আগামী ২০২১ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের হাতে সম্পূর্ণ নতুন পাঠ্যক্রমের আলোকে প্রস্তুত নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যমান পাঠ্যক্রমের বই পর্যালোচনা করছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। এর পর ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির পাঠ্যবই পর্যালোচনা হবে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। কারিকুলাম তৈরির প্রক্রিয়াটি খুবই সময়সাপেক্ষ বিষয়। না গুছাতে পারলে পরের বছর দেওয়া হবে। ২০২১ সালে মাধ্যমিকেও নতুন পাঠ্যবই দেওয়া হবে। বিদ্যমান কারিকুলামের বইগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের সময়ে গত দশ বছরে একবার কারিকুলাম ও অন্তত ৬ বার পাঠ্যবই পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতিও অসংখ্যবার পাল্টানো হয়েছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে অনবরত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। নতুন পাঠ্যক্রমের আলোকে ২০১৩ সালে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়। তার পর ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালেও এসব বই পরিমার্জন-পরিবর্তন হয়েছে।
শিক্ষকদের তথ্য মতে, শুধু কারিকুলাম বা পাঠ্যবই নয় শিক্ষার অন্যান্য দিকেও ঘন ঘন কাটাছেঁড়া চলছে। গত দেড় দশকে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতি অন্তত তিনবার পরিবর্তন করা হয়েছে, যার সমালোচনাও করছেন শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এর মধ্যে রয়েছে। গ্রেডিং পদ্ধতি, স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন ও ধারাবাহিক মূল্যায়ন। ২০০৭ সালে স্কুলভিত্তিক মূল্যায়ন চালু হলেও সমালোচনার মুখে এক বছর পরই তা স্থগিত হয়। এখন ধারাবাহিক মূল্যায়নের নামে এ পদ্ধতি আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। স্বাস্থ্য ও শারীরিক শিক্ষা, চারু ও কারুকলা, ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ে এটি চালু রয়েছে। ১৯৯২ সালে এসএসসিতে এমসিকিউ পদ্ধতি চালু করা হয়। এতে প্রতি বিষয়ে ৫০০টি এমসিকিউ প্রশ্ন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এমসিকিউ ও রচনামূলক মিলিয়ে শুরুতে ৩৩ নম্বর পেলে পাস ধরা হতো। ফলে একশ্রেণির শিক্ষার্থী রচনামূলক অংশের লেখাপড়া বাদ দিয়ে শুধু ৫০০টি এমসিকিউ মুখস্থ করে পাস করে যেত। এতে পাসের হার রাতারাতি বাড়লেও শিক্ষার মানে ধস নামে। এ অবস্থায় ১৯৯৬ সালে প্রশ্নব্যাংক তুলে দিয়ে পুরো বই থেকে এমসিকিউ করা হয়। এতেও রক্ষা হয়নি। এমসিকিউর গাইড বই থেকে প্রশ্ন করা বা প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার হলে বলে দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। গত কয়েক বছর এমসিকিউ প্রশ্নই বেশি ফাঁস হয়। ফলে এমসিকিউর নম্বর কমিয়ে ৪০ করা হয়। পরে আরও কমিয়ে এসএসসি থেকে এমসিকিউ প্রশ্ন ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। তাতেও লাভ না হওয়ায় এমসিকিউ তুলে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা চলছে।
এ ছাড়া, শিক্ষা পদ্ধতিতে সবচেয়ে ওলট-পালট করা পরিবর্তনের নাম ‘সৃজনশীল শিক্ষা’। সনাতন পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের প্রতি অধ্যায় শেষে প্রশ্ন থাকত। শিক্ষার্থীরা পাঠ থেকে সেই প্রশ্নের উত্তর মুখস্থ করে পরীক্ষায় লিখত। মুখস্থনির্ভর লেখাপড়া থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে আনা, কোচিং-প্রাইভেট ও নোট-গাইড বন্ধ করতে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলেও বাস্তবে এসবের মাত্রা আরও বেড়েছে। এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, সারাবিশ্বে প্রতি ৫-৭ বছর পর পর কারিকুলাম পরিবর্তন করা হয়। ২০১২ সালে যখন বর্তমান কারিকুলাম প্রবর্তন করা হয়, তখন ২০১৭ সালে এটি পর্যালোচনার কথা ছিল। সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মানবসম্পদ উন্নয়ন, দক্ষতা তৈরি, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট চাহিদা মোতাবেক সুশিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জরুরি। এ জন্য পাঠ্যক্রম (কারিকুলাম) সময়ের চাহিদায় ভিন্ন ভিন্ন হয়। যে কারণে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন-পরিমার্জন হয়ে আসছে বিভিন্ন সময়ে।
বার্তাকক্ষ
৩ মার্চ ২০১৯