নাকে টিউমার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় অনেক চা শ্রমিক পরিবার। এছাড়া নতুন করে টিউমার হওয়ার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন চা শ্রমিকের পরিবারগুলোর।
কী কারণে নাকের মধ্যে এসব টিউমারের জন্ম হচ্ছে তা যেমন জানেন না তেমনি আর্থিক দুরবস্থার কারণে সঠিক চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না যুগ যুগ ধরে অবহেলিতে এসব চা শ্রমিকদের।
জানা যায়, চুনারুঘাটের চা বাগানে বসবাসরত জনগোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে অবহেলিত হয়ে আসছেন। স্বল্প মজুরিতে কাজ করা চা শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা পুরোয়। এর মধ্যে ওই জনগোষ্ঠীর অনেকেরই নাকের মধ্যে একপ্রকার টিউমার দেখা যায়। অথচ কি কারণে তাদের নাকের মধ্যে এ টিউমার হয়ে থাকে এ বিষয়ে কিছুই জানেন না আক্রান্ত পরিবারগুলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন- চা পাতায় এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা পাতা সংগ্রহের সময় বিভিন্নভাবে গর্ভবতী নারীদের শরীরে প্রবেশ করে। আর এর ফলে ওই নারী যে সন্তান প্রসব করেন তার নাকে এ টিউমার দেখা দিয়ে থাকে।
চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে দেখা যায় শিশু কিশোর থেকে শুরু করে মধ্য বয়স্কদের নাকের মধ্যে এ টিউমার। টিউমার নিয়ে তারা যেমন কষ্টে আছেন তেমনি আছেন দুশ্চিন্তায়ও। টাকার অভাবে ওই চা শ্রমিকগুলো তাদের বা তাদের ছেলে মেয়েদের টিউমারের সঠিক চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অনেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়ে হালছেড়ে বসে আছেন। টাকার অভাবে তারা পারছেন না অপারেশন করাতে।
অপরদিকে, কেন বা কী কারণে এসব দরিদ্র চা শ্রমিকদের মধ্যে এমন রোগের আবির্ভাব দেখা দিয়েছে তা বুঝতে পারছেন না কেউই।
চান্দপুর চা বাগানের বাসিন্দা অরুন পাল জানান, ‘ছোট বেলায় নাকের মধ্যে ছোট একটি গুটার মত দেখা যেত। এখন দিন দিন এটি বড় হয়ে টিউমারে রূপ নিয়েছে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক ঔষধও খেয়েছি। কিন্তু কাজ হয়নি। এটি দিন দিন আরো বড় হতে শুরু করে। পরে ডাক্তার অপারেশন করতে বললেন। কিন্তু টাকার অভাবে আর অপারেশন করাতে পারিনি।’
টিউমার আক্রান্ত এক যুবকের মা আরতি কানু জানান, ‘আমার ছেলের জন্ম থেকে এটি ছিল না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি বড় হতে থাকে। ডাক্তার যে ঔষধ দিয়েছেন তাতে কাজ হয়নি। আর টাকার অভাবে অপারেশন করাতে পারিনি।’
টিউমার আক্রান্ত ধিরেন্দ্র পাত্র বলেন, ‘এটি নিয়ে চলাফেরা করতে অসুবিধা হয়। তাছাড়া আমরা গরিব মানুষ কাজ না করলে খাবার জুটে না। কিন্তু এটি নিয়ে কাজ করতে অসুবিধা হয়।’
তিনি বলেন, ‘এটিতে মাঝে মাঝে প্রচণ্ড ব্যথা করে। তাছাড়া মানুষ আমাকে দেখলে হাসাহাসি করে। তখন আমার মরে যেতে ইচ্ছে করে।’
চান্দপুর বাগারের বাসিন্দা ও স্থানীয় স্কুলের ৩য় শ্রেণির এক ছাত্রীর নাকে দেখা যায় বড় একটি টিউমার। এই ছোট শিশুটির পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়- খুবই ছোট একটি টিউমার থেকে এখন এটি মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
পরিবারের লোকজন জানায়, তারা অনেক চিকিৎসা করিয়েছেন, কিন্তু আর চিকিৎসা চালাতে পারছেন না। তাই এখন এই মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় তার পরিবার।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী বিভাগীয় অধ্যাপক নিউরো স্পেশালিষ্ট ডা. আনিসুল ইসলাম জানান, ‘চা পাতায় এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া থাকে। যা পাতা সংগ্রহের সময় বিভিন্নভাবে গর্ভবতী নারীদের দেহে প্রবেশ করে। এর ফলে ওই নারী যে সন্তান প্রসব করেন তার নাকে এ টিউমার দেখা যায়।’
তিনি বলেন- ‘এটির সঠিক চিকিৎসা হলো অপারেশন করা। অপারেশন করলে তারা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে।’
দরিদ্র এ জনগোষ্ঠীর নিজ উদ্যোগে অপারেশন করানো সম্ভব নয় বলে দাবি চা শ্রমিক নেতাদের। তাদের দাবি এসব লোকজনকে টিউমার থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। (বার্তা২৪)
বার্তা কক্ষ
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯