরু করলো আরেকবার। বাংলাদেশকে এভাবে ম্যাচে ফিরিয়ে আনার পুরো কৃতিত্ব বোলার সাকিবের। তার শুরুর পাঁচ ওভারের বোলিংয়ের বিশ্লেষণ এমন; ৭-১-১০-৪! যার মধ্যে ৩৩ টি আবার ডটবল।
অর্থাৎ বোলিংয়ে সাকিবের শুরুর ৪২ বলের ৩৩ টি থেকে আফগানিস্তান কোনো রানই নিতে পারেনি!
প্রথম পাওয়ার প্লে সমস্যা ছাড়াই কাটিয়ে দেয় আফগানরা। তোলে বিনা উইকেটে ৪৮ রান।
চলতি বিশ্বকাপে প্রথম ১০ ওভারে এটাই আফগানিস্তানের সেরা সংগ্রহ! তাদের অধিনায়ক গুলবাদিন নায়েবের এই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ স্কোর ছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ৩৭ রানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে ছাড়িয়ে গেলেন নিজের আগের সেই স্কোর। ৪৭ রানে তাকেও ফেরালেন সাকিবই।
মাশরাফি-মুস্তাফিজ নতুন বলে শুরুটা করেন। কোনো সাফল্য মিললো না। সাইফুদ্দিন শুরুর ৩ ওভারে মাত্র ৮ রান দিলেন। প্রথম পাওয়ার প্লে’র দশ ওভারের পুরোটাই করলেন তিন পেসাররা।
সাকিবকে আক্রমণে নিয়ে আসেন মাশরাফি, আফগানদের ইনিংসের ১১ ওভারের সময়। নিজের প্রথম ওভারেই সাকিব জানিয়ে দিলেন-শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, বোলিংয়ে তিনি দলের সবচেয়ে বড় আস্থার প্রতীক। এই ম্যাচে ব্যাটিংয়েও ৫১ রান করেন সাকিব। চলতি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৪৭৬ রানের মালিকও সেই তিনি।
বার্তা কক্ষ
২৪ জুন ২০১৯