Home / বিশেষ সংবাদ / নিম্ন আদালতে খালাস আবার দণ্ড : অবশেষে ভালোবাসার জয় মিললো হাইকোর্টে
Sushmita-Tusher

নিম্ন আদালতে খালাস আবার দণ্ড : অবশেষে ভালোবাসার জয় মিললো হাইকোর্টে

ছেলে হরিজন সম্প্রদায় হওয়ার কারণে ভালোবাসার বিয়ে মেনে নেয়নি মেয়ের পরিবার। উল্টো শ্বাশুড়ির করা স্ত্রী অপহরণের মামলায় জেল খাটছেন স্বামী। এমন ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুরে। তিন মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে স্বামী তুষারের মুক্তির জন্য উচ্চ আদালত ঘুরছেন স্ত্রী সুস্মিতা।

ব্রাহ্মণ কণ্যা সুস্মিতা দেবনাথ ভালোবেসে বিয়ে করেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের তুষার দাশকে। আর তাতেই জাত গেছে তার পরিবারের!

পরিবারের অমতে বিয়ে করায় ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা করে ২০১৭ সালে। আদালত থেকে জামিন নিয়ে সুখেই কাটছিলো সুস্মিতা আর তুষারের সংসার। ফুটফুটে মেয়েটা তাতে যোগ করে বাড়তি আনন্দ। কিন্তু মন গলেনি মেয়ের পরিবারের। ধর্ষণের মামলায় খালাস পেলেও অপহরণের মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ড হয় তুষারের।

সুস্মিতা নিজের ইচ্ছায় বিয়ের কথা জানালেও আমলে নেননি আদালত। এখন বাচ্চা মেয়েকে কোলে করে ঘুরছেন উচ্চ আদালতের দ্বারে দ্বারে।

এদিকে ভালোবেসে ব্রাহ্মণ বর্ণের মেয়ে সুস্মিতা দেবনাথ অদিতিকে বিয়ে করার পর মিথ্যা মামলায় ১৪ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হরিজন বর্ণের যুবক তুষার দাসকে জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া নিম্ন আদালতের দেওয়া অর্থদণ্ড থেকেও তুষার দাসকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। এতে করে তুষার দাসের মুক্তিতে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ করেছেন আদালত।

আসামি তুষার দাসের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসাইন।

এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শিশির মুনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘তুষার ও সুস্মিতা ভালোবেসে বিয়ে করেন দুই বছর আগে। তিন মাস আগে তাঁদের কোলজুড়ে এসেছে ফুটফুটে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু তুষার দাস হরিজন (নিম্ন) বর্ণের হওয়ার কারণে শুরুতেই এ বিয়ে মেনে নিতে পারেননি সুস্মিতার মা-বাবা।’

অ্যাডভোকেট শিশির মুনির আরো জানান, মেয়ে নাবালিকা—এ অভিযোগ তুলে সুস্মিতার বাবা ‍তুষারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন।

মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভিকটিম সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণ করে নিয়ে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর অপহরণের অভিযোগে সুস্মিতার বাবা বাদী হয়ে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।

২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ওই মামলার রায় হয়। মামলায় অপহরণের দায়ে তুষারকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন শরীয়তপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জেলা জজ আবদুস ছালাম খান। সুস্মিতা দেবনাথ স্বেচ্ছায় তুষার দাসকে বিয়ে করার কথা বললেও তাঁর কথা আমলে নেননি নিম্ন আদালত।

অ্যাডভোকেট শিশির মুনির নিম্ন আদালতের রায়ের বরাত দিয়ে জানান, আদালত রায়ে বলেন, সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসামি তুষার দাস ওরফে রাজ ভিকটিম সুস্মিতা ওরফে অদিতিকে অপহরণ করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আসামি শিশু সুস্মিতাকে বিয়ে করবেন—এই আশ্বাস দিয়ে এ অপহরণ করেছেন, যা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ কারণে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

তবে আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাঁকে ওই দায় থেকে খালাস দেন আদালত।

যেদিন রায় হয়, সেদিনই (২৩ জুলাই) আদালতে আত্মসমর্পণ করেন তুষার। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনি আপিল করেন। এখন স্বামীকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড থেকে মুক্ত করতে উচ্চ আদালতে এসেছেন স্ত্রী সুস্মিতা দেবনাথ।

উচ্চ আদালতে সুস্মিতা দেবনাথ বলেন, ‘আমার একটাই অপরাধ, আমি ব্রাহ্মণ বর্ণের মেয়ে হয়ে হরিজন বর্ণের ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছি। আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের জীবন আজ বিপন্ন। ৮৮ দিন বয়সের শিশুসন্তান নিয়ে আমাকে ফেরারি হয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। মিথ্যা মামলা থেকে আমার স্বামীর মুক্তি চাই।’

পরে শুনানিতে আদালত বলেন, আমাদের সমাজে এ রকম অসম বিয়ে হলে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু আইন তো ভিন্ন। একদিকে আইন অন্যদিকে বাস্তবতা। আমাদের সমাজে উঁচু-নিচু জাতের একটা সমস্যা রয়েছে। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। স্বামী দলিত সম্প্রদায়ের হলে হলে মেয়ের বাবা যদি মেনে নেয় তবে তার পরিবারকে সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ বাস্তবতা ভাবতে হবে।

এদিকে একই মামলায় ১১ মাস আগে অব্যহতি দেয়ার পর আবার ১৪ বছর কারাদণ্ড দেয়ায় আদালতে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবীরা।

আর এক দিনের মধ্যে একটি মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন করায় হাইকোর্ট বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আদালত বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট মামলার ব্যাপারে বিচারক সাহেবের এত উৎসাহ কেন? তার কী স্বার্থ? গত ৬ মাসে তার আদালতে পরিসংখ্যা কী তা দেখা দরকার বাক্যটিও যোগ করেন আদালত।

বার্তা কক্ষ, ২ আগস্ট ২০১৯