চাঁদপুর দেশের অন্যতম কৃষিভিত্তিক নদীবিধৌত অঞ্চল। ২০১৮-২০১৯ আসন্ন রবি মৌসুমে বিভিন্ন ফসলের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ধান,পাট, মরিচ, আখ, গম, আলু, পান, সুপারি, বিভিন্ন প্রকারের ডাল, হলুদ পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি ফসল অনাদিকাল থেকেই চাঁদপুরে চাষাবাদ ও উৎপন্ন আসছে।
চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলার চলতি রবি মৌসুমের বোরো ও অন্যান্য ফসলের চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যেই চাষীরা তাদের জমি চাষাবাদের জন্য প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও গত দিনের গুড়িঁ গুড়িঁ বৃষ্টিতে মাঠের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে গেছে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক পাওয়া তথ্যে মতে, চলতি অর্থ বছরে ৬১ হাজার ৫ শ’ ৬০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ এবং ২ লাখ ৪৬ হাজার ২ শ’ ৭৪ মে.টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।
এর মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে ৩ হাজার ৯ শ ৩৭ হেক্টর, ৬ হাজার ২শ ৬২ হেক্টর, হাইব্রীড এবং উন্নত ফলনশীল ৬১ হাজার ৭ শ’ ৬২ হেক্টর জমি এ বছর চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬ শ’ ৫ মে.টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে।
অন্যান্য রবি ফসলের মধ্যে ১০ হাজার ৬ শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র হচ্ছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৪ শ’ ৯০ মে.টন । গমের চাষাবাদ ৯৮ হেক্টর ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ শ’২৩ হেক্টর। শাকসবজি ৫ হাজার ২ শ’ ১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৮ হাজার ৬ শ’ ২৯ মে.টন।
ভূট্টা ৬ হাজার ১ শ’ ৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং ৫৫ হাজার ৬ শ’ ৪৪ মে.টন উৎপাদন, ২ হাজার ১শ’ ১৬ হেক্টর জমিতে সয়াবিন চাষাবাদ ও এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ হাজার ৭ শ’ ৬৬ মে.টন।
পেঁয়াজ ১ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ এবং ১১ হাজার ২ শ’২২ মে.টন উৎপাদন, ২ হাজার ২ শ’ ১৫ হেক্টর জমিতে মরিচ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩ হাজার ৬ শ’ ৩৩ মে.টন। সরিষা চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৩ হাজার ৫ শ’ ৮৫ হেক্টর ও ৪ হাজার ৬ শ’২৫ মে.টন উৎপাদন। আখ চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৬ শ’ ৭১ হেক্টর ও ৩২ হাজার ৩ শ’ ৭৬ মে.টন উৎপাদন। রসুন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৫ শ’ ৮০ হেক্টর ও ৪ হাজার ৩ শ’৫০ মে.টন উৎপাদন।
অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক গীতা রাণী মজুমদার এক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘ জমি আছে ও নিজে চাষাবাদ করেন তাদেরকেই ব্যাংক কৃষিঋণ দিয়ে থাকে। জমির মালিকের প্রত্যায়নপ্রত্র নিয়ে আসলেও সে ঋণ পাবে।’
এছাড়াও রয়েছে রসুন,ধনিয়া,আদা,খিরা,বাঙ্গি,খেসারী,মুগ,তরমুজ ও আখ চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। কৃষকরা বর্তমানে এসব চাষাবাদে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বলে জানা যায়।
কৃষি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান,‘চরাঞ্চলে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার বা পরামর্শ দিয়ে তাদের উৎসাহিত করা যেতে পারে। চর উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করলে চরবাসীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হবে এবং খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’
প্রসঙ্গত, চাঁদপুর কৃষিভিত্তিক নদীবিধৌত অঞ্চল হওয়ায় রবি ফসল ব্যাপক চাষাবাদ ও উৎপন্ন হচ্ছে।্ ওর ওপর ভিত্তি করেই এক সময় ৩টি পাটকল গড়ে উঠেছিলো। ব্যাপক নদীভাঙ্গনের ফলেও মেঘনানদীর ডানতীরে জেগে উঠা চরাঞ্চল গুলোতে ব্যাপক সোয়াবিন,মসুরি,মরিচ, ধান ও পাট চাষাবাদ হয়ে আসছে। পাশাপাশি গবাদি পশুপ্রতিপালন ও নানা শাক-সবজি উৎপন্ন হচ্ছে।
১৯৬৪ সালে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও ১৯৭৮ সালে মতলবের ২২ টি ইউনিয়ন নিয়ে মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় চাঁদপুর আজোও কৃষি প্রধান জেলা হিসেবে পরিচিতি অব্যাহত রয়েছে ।
আবদুল গনি
৭ নভেম্বর ২০১৮