দেশে শামুক চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা খাদ্য হিসেবে শামুক গ্রহণে অভ্যস্ত না থাকলেও অপ্রচলিত এ জলজ প্রাণিটি এদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কাছে এটি খুব সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। এছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চিংড়িঘেরে গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে এ শামুকের মাংসের কদরও রয়েছে বেশ।
এসব বিষয় মাথায় রেখে অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় অপ্রচলিত এ জলজ প্রাণীর বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শামুক উৎপাদনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মৎস্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, দেশে শামুকের ৪৫০টি প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য দু ‘টি প্রজাতি হলো আপেল শামুক ও পন্ড স্নেইল। সাধারণত শামুকের মাংসল অংশ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপজাতীয় জনগোষ্ঠী খাদ্য হিসেবে শামুক আহার করে থাকে। এছাড়া শামুকের ব্যাপক ব্যবহার হয় বাগদা বা গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে চিংড়ি ঘেরগুলোতে দিনে গড়ে ৬৫ দশমিক ৫ কেজি হেক্টর প্রতি শামুকের মাংস ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উপজাতি জনগোষ্ঠির একটি অংশ শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীতে ক্ষুদ্র পরিসরে এটি চাষ শুরু করেছে। মানুষ ও মাছের খাদ্য হিসেবে শামুকের চাহিদা থাকায় বাংলাদেশে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। শামুক চাষে দেশের অনগ্রসর উপজাতি জনগোষ্ঠীর স্বল্প খরচে আমিষ চাহিদা পূরণ হতে পারে। পুকুরে মাছের সাথে শামুকের পরিকল্পিত সমন্বিত চাষ বা এককভাবে শামুকের চাষ করা যেতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের অর্থায়নে বাংলাদেশে ঝিনুক ও শামুক সংরক্ষণ, পোনা উৎপাদন এবং চাষ প্রকল্প শীর্ষক একটি প্রকল্প নিয়েছে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট। এ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, কক্সবাজার, চাঁদপুর, বগুড়া, যশোর ও বাগেরহাট এলাকাকে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে।
প্রকল্পটির মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ঝিনুক ও শামুকের পোনা উৎপাদন এবং চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশে ঝিনুক ও শামুকের পপুলেশন ডিনামিক্সের ওপর বেইজ-লাইন তৈরি, ঝিনুক ও শামুক সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রযুক্তিভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগও রয়েছে প্রকল্পটিতে।
এছাড়াও জানা গেছে, বাংলাদেশের শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় বসবাসরত জনগোষ্ঠী ক্ষুদ্র পরিসরে শামুকের চাষ করছে। পাশাপাশি শামুক চাষে আলাদা খাবার দেয়ার দরকার হয় না। শামুক পুকুরে বায়োফিল্টার হিসেবে কাজ করে বলে পানির গুণাগুণ ভালো থাকে।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘ দেশের জলাশয়গুলোয় মাছ ও চিংড়ি ছাড়াও আরো অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ জলজ সম্পদ রয়েছে । যার মধ্যে অন্যতম হলো শামুক। অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় অপ্রচলিত এসব জলজ প্রাণীর বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শামুক উৎপাদনে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে তাদের জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘এদেশের জলবায়ু ও পরিবেশ শামুকের প্রজনন ও প্রতিপালনের জ্য অত্যন্ত উপযোগী। এটি অপ্রচলিত কিন্তু অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ন জলজসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে উপজাতিদের আমিষ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রনফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
বার্তা কক্ষ
২৮ মার্চ , ২০১৯