বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামী ও শহীদ ক্ষুদিরাম বসু মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ৬ বছর বয়সেই মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী এবং পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু মারা যান। গ্রামের বিদ্যালয়ের পর তমলুকের হ্যামিল্টন স্কুল ও মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তিনি শিক্ষালাভ করেন।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও স্বদেশি আন্দোলন ক্ষুদিরামের মতো স্কুলের ছাত্রদেরও প্রভাবিত করে এবং পরিণামে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। সেখানে শরীরচর্চা ও রাজনৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি পিস্তল চালনাতেও তার হাতেখড়ি হয়।
বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণ বোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে ক্ষুদিরাম অংশগ্রহণ করেন। ১৯০৬ সালের মার্চে মেদিনীপুরের কৃষি ও শিল্পমেলায় রাজদ্রোহমূলক ইশতেহার বণ্টনকালে ক্ষুদিরাম প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরের মাসে আরেক দুঃসাহসী অভিযানে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও বয়স কম হওয়ায় আদালত তাকে মুক্তি দেয়।
১৯০৭ সালের শুরুতে হাটগাছায় ডাকের থলি লুট করা এবং ডিসেম্বরে নারায়ণগড়ে বঙ্গের ছোটলাটের রেলগাড়িতে বোমা হামলায় তিনি অংশ নেন। স্বদেশি আন্দোলনে সরকারের দমননীতির কারণে কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড বাঙালিদের ঘৃণার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন।
যুগান্তর বিপ্লবী দল ১৯০৮ সালে তাকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের ওপর এ দায়িত্ব পড়ে। ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী ৩০ এপ্রিল মুজাফ্ফরপুরের ইউরোপীয় ক্লাবে কিংসফোর্ডকে আক্রমণের জন্য ওঁৎ পেতে থাকেন।
কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য একটি গাড়িতে ভুলবশত বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তার মেয়ে মারা যান। ক্ষুদিরাম ওয়ানি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সমস্ত দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়ে নেন। অপর কোনো সহযোগীর পরিচয় বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি।
আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে। মুজফ্ফরপুর কারাগারে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন ক্ষুদিরাম বসু।
শেয়ার করুন